শেবাচিম হাসপাতাল

অযত্ন অবহেলায় পঞ্চাশ ভাগ রোগ নির্ণয়ের মেশিন অচল

প্রতিনিধি
সুখেন্দু এদবর
Thumbnail image
ফাইল ছবি

অযত্ন অবহেলায় বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ রোগ নির্ণয়ের মেশিন এখন আর কাজ করছে না। এক’শ কোটিরও বেশি টাকা মূল্যের কিছু যন্ত্রপাতি মেরামত যোগ্য হলেও এর জন্য চিঠি চালাচালিতে পার হয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এর ধকল পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব মেশিন অচলের কারণ উদ্‌ঘাটন করবে বলে জানিয়েছেন।

১৯৬৮ সালে স্থাপিত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে রোগ নির্ণয়ের জন্য ৪৯৬ টি মেশিন স্থাপন করে। স্থাপিত মেশিনের মধ্যে ২৪২টিই বর্তমানে অচল। আর ১২৮টি মেরামতযোগ্য হলেও মন্ত্রণালয়ে চিঠি চালাচালি ও নির্দেশনার অভাবে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। প্যাকেট খুলে দেখা যাচ্ছে মেশিনের মেয়াদ শেষ। চিঠি চালাচালিতেই এসব যন্ত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের সিয়ার্ম মেশিনটি এখানে দেয়া হয় ২০১৫ সালে। এটি স্থাপনে স্থান নির্বাচনসহ অনুসাংগিক কাজে ব্যয় হয়ে যায় ৬ বছর। এর পর এ মেশিনের দরপত্র ও সরবরাহ নিয়ে জটিলতা হয়। সেই থেকে অযত্ন অবহেলায় এটি পড়ে আছে। একইভাবে সিটিস্ক্যান মেশিনে পানি পড়ে নষ্ট হয়। কেন পানি পড়লো তা খুজতে সময় পার হয়েছে দু বছর। এখন মেশিনটির অবস্থা সম্পূর্ণ অচল। এমআরআই মেশিনটি চালু হওয়ার ৬ মাস পর থেকে অচল হয়ে এখন এরও জীবন শেষ পর্যায়ে। সিরাম মেশিনটি চালুর পর এর রি-এজেন্ট অন্য কোম্পানির হওয়ায় এটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে।

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোজিস্ট বাবুল আখতার বলেন, এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ ভারি মেশিনগুলো অচল হবার পর আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু উত্তর আসেনি। এগুলো যে অকশনে দেবো তাও করতে পারছি না। দামি এসব মেশিনগুলো ক্রমেই আবর্জনায় পরিণত হচ্ছে। অনেক মেশিন অতি পুরোনো আবার অনেক মেশিন নতুন। কিন্তু অচল সবগুলোই।

১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে রোগীদের সেবা নিশ্চিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে রোগ নির্ণয়ের ৪৯৬ টি মেশিন স্থাপন করে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে এগুলো আর সচল থাকেনি। বর্তমানে এর মধ্যে ২৪২ টি অচল। এর আবার ১২৮টি মেরামতযোগ্য হলেও নির্দেশ না থাকায় তা মেরামত করা যাচ্ছে না। অযত্ন অবহেলা কিংবা আদৌ ব্যবহার না করার কারণে শতকরা ৫০ ভাগ মেশিন এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে একটি এয়ার্ম, একটি সিরাম, দুটি সিটি স্ক্যান, একটি এমআরআই, একটি অটোক্লেভ,১২টি ডেন্টাল ইউনিট, ৩টি ক্যান্সার নির্ণয়কসহ ২৫২টি মেশিন এখন অচল। মেশিন কম ও রোগী বেশি থাকায় রোগ নির্ণয় ও রিপোর্ট পেতে রোগীদের বিলম্বে পড়তে হচ্ছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মেহেন্দিগঞ্জের সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ এক্স-রে করালে রিপোর্ট মেলে আগামীকাল, এটা তো হয় না। নিয়ম হলো টেস্ট করেই রিপোর্ট দেয়ার। মেডিক্যালের মেশিন অনেকটা নষ্ট। যার জন্য রোগীরা সব টেস্ট করাতে বাইরে চলে যায়।

