সাবেক এসপি মঞ্জরুল কবীর ও এমপি মোস্তফা লুৎফুল্লাহসহ ২২ জনের নামে মামলা

সাতক্ষীরার বিএনপি নেতা বিপ্লবকে হত্যা

প্রতিনিধি
সাতক্ষীরা
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ২১: ১৫
Thumbnail image

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা বিএনপির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও জালালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক এসএম বিপ্লব কবীরকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যার অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক সাংসদ ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহসহ ২২ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।

সাতক্ষীরার বিজ্ঞ আমলী আদালত-৩ এ আজ রোববার মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী তালা উপজেলার দোহার গ্রামের মৃত শেখ শের আলীর ছেলে ও নিহতের বড় ভাই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৫০)।

আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মহিদুল হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আদালতকে জ্ঞাত করার জন্য তালা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সাবেক (ডিবি) ওসি একেএম আজমল হুদা, ডিবি পুলিশের কনষ্টেবল হাসিবুর রহমান, ফারুক চৌধুরি, রাসেল মাহমুদ, শিকদার মনিরুজ্জামান, তালা থানার সাবেক ওসি আবু বকর সিদ্দিক, এসআই আকরাম হোসেন, এএসআই গোলাম সরোয়ার, জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম মুক্তি, মাঝিয়াড়া গ্রামের যুবলীগ নেতা শেখ আবু জাফর, দোহার গ্রামের যুবলীগ নেতা শাহিন শেখ, জালালপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আমিরুল শেখ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রুহুল আমিন শেখ মিন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আমজাদ আলী, যুবলীগ নেতা ইদ্রিস সরদার, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল সরদার, যুবলীগ নেতা আক্তারুল সরদার, জেলা ওয়ার্কাস পার্টির নেতা মহিবুল্লাহ মোড়ল, উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শেখ আনারুল ইসলাম ও জালালপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক রাম প্রসাদ দাশ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, তালা শালিখা ডিগ্রী কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বিএনপি নেতা বিপ্লব কবীরের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

একপর্যায়ে বিপ্লব বিষয়টি জানতে পেরে তিনি রাতে নিজ বাড়িতে না থেকে এ মামলার ১ নং স্বাক্ষী ছবেদ আলী মোড়লের বাড়িতে লুকিয়ে থাকতেন। আসামিরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জানার পর ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই রাত ১২ টার দিকে উক্ত আসামিরা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘবদ্ধ হয়ে পিস্তল, কাটারাইফেল বন্দুক, রামদা, চাইনিজ কুড়াল ও লোহাররডসহ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এ মামলার ১ নম্বর স্বাক্ষী ছবেদ আলী মোড়লের বাড়ি ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তারা ছবেদ আলীর ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে এতে তিনি বাধা দেন। বাধা দেয়ায় তার হাতের কনুইতে এ মামলার ১৩ নং আসামি শাহীন শেখ পিস্তলের গুলি করে। এসময় অন্য আসামিরা লোহার রড ও রাম দা দিয়ে তার দুই পা ভেঙে ফেলে। এতে তার স্ত্রী রিজিয়া বাধা দিতে আসলে আসামিরা তাকেও মারপিট করেন। এর কিছুদিন পর তিনি মারা যান। এরপর দরজা ভেঙে উক্ত আসামিরা ভিকটিম বিপ্লবকে তারা জোরপূর্বক টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে। পরে তারা লোহার রড দিয়ে তার মাথার পিছনে বাড়ি মারলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লুটিয়ে পড়ার পর আসামিরা তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ফোলা জখম করে এবং ডান পায়ে কাটারাইফেল দিয়ে তিনটা গুলি করে। এসময় আসামিরা ছবেদ আলীর বাড়িভাংচুর ও লুটতরাজ করে। এতে তার ছয় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। আসামিরা লুটতরাজ শেষে ভিকটিম বিপ্লবকে টেনে হেচড়ে আটুলিয়ার দিকে নিয়ে যেতে থাকে। একপর্যায়ে সেখানে এসপি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবিরের নির্দেশে পুলিশের গাড়ী গিয়ে ভিকটিমকে তুলে নিয়ে ইসলামকাটির দিকে নিয়ে যায়। এসময় বাদী জাহাঙ্গীর আলম, অপর স্বাক্ষী আশরাফুল, মশিয়ার ও আমিরুল দুটি মোটরসাইকেল যোগে তাদের গতিবিধি লক্ষ করে সেদিকে যেতে থাকেন। রাত ২টার দিকে ইসলামকাটি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পৌছালে তারা দেখেন সেখানে দুটি পুলিশের গাড়ি অবস্থান করছে। একটি গাড়ি থেকে ভিকটিমের চোঁখ বেঁধে নিচে নামানো হয়। এরপর পর তারা দুই রাউন্ড গুলির শব্দ পান। তখন বাদী বুঝতে পারেন যে তার ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা নিশ্চিত করে পুলিশের গাড়িতে করে তার ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে যায় তারা। পরে বাদীসহ এমামলার স্বাক্ষী আশরাফুল, মশিয়ার ও আমিরুল মোটরসাইকেল যোগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখেন সেখানে তার ভাইয়ের মরদেহ পড়ে রয়েছে। পরে পুলিশ তার মরদেহ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের পর তৎকালীন পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর এ মামলার বাদীসহ তার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। সেকারনে তারা এই হত্যার ব্যাপারে ওই সময়ে কোথাও কোন অভিযোগ দিতে সাহস পাননি। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর মামলা করার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় তিনি আজ বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

বাদী পক্ষের আইনজীবি এড. আবু সাঈদ রাজা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আগামী ২৩ মার্চের মধ্যে মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে আদালতকে জ্ঞাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

অপরাধ নিয়ে আরও পড়ুন

খুলনা মহানগরীর হোটেল রয়েল মোড় থেকে বটিয়াঘাটা উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো: সোলায়মান মোড়লকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ

১৮ মিনিট আগে

কয়েক দিনের তাপদাহে অতিষ্ট নগরবাসী। এরই মধ্যে রাজধানীর ভাটারা, উত্তরাসহ কয়েক স্থানে নেমেছে স্বস্তির বৃষ্টি, সঙ্গে বইছে শীতল বাতাস।

২৪ মিনিট আগে

বুধবার(১৪ মে) কলেজ ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে অবিলম্বে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবী করা হয়।

২ ঘণ্টা আগে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তিন কার্যদিবস কলম বিরতি পালন করছে প্রতিষ্ঠানটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

৩ ঘণ্টা আগে