বসুরহাট পৌরসভায় গোলাম সরওয়ারের ঘুষ বাণিজ্যে ও সম্পদের পাহাড়

প্রতিনিধি
নোয়াখালী
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়ে না, এমন অভিযোগ এখন জনমুখে মুখর। জন্ম নিবন্ধন সনদ, প্রত্যয়ন পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, রিকশা লাইসেন্স, নতুন বাড়ির ফ্ল্যান, টেন্ডার, বাজেট, উন্নয়ন প্রকল্প কিংবা মৃত্যু সনদ— সব কিছুতেই টাকার লেনদেন ছাড়া কাজ হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে বসুরহাট পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ারের বিরুদ্ধে। দীর্ঘ তেত্রিশ বছর ধরে একই পদে বহাল থেকে তিনি যেন গড়ে তুলেছেন এক দুর্নীতির সাম্রাজ্য। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শক্তিশালী এক সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়েছেন, যারা প্রতিটি ফাইল থেকে ঘুষের ভাগ বুঝে নেয় নিয়মিতভাবে।

সূত্রে জানা গেছে, অফিসে ঢুকেই তিনি ঘুষের হিসাব-নিকাশ শুরু করেন। কে কত টাকা দেবে, কাকে কতটা সময় ঝুলিয়ে রাখা হবে— সব কিছু চলে এক অঘোষিত নিয়মে। অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে এই কর্মকর্তা প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। গত কয়েক বছরে তিনি গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ। নিজ বাড়িতে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবন, ছেলেকে তিন লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছেন, স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১২ ভরি স্বর্ণ। এ ছাড়াও নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের।

ভুক্তভোগীরা জানান, টাকার ঘাটতি থাকলেই ফাইলটি হঠাৎ হারিয়ে যায়, আবার নানা অজুহাতে কাজ আটকে দেওয়া হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা উপায়ে হয়রানির শিকার হতে হয়। এক সেবাগ্রহীতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “টাকা না দিলে ফাইল চিরদিনের মতো হারিয়ে যায়। কখনো বলে সই হয়নি, কখনো নানান অপ্রয়োজনীয় কাগজের কথা বলে গ্রাহকদের কাজ থেমে যায়। আসলে সবই টাকা নেওয়ার কৌশল।” প্রভাবশালী ও ভয়ভীতির কারণে অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পান না।

০৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু দাউদ জানান, বসুরহাট পৌরসভায় যেন দুর্নীতির এক অঘোষিত নিয়ম চালু আছে— যেখানে ঘুষই কাজের চাবিকাঠি।

অভিযুক্ত কর্মকর্তা গোলাম সরওয়ারের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেন, “আমি কারো ফাইল আটকে রাখিনি। কৃষি ব্যাংক থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছি।” তবে গ্রাহক হয়রানি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কিন্তু স্থানীয়দের বক্তব্য ভিন্ন। এক বাসিন্দা জানান, “ছেলের হাতখরচ ও স্ত্রীর প্রসাধনীর ব্যয় মাসে লাখ টাকা। অথচ অফিসের মাসিক বেতন দিয়ে এমন জীবনযাপন সম্ভব নয়।”

ভুক্তভোগীদের দাবি, গোলাম সরওয়ার ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত শুরু করে ব্যবস্থা না নিলে বসুরহাট পৌরসভা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হবে।

প্রবাসী আবুল কালাম জানান, আমি নিজেও হয়রানির শিকার হয়েছি। নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই দুর্নীতির চক্র ভেঙে না দিলে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি থামবে না।

ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিন জানান, “বসুরহাট পৌরসভা এখন যেন এক ঘুষের কারখানা, যেখানে টাকা ছাড়া নড়ে না কোন ফাইল।”

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক তানভীর ফরহাদ শামীম জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতির বিষয়ে ছাড় নেই।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

ঘটনাস্থলেই দুইজনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক

১১ মিনিট আগে

প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত এখনো জানা যায়নি।” আগুনে গুদামের ঝুটসহ মালামাল পুড়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি

২৪ মিনিট আগে

তাৎক্ষণিকভাবেও রচিত এই গানগুলি লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে বর্তমান প্রজম্ম এসব গীতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারা আধুনিক নামধারী পাশ্চাত্য ঢঙের অনুকরণীয় দেশী বিদেশি গান বাজাচ্ছেন। ফলে গ্রামীণ জনপদের বিয়ের গীত ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে

২ ঘণ্টা আগে

সোসাইটি ফর সোশ্যাল সার্ভিস পৌর আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের" প্রধান ফটকের কাছে প্রকাশ্যেই নিষিদ্ধ মাদক হিরোইন ও ইয়াবা বিক্রি করছে। শহরের যুবসমাজ প্রধান ক্রেতা

৪ ঘণ্টা আগে