পলিথিন মোড়ানো ভাঙা ঝুপড়িতে মানবেতর জীবন

বাগেরহাটের পাঁচ বছরেও সরকারী সহায়তা মেলেনি বৃদ্ধ দম্পতির

প্রতিনিধি
বাগেরহাট
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

বাগেরহাটের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কোড়ামারা গ্রামের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে একটি ভাঙাচোরা ঝুপড়ি ঘর। ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো তার ছাউনি, চারদিকে হোগলা ও নারকেল পাতার কাঁচা বেড়া—যার অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। ঘরের অর্ধেক অংশ হেলে আছে এমনভাবে, যেন সামান্য বাতাসেই পুরোটা ভেঙে পড়বে। এই নড়বড়ে ঝুপড়িতেই বাস করেন গোকুল সরদার (৭৮) ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী রানী সরদার (৬০)।

দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতায় একে অপর ছাড়া তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। পলিথিনে আচ্ছাদিত এই ঘরই তাদের জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল—যেখানে বৃষ্টি, ঠান্ডা হাওয়া, ঝড়ো বাতাস অবিরাম ঢোকে, কিন্তু আশার আলো কখনো ঢোকে না।

ছবি: প্রতিনিধি
ছবি: প্রতিনিধি

গোকুল–লক্ষ্মী দম্পতির জীবনে সংগ্রাম ছাড়া কোনো স্মৃতি নেই। বয়সজনিত দুর্বলতায় কাজ করা কষ্টকর হলেও ক্ষুধা তাদের পিছু ছাড়ে না। কখনো দিনমজুরি, কখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ—যা পান তাই দিয়ে কোনোমতে দু’মুঠো ভাত জোটে। অনেক রাতই কাটে না খেয়ে। তবু কখনো কারও কাছে হাত পাতেননি, নিজের শ্রমে জীবনটাকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এখন বয়সের ভারে কাজের শক্তিও নেই, আর তাদের একমাত্র আশ্রয়টিও ভেঙে পড়ার মুখে।

রাতে ঝড়ো বাতাসে পলিথিন দুলতে থাকে, বৃষ্টি বা শিশিরে পুরো ঘর ভিজে যায়—বিছানা, কাপড়, এমনকি শরীরও। সকালের রোদে কাপড় শুকোলেও তাদের জীবনের চিরস্থায়ী কষ্ট শুকাতে পারে না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে লক্ষ্মী রানী বলেন,

“আমাদের মতো অসহায় আর কেউ নেই। বর্ষাকালে সারারাত ভিজে কাটিয়েছি। পলিথিন মুড়ি দিয়ে খেয়ে–না–খেয়ে দিন গেছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বহুবার গেছি, কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছু পাইনি। এখন শীতে ঠান্ডা বাতাসে ঘর কাঁপে। আমরা নিজেরাই ঠিকমতো খেতে পারি না, ঘর মেরামত করব কী দিয়ে?”
ছবি: প্রতিনিধি
ছবি: প্রতিনিধি

গোকুল সরদার বলেন,

“সারা জীবন কাজ করে খেয়েছি। কখনো কারও কাছে হাত পাতিনি। দিনমজুরি করে যা পাই তাই দিয়ে চলে যাই, না পেলে না খেয়ে থাকি। বিগত সরকারের সময় ঘর দিচ্ছে শুনে বহুবার চেয়ারম্যান-মেম্বার আর টিএনও অফিসে গেছি। সবাই আশ্বাস দিল, কিন্তু কোনো ঘর পেলাম না।”

এই দম্পতির মানবেতর জীবনযাপন বছরের পর বছর দেখেও সরকারি সহায়তা না মেলায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। এলাকাবাসী সাগর দাস, জালাল শেখ, সেকেন্দারসহ কয়েকজন বলেন,

“এরা প্রকৃতভাবেই ঘর পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কত লোক ঘর পেয়েছে, যাদের এত প্রয়োজনও ছিল না। অথচ এই অসহায় দম্পতিকে কেউ দেখেনি। যেকোনো সময় ঘরটি ভেঙে চাপা পড়ে তারা মারা যেতে পারে।”

স্থানীয়রা সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদেরও এগিয়ে এসে দম্পতির জন্য একটি নিরাপদ ঘর নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জীবনযাপন নিয়ে আরও পড়ুন

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন প্রায় ৫৮ বছর পর ছেলেবেলার স্মৃতিবিজড়িত নীলফামারীর মাগুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন ৭ ডিসেম্বর কৃতী শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় ও বাল্যবন্ধুদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন।

১ দিন আগে

কুড়িগ্রামে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির ঝুঁকি তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন আইসিডিডিআর,বির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ। সম্প্রতি তিনি জেলার শিশু অপুষ্টি পর্যবেক্ষণ ও কমিউনিটি-ভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন

৪ দিন আগে

মহাজনের চড়া সুদের চাপ, বনদস্যুর আতঙ্ক আর জীবিকার সীমাহীন ঝুঁকি—এই তিনের চক্রে প্রতিদিন যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয় সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলেদের। ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাদের সংগ্রাম, আর সেই লড়াই চলতে থাকে গভীর রাত অবধি

৮ দিন আগে