নতুন বনদস্যু বাহিনীর আতঙ্ক

সুন্দরবনে কোস্টগার্ডের সাঁড়াশি অভিযানে স্বস্তির নিশ্বাস

প্রতিনিধি
বাগেরহাট
Thumbnail image

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বনদস্যু আতঙ্ক। একসময় আত্মসমর্পণ করা বেশ কয়েকটি দস্যুবাহিনীর কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছিল উপকূলের বনজীবী ও জেলেদের জীবনে। কিন্তু সম্প্রতি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক নতুন বনদস্যু দল। এতে করে জেলে ও বাওয়ালিদের মধ্যে নতুন করে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-ভয়। তবে আশার কথা, কোস্টগার্ডের নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে দস্যু তৎপরতা, যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে উপকূলবাসীকে।

২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিন দফায় প্রায় শতাধিক বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে সাতটি বনদস্যু দল আত্মসমর্পণ করে, পরে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে নয়টি দলের ৫৭ জন এবং ২০১৯ সালের পহেলা নভেম্বর আরও ২৫ জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে।

এই ধারাবাহিকতায় সুন্দরবন অনেকটাই দস্যুমুক্ত হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক মাসে অপহরণের একের পর এক ঘটনায় আবারো জানা যাচ্ছে- গভীর বনে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ডাকাত বাহিনী।

বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২০ জনেরও বেশি জেলে, মৌয়াল ও বাওয়ালি অপহরণের শিকার হয়েছেন। অপহরণের পর তাদের পরিবারের কাছে দাবি করা হয় ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত মুক্তিপণ।

কোস্টগার্ড ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে নতুন করে গড়ে ওঠা দস্যু বাহিনীর ভয়ে সাধারণ বনজীবীরা সুন্দরবনে যাওয়া থেকে বিরত থাকছেন।

সুন্দরবন ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেদের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সুন্দরবনের বিভিন্ন গহীনে অন্তত ৫-৭টি নতুন ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে ‘দয়াল বাহিনী’ ও ‘করিম শরীফ বাহিনী’ সবচেয়ে বেশি কুখ্যাত। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা মাছ ধরার ট্রলারে হানা দেয়, বনজীবীদের অপহরণ করে নির্জন ডেরায় নিয়ে চলে যায়।

এক জেলে জানান, “এই বাহিনীগুলো মুক্তিপণ না পেলে মারধর তো করে-ই, কেউ কেউ নদীতে ফেলে দিয়েও হত্যা করেছে। এরা অত্যন্ত নির্মম ও ভয়ঙ্কর।”

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারপারসন ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বনজীবীদের ছদ্মবেশে অনেকেই দস্যুতায় জড়িয়ে পড়ে। তাই এদের একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নজরদারির ব্যবস্থা করা জরুরি। একইসাথে তাদের পরিবার ও চলাচল লক্ষ্য রেখে সুন্দরবনে প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “এটি শুধুমাত্র নিরাপত্তা ইস্যু নয়। দস্যুতার কারণে সুন্দরবনের পরিবেশগত ভারসাম্য, বনজ সম্পদ ও হাজার হাজার মানুষের জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এর চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।”

বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে,

* বনদস্যুদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি করে প্রযুক্তির সহায়তায় নজরদারি বাড়ানো

* সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিয়মিত টহল

* বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দস্যুতা নিরুৎসাহিত করা

* বনজীবীদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের সক্রিয় অংশগ্রহণ

এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সুন্দরবন আবারো হতে পারে দস্যুমুক্ত, বনজীবীদের জীবনে ফিরবে দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা ও স্বস্তি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিন হত্যার ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশকে মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে এজাহার হিসেবে গণ্য করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

২০ মিনিট আগে

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া ও মিঠামইনে বজ্রপাতে তিন স্কুলছাত্রীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে পাকুন্দিয়া উপজেলার চরটেকী এলাকায় এবং মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর দক্ষিণ হাটি গ্রামে বজ্রপাতের এসব ঘটনা ঘটে।

১ ঘণ্টা আগে

পুকুরে গোসল করতে নেমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তুনু কর্মকার নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) বিকেলে কুয়েটের ক্যাম্পাসের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়।

২ ঘণ্টা আগে

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধ পথে ভারতীয় প্রসাধনী ও হরিণের কস্তুরী আনার সময় একজনকে আটক করেছে জামালপুরের ৩৫ বিজিবি সদস্যরা। বিজিবি সূত্রে জানা যায় ।

২ ঘণ্টা আগে