প্রচন্ড গরমে চাহিদা বেড়েছে তালপাখার

Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি এমন দুর্গম গ্রামে কিংবা লোডশেডিংমাখা শহরে জীবনে শীতল পরশ বুলিয়ে দেয় হাতপাখা। তালপাতার তৈরি এই হাতপাখার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার দামপাড়া গ্রামের প্রায় দুইশো পরিবারের জীবন-জীবিকা। এখানকার হাতপাখা যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

প্রতিবছরের চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তালপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। তখন নিকলীর দামপাড়া গ্রামের নোয়ারহাটি, টেকপাড়া ও বর্মনপাড়ায় ঘরে ঘরে পাখা তৈরির ধুম পড়ে যায়।

সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কারিগররা বাড়ির উঠানজুড়ে দল বেঁধে হাতপাখা তৈরির কাজ করেন। তবে এই তিন মাসের তালপাখার বাজারকে কেন্দ্র করে কারিগররা ব্যস্ত থাকেন বছরের অন্য সময়ও।

এবার লোডশেডিং বেশি থাকায় এবং প্রচন্ড গরমের কারণে তালপাখার চাহিদাও বেড়েছে। সারাদেশে যাচ্ছে দামপাড়া গ্রামের প্রাণ জুড়ানো দেহশীতল করার এই হাতপাখা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দামপাড়া গ্রামে এখন তালপাখা বানানোর ধুম লেগেছে। ছেলে, বুড়ো, কিশোর, কিশোরী, বসে নেই কেউ। ঘরের বউ-ঝিয়েরা তালের পাতাগুলো দা দিয়ে ফালি করে বেতি করছেন। এগুলো বুনন করে কেউ ছাঁটাই আকৃতি করে নিচ্ছেন। কেউ মোড়ল বাঁশ কেটে, ছেঁটে হাতল তৈরি করে দিচ্ছেন। কেউ প্লাস্টিকের বেত ও সুতা দিয়ে জালি বেতের সাথে ছাঁটাই বা ছাঁচ সেলাই করে হাতপাখার আকৃতি দিচ্ছেন। কেউ বসেছেন রংয়ের তুলি নিয়ে। আর এই কাজগুলো করা হচ্ছে দল বেঁধে। ঘরের বারান্দায় কিংবা বাড়ির উঠোনে গাছের ছায়ায় বসে।

গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক নারী আশুলতা রায় (৮০) জানান, ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে এ গ্রামে তালপাখা তৈরি হচ্ছে। ১২ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। শাশুড়ির হাত ধরে তিনি তালপাখা তৈরির কাজ শিখেন।

আশুলতা বলছিলেন, ‘গ্রামে পর্থম আমার শাশুড়ি তালপাখা বানাইত। শাশুড়ির কাছ থেকে আমি শিখছি। আমার কাছ থেকে পরে গ্রামের এ, হে, সবাই শিখছে। এহন আমার বয়স অইছে, পারি না। আমার বউয়াইনে এবং নাতি-নাতকররা এহন তালপাখা বানায়।

গ্রামের ভানুমতি সূত্রধর (৭৮) বলেন, ‘৫০-৬০ বছর ধইরা অইবো আমরা হাতপাখা তৈরির কাজ করতাছি। ৭১ সালে এই গ্রামে পাকবাহিনী আক্রমণ করে। তহন আমাদের অনেকের স্বামীরে মাইরা ফালায়। আমরা বিপদে পইরা যাই। তহন কি কইরা চলবাম। এই কাজ কইরাই আমরা সংসার চালায়া আইতাছি। এহন আমার পুতের বউ, নাতিরাও এই কাজ করে।’

গ্রামে তালপাখা তৈরির কাজটা করেন মূলত নারীরাই। পুরুষেরা শুধু সরঞ্জাম এনে দেন।

বাড়ির শিশু সন্তানেরা উঠানে বসে নারীদের হাতপাখা তৈরির কাজে সহযোগিতা করেন।

পাকিস্তান আমল থেকে এখানকার কারিগরেরা হাতপাখা তৈরি করে জীবিকা চালাচ্ছেন। তিন পুরুষ ধরে এ পেশায় সংসার চালাচ্ছেন গ্রামবাসী। বংশপরম্পরায় এ গ্রামে এখনো কিশোর তরুণ বয়সীরা পাখা তৈরির পেশা বেছে নিচ্ছে।

গ্রামের প্রবীণ কারিগরেরা জানান, স্বাধীনতার আগে একটি পাখা তৈরিতে খরচ পড়ত আট আনা। বিক্রি হতো এক থেকে দেড় টাকায়। এখন একটি পাখা তৈরিতে গড়ে খরচ পড়ে প্রায়৫০ থেকে ৬০ টাকা। বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা টাকায়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

গুরুতর আহত ৫ জন কিশোরগঞ্জ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়েছেন। বাকী ২৫ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেক গবাদী পশু আহত হয়েছে। পশুগুলোর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ প্রাণি সম্পদ দপ্তরের একটি টীম কাজ করছে

১ ঘণ্টা আগে

মনিরা তার দুই খালাতো বোন আছিয়া ও মাফিয়াকে নিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে গোসল করতে নামে। এক পর্যায়ে তারা স্রোতে তলিয়ে যায়

২ ঘণ্টা আগে

কর্মশালায় টাইফয়েড প্রতিরোধে টিকাদানের গুরুত্ব ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণকারীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করা হয়

২ ঘণ্টা আগে

হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় গড়ে ১ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত ডাক্তার না থাকায় আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ৪০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দাদের জন্য জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত ৪৪জন চিকিৎসক নিতান্তই অপ্রতুল বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

২ ঘণ্টা আগে