বরিশাল নগরীর ধানগবেষনা রোড এলাকার ফজলুর রহমান বলেন, দু’দিন আগে টেস্ট করেও রিপোর্ট মেলেনি, ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরেও থেরাপি দিতে পারিনি।

রোগীর স্বজন খলিলুর রহমান বলেন, ভোররাতে আল্ট্রা সনোর লাইন দিয়েছি, এখনও সিরিয়াল পাইনি। এখন বলছে মেশিন নষ্ট, মেশিনে সমস্যা আছে।

অচল এসব মেশিনের মূল্য একশ কোটি টাকারও বেশি । এ হাসপাতালের অর্থ ও ভাণ্ডার শাখা থেকে বলা হয়েছে এসব মেশিনের ত্রুটি সারানোর জন্য প্রকৌশলী তাদের নেই। একটি মেশিন সামান্য ত্রুটি হলেও তা সারানোর জন্য দিনের পর দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি চালাচালি করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। এসময়ের মধ্যে মেশিনগুলোর সামান্য ক্ষতি বড় ক্ষতিতে রূপ নেয় । যদি এখানেই সারানো যেতো তাহলে রোগী সেবায় কোন বিঘ্ন হতো না।

শেবাচিম হাসপাতাল সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভাণ্ডার) ডা: মো: রেজুয়ানুর আলম বলেন, অচল মেশিন সারানো যায় যদি আমাদের কোন সরকারি নির্দেশনা থাকে। আমরা আইনের বাইরে যেতে পারি না। এখানে অচল মেশিন সারাতে হলে আমাদের প্রকৌশল শাখাকে জানাতে হয়। তাদের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে তাদের জনবল এটা সারাবে। এই অনুমতি নিতে নিতেই আমাদের সব দীর্ঘ সুত্রিতার সৃস্টি হয়। তারা যদি এই প্রশাসনিক জটিলতা সহজ করে আমাদেরকে সারাতে দিতো তাহলে তা অনেক ভালো হতো। মেশিনগুলো এভাবে নষ্ট হতোনা।

শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা: এ কে এম মশিউল মুনির বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই মেশিন সরবরাহের পর তার স্থাপনে জটিলতা হয়। দেখা যায় চাহিদার চেয়ে সরবরাহে ঘাটতি ছিল, তখন সে মেশিন অচল পড়ে থাকে। অনেক সময় মেশিন আসে কিন্তু সরবরাহকারী কেউই আসে না। কিছু মেশিন আছে যা আর সারানো যাবে না, অন্যগুলো সারানোর চেষ্টা করা হবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

লালনসংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান তিনি। ১৯৯৩ সালে চল”িচত্র ‘অন্ধ প্রেম’-এ ব্যবহৃত তাঁর গাওয়া ‘নিন্দার কাঁটা’র জন্য পান জাতীয় চল”িচত্র পুরস্কার। ২০০৮ সালে জাপানের মর্যাদাপূর্ণ ফুকুওয়াকা পুরস্কারে ভূষিত হন। তবে পুরস্কার-সম্মান নয়, তাঁর কাছে আসল অর্জন ছিল মানুষের ভালোবাসা

১২ ঘণ্টা আগে

এনআইসিইউতে ৩টি বেড খালি থাকায় ৩ নবজাতককে রাখা সম্ভব হয়েছে। ২ নবজাতের অবস্থা আশংকাজনক। এখানে বেড খালি হলে বাইরের হাসপাতালে যে নবজাতকদের নিয়ে রাখা হয়েছে তাদেরও এখানে নিয়ে আসা হবে

১২ ঘণ্টা আগে

শহরের যানজট নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ, লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধকরণ, দ্বিধাবিভক্ত প্রেসক্লাব ইস্যুতে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ, সরকারি খাস জমিতে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছ্বেদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মান উন্নয়নসহ জনগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়

১২ ঘণ্টা আগে

পুলিশের একার পক্ষে চুরি, ছিনতাই কিংবা ইভটিজিং বন্ধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রত্যেক নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো অপরাধ চোখে পড়লেই তা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সর্বদা জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে

১২ ঘণ্টা আগে