বাড়ছে লোডশেডিং, অতিষ্ঠ জনজীবন

প্রতিনিধি
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

জ্বালানি আমদানিতে নির্ভরতা, গ্যাস সংকট এবং কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটি ও অপরিকল্পিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। এই কারণগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার ফলে লোডশেডিং দেখা যাচ্ছে, যা বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ২৪ হাজার ২৭৭ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত দেশে ৬ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৫৫ বিদ্যুতায়িত বিতরণ লাইন (কি.মি. রয়েছে। ২৩ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত এ পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬,৭৯৪ মে: ও: । বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট, যা উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম। তবে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে চাহিদা কিছুটা বেড়েছে এবং চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না, যার ফলে লোডশেডিং হচ্ছে। উৎপাদন ক্ষমতা এবং চাহিদার মধ্যে এই ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি (গ্যাস, তেল, কয়লা) ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস একটি প্রধান উৎস।

দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৫টি। শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনৈতিক যে বিপর্যয় রেখে গেছে তারই ফলশ্রুতিতে এই খাত মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে প্রায় বারো হাজার মেগাওয়াট। আগে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। অথচ এখন পাঁচ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ খাত দিনে ১২০ থেকে ১৩০ কোটি ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে। এখন ৮০ থেকে ৮৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ হচ্ছে বলে জানিয়েছে পিডিবি।

শেখ হাসিনার সরকার অর্থনীতির একটি ভ্রান্ত ধারণার ওপর ভিত্তি করে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে।

এই জ্বালানির বেশিরভাগই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এর আগে সরকার কখনো নিজেরা প্রাথমিক জ্বালানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। অথবা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে গুরুত্ব দেয়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানির এই আমদানি নির্ভরতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। যা সরাসরি ডলারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এ খাতকে চরম অব্যবস্থাপনার খাত হিসেবে অভিহিত করেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের হিড়িক পড়ে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন পাস করে এগুলোকে দায়মুক্তি দেয়া হয়। এ আইনের অধীনে দরপত্র ছাড়াই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতারাও বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা নেন।

অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হলেও সেগুলো থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ অর্থের অভাবে গ্যাস ও তেল কেনা যাচ্ছে না। এরকম বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি স্থগিত বা রিনিউ করা হয়নি।

দেশের দক্ষিণে চারটি বড় বড় কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হলো পায়রা, রামপাল, এস আলম এবং মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিবিধ নিয়ে আরও পড়ুন

দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয়তাবাদ, ভোট ও নারীর অধিকার, সাম্য ও ন্যায্যতার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন অকাতরে। মিথ্যে মামলার জালে চার দেয়ালের মাঝে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর।

৪ দিন আগে

শেরপুরের রোজবার্গের মালিক হযরত আলীর এলসির কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে শুরুতেই। পরে সোনালী ব্যাংক পুরো অর্থ আটকে দেয়। খবর পেয়ে তৎপর হয় দুর্নীতি দমন কমিশন। অর্থ আটকে দেওয়ার পরে রোজবার্গ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।

৭ দিন আগে

গত ১২ বছর আগে খোলা এলসির মূল্য সুদে-আসলে এখন দাঁড়িয়েছে ৩ গুণ বা প্রায় ৩০ লাখ ডলার। জালিয়াত চক্রের প্রভাবে সেই অর্থ এখন ছাড় করতে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক। সমালোচিত ও বহুল বিতর্কিত ওই প্রতিষ্ঠানটি হলো— রোজবার্গ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

৮ দিন আগে

কেয়ারটেকার থেকে হয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর প্রভাবশালী ঠিকাদার। নিয়মকে অনিয়মে পরিণত করে শত শত কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ঠিকাদার ইয়াছির আরাফাত। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বিসিকে তার যে দাপট ছিল, এখনো চলছে তাঁর সেই একচেটিয়া প্রভাব।

১৮ দিন আগে