বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতিতে পঞ্চগড়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

প্রতিনিধি
পঞ্চগড়
Thumbnail image
ফাইল ছবি

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরেরহাট বেংহাড়িপাড়া এলাকায় গোলাম রব্বানী (৩৫)। চার মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার ৬ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। দিন মজুরি ও ভ্যান চালিয়ে ৬ সদস্যের এই সংসার কোন মতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। ঈদকে সামনে রেখে কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরিবারটি আশা ছিল সন্তানদের নিয়ে ঈদের দিনে দু-মুঠো ভালো খাবার খাবেন। কিন্তু বুধবার সকালে বাড়ির পাশে ভুট্টা তোলার কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যান তিনি। নিমেষেই দরিদ্র পরিবারটির আশা ভরসার বাতি নিভে যায়। বাবাকে হারিয়ে বিরামহীন কেঁদে চলেছেন তার চার মেয়ে। স্বামী হারিয়ে দিশেহারা স্ত্রী খায়রুন বেগম। বড় মেয়ে লাহে মাহফুজা আক্তার মায়া পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে, তার ছোট লামিয়া আক্তার তৃতীয়, আফিয়া আক্তার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ছোট মেয়ে রাইয়ার বয়স ২ বছর। পরিবারের বটবৃক্ষ হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ অসহায় পরিবারটির সদস্যরা।

শুধু গোলাম রব্বানীই নয়। তার প্রতিবেশী শাহিন ইসলাম (৩৫) ও জামিদুল ইসলামও (২৩) নিহত হন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার সকালে বাড়ির পাশের রবি নামের এক ব্যক্তির ভুট্টাক্ষেত থেকে ভুট্টা তোলার কাজ করতে যান ৪ জন শ্রমিক। ওই ভুট্টাক্ষেতের উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ ও তার উপর দিয়ে গেছে নেসকোর বিদ্যুৎ লাইন। প্রায় বছর খানেক ধরে নেসকো লাইনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওই ভুট্টাক্ষেতে থাকা নেসকোর পিলারের কাটা তার নিচে ঝুলছিলো। সেই তার সরাতে গিয়ে পল্লী বিদ্যুতের সচল লাইনের স্পর্শে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন অনেকেই। ঘটনাস্থলেই মারা যান শ্রমিক ও কলেজ ছাত্র জামিদুল ইসলাম। এসময় আহত হন গোলাম রব্বানী, শাহিন ইসলাম ও জয় ইসলাম। কোনোমতে তাদের উদ্ধার করে সহকর্মীরা পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শাহিন ও গোলাম রব্বানীকে মৃত ঘোষণা করেন। জয়কে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এদিকে একই এলাকার ৩ শ্রমিকের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত ৩ জনই ছিলেন পরিবারে আয়ের একমাত্র অবলম্বন। স্থানীয়দের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে নেসকোর এই বিদ্যুৎ লাইন পরিত্যক্ত হয়ে থাকলেও তা অপসারণে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের লোকজনেরও তেমন কোন নজর নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বহীনতার কারণেই বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তারা।

নিহত জামিদুল ইসলামের বোন মনোয়ারা বেগম বলেন, জামিদুলকে ছোট রেখেই মা মারা যান। আমি মানুষের কাজ করে ভাইটিকে মানুষ করেছি। এবার ইন্টার পাশ করেছে। পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার ভাইয়ের। নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করতে এভাবে মানুষের কাজ করতো। আশা ছিল চাকরি করে সে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো। বিদ্যুৎ বিভাগের খামখেয়ালির কারণে আমার ভাইটিকে প্রাণ দিতে হলো। আমরা তদন্ত করে এর বিচার চাই।

নিহত গোলাম রব্বানির স্ত্রী খায়রুন বেগম বলেন, আমি মরে গেলেও সমস্যা ছিল না। এই চার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন কোথায় যাবো। কিভাবে সংসার চালাবো। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।

স্থানীয় বাসিন্দা সাব্বির হোসেন বলেন, নেসকো দীর্ঘদিন দরে এভাবে তারগুলো ফেলে রেখেছে। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণেই আজ তিনটি প্রাণ চলে গেলো। ভাগ্যক্রমে অন্যরা বেঁচে গেছেন। না হলে আরও প্রাণহানির শঙ্কা ছিল।

পঞ্চগড় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মাজহারুল আলম বলেন, এখানে আমাদের কোন দোষ নেই। আমাদের লাইনের উপর দিয়ে নেসকোর লাইন চলে গেছে। সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। গতরাতে চোর তারগুলো এলোমেলো করে ফেলে যায়। ওই তার আমার লাইনে স্পর্শে আসায় এবং শ্রমিকরা ওই তার ধরলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে নেসকো পঞ্চগড়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সত্যজিৎ দেব শর্মাকে মুঠো ফোনে বার বার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

পঞ্চগড় সদর থানার ওসি আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা। তিন বলেন, শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে কারো গাফিলতি রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে নেসকো ও পল্লী বিদ্যুত এবং পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বলা হয়েছে। নিহত পরিবারগুলোর প্রত্যেককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার বিষয়েও আমরা সহযোগিতা করবো।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি।” আগুনে গুদামের ঝুটসহ মালামাল পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি

১২ মিনিট আগে

তাৎক্ষণিকভাবেও রচিত এই গানগুলি লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে বর্তমান প্রজম্ম এসব গীতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা আধুনিক নামধারী পাশ্চাত্য ঢঙের অনুকরণীয় দেশী বিদেশি গান বাজাচ্ছেন। ফলে গ্রামীণ জনপদের বিয়ের গীত ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে

২ ঘণ্টা আগে

সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস পৌর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের" প্রধান ফটকের কাছে প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ মাদক হিরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করছে। শহরের যুবসমাজ প্রধান ক্রেতা

৩ ঘণ্টা আগে

সাতক্ষীরা আলিয়া কামিল মাদ্রাসার নিয়োগ বোর্ডে নীতিমালা বহির্ভূত স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ১৪টি পদে পাতানো নিয়োগ বোর্ড করার অভিযোগ

১৭ ঘণ্টা আগে