হাজিদের ব্যবহার করে সোনা পাচার চক্রের সন্ধান

প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জ
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

হাজিদের ব্যবহার করে সোনা পাচারের একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। চক্রের এক সদস্য বর্তমানে সৌদি আরবে কারাবন্দী। দেশে চিহ্নিত করা হয়েছে আরও কয়েকজন সদস্যকে, যারা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ৬০০ গ্রাম সোনা পাচারের চেষ্টায় ছয়জন হাজিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। জেদ্দা বিমানবন্দরে তাঁদের আটক করে সৌদি পুলিশ। পরবর্তীতে হজ ক্যাম্পের মোয়াল্লেম জাকির হোসেন নিজেকে আটকে দেওয়ার শর্তে ওই ছয়জন হাজিকে মুক্ত করেন। বর্তমানে তিনি মদিনার একটি কারাগারে রয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত চলতি বছরের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে, যখন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মোশাররফ হোসেন সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। জানা গেছে, তার কাছে আরেক প্রবাসী মো. বাবুল মিয়া ৪০০ গ্রাম সোনা ও ১০ হাজার সৌদি রিয়াল দেশে পাঠান। এর সঙ্গে মোশাররফ নিজেও আরও ২০০ গ্রাম সোনা আনার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ মোট সোনার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ গ্রাম। যার বাজার মূল্য ৮৫ থেকে ৯০ লাখ টাকা।

বাংলাদেশে কাস্টমস বিধি অনুযায়ী একজন যাত্রী ঘোষণাপত্র পূরণ করে সর্বোচ্চ ১১৭ গ্রাম বা ১০ ভরি সোনা আনতে পারেন। এই সীমা অতিক্রম করায় মোশাররফ কৌশল হিসেবে হাজিদের ব্যবহার করার পথ বেছে নেন।

জেদ্দায় অবস্থানরত মোয়াল্লেম জাকির হোসেনের সহায়তায় ছয়জন হাজির হাতে একশ গ্রাম করে মোট ৬০০ গ্রাম সোনা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই ছয়জন হলেন- মিজানুর রহমান, ফারজানা আক্তার, শারমিন আক্তার, নাজমুস সাকিব, জাকির হোসেন ও শাহিনুর বেগম। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না থাকায় জেদ্দা বিমানবন্দরে সৌদি পুলিশ তাঁদের আটক করে। পরে হাজিদের মুক্ত করে নিজে আটক হন মোয়াল্লেম জাকির।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. মোশাররফ হোসেন, দেওয়ান আবুল হাসেম ও বাবুল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব থেকে সোনা চোরাচালানে জড়িত। কখনো নিজেরা, কখনো বা হাজিদের মাধ্যমে সোনা পাঠান দেশে। এবারের ঘটনায়ও সেই কৌশল ব্যবহার করা হয়।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মোশাররফ হোসেন স্বীকার করেন, “আমি আমার ২০০ গ্রাম সোনার কাগজপত্র বানিয়েছি। বাবুল এখনো পারেনি। সে কাগজ বানালে পুরো সোনা ছাড়ানো সম্ভব হবে।”

তবে দেওয়ান আবুল হাসেমের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে—সাধারণ প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত মোশাররফ ও বাবুল এত পরিমাণ সোনার মালিক হলেন কীভাবে? স্থানীয়দের ধারণা, এটি একটি বিস্তৃত সোনা চোরাচালান চক্রের অংশ, যার শাখা সৌদি আরব ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে।

ইতোমধ্যে মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ চক্রটির কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।

মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ইনচার্জ মো. মোশাররফ হোসেন জানান, পুলিশ সুপারের কাছে দায়ের করা একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে এ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

আইন কী বলে?

বাংলাদেশের কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ অনুযায়ী, ঘোষণা ছাড়া কিংবা অনুমোদিত সীমার বাইরে স্বর্ণ আনাকে চোরাচালান হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা বা উভয়দণ্ড হতে পারে।

এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা অনুসারে, সোনা আনতে হলে নির্ধারিত ফি ও শুল্ক পরিশোধ করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনতে হবে। ঘোষণা ছাড়া বা অন্যকে ব্যবহার করে গোপনে সোনা আনলে তা বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও চোরাচালান প্রতিরোধ আইনে মামলার আওতায় আনা যায়।

আইনজ্ঞদের মতে, হাজিদের ব্যবহার করে সোনা আনাকে প্রতারণামূলক ও পরিকল্পিত চোরাচালান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে, যা আরও গুরুতর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

৬ মিনিট আগে

পঞ্চগড়ে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে ৮০ হাজার জাল ইউএস ডলারসহ চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করেছে পঞ্চগড় আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা।

৩ ঘণ্টা আগে

আলী মামুন বলেছেন, আওয়ামী লীগের মত একটি রাজনৈতিক দল স্বৈরাচার, অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, দুর্নীতি দু:শাসনের কারণে আজ বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ হয়েছে।

৩ ঘণ্টা আগে

বরিশালের উজিরপুরে এক বিধবাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আলেয়া বেগম (৬০) নামে ওই নারীর অর্ধগলিত লাশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে উদ্ধারের পর দুপুরে মর্গে প্রেরণ করেছে থানা পুলিশ।

৪ ঘণ্টা আগে