বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সর্বশেষ
  • বিশ্ব
  • বিশেষ সংবাদ
  • রাজনীতি
  • বিনোদন
  • জীবনযাপন
  • খেলা
  • বাংলাদেশ
  • অর্থনীতি
  • ইপেপার
  • ইপেপার
nikhad logo
অনুসরণ করুন
facebooktwittertiktokpinterestyoutubelinkedininstagramgoogle
  • নিখাদ খবর
  • বিজ্ঞাপন
  • সার্কুলেশন
  • শর্তাবলি ও নীতিমালা
  • গোপনীয়তা নীতি
  • যোগাযোগ
স্বত্ব: ©️ দৈনিক নিখাদ খবর|ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: পারভীন আফরোজ খান ওপ্রকাশক: আ. হ. ম তারেক উদ্দীন
জাতীয়

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রতিনিধি
মোঃ মাজহারুল পারভেজ
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৩
logo

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা

মোঃ মাজহারুল পারভেজ

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৩
Photo
ছবি: সংগৃহীত

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা । জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় জনতার হামলা ও ভাঙচুরের সময় বিভিন্ন ধরনের ৫,৭৫৩টি অস্ত্র ও ৬ লাখের বেশি গোলাবারুদ লুটপাট করা হয়েছে। যৌথ বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ উদ্ধার করলেও এখনো এক হাজার তিন শর বেশি অস্ত্র এবং আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধারের বাইরে রয়ে গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এসব অস্ত্র কয়েকবার হাত বদল হয়েছে। ফলে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারে। চলে গেছে অপরাধীদের হাতে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। যদিও উদ্ধার করা কঠিন।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর দেশের ৪৬০ থানা ও ১১৪টি ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট হয়।

এছাড়া ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গোলাবারুদ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০টি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৬৩টি। এছাড়া গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১১২টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের তিন মেয়াদে সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিল। এরমধ্যে ১০ হাজারের মতো অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়।

গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব লাইসেন্স ও লাইসেন্সের বিপরীতে ইস্যুকৃত অস্ত্র নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছর এসব লাইসেন্স বাতিল করে। তারপরই এসব লাইসেন্স ও অস্ত্র অবৈধ হয়ে যায়। লাইসেন্সের বিপরীতে যাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে তাদেরকে সেসব অস্ত্র থানায় জমা দেয়ার জন্য ৩রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু লাইসেন্স স্থগিত করার পর থানায় জমা পড়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৩৪৯টি অস্ত্র। এই হিসাবে ১৯ হাজার ৫৯৪টি লাইসেন্সের বিপরীতে ৬ হাজার ২৪৫টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়নি।

এসব অবৈধ অস্ত্র এখন কার কাছে আছে তারও কোনো হদিস নাই। ধারণা করা হচ্ছে এসব অস্ত্রের কিছুটা স্থগিত করা লাইসেন্সের মালিক ও কিছু অস্ত্র বিক্রি হয়ে যেতে পারে। এখন এসব অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের ২৫ মে রাত ১১টায় রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধন। এসময় দুই তরুণ তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এর দু-দিন পর ২৭ মে মিরপুরে গুলি করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে গুলিতে মারা যান শাহেন শাহ নামে এক তরুণ।

শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। গত ২০ আগস্ট দাবি করা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে একদল অস্ত্রধারী যুবক। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে হামলার বিষয়টি ধরা পড়ে। এসব ঘটনায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে নিশ্চিত না হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ায় অনেক সদস্য থানা ছেড়ে পালিয়ে যান। এ কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্র উদ্ধারে স্থবিরতা তৈরি হয়। এ সুযোগে অপরাধীরা অস্ত্র লুকিয়ে ফেলার কিংবা স্থানান্তর করার যথেষ্ট সময় পায়। পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারও করে। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের গতি এক পর্যায়ে কমে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর বড় একটি কারণ হতে পারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় এবং আস্থার সংকট। অপরাধীদের ভয়ে অনেকে তথ্য দিতে এগিয়ে আসছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরস্কার ঘোষণা করে অস্ত্র উদ্ধার করা কঠিন। কারণ যারা এসব অস্ত্র দখলে রেখেছে তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন হবে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে উদ্ধারের বাইরে থাকা লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ তত বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিখাদ খবরকে বলেন, দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে, তখন পেশিশক্তি দেখাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও দেখা যায়। সীমান্ত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র আনার তথ্যও পাওয়া যায়। আর এবার তো লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ফলে এসব অস্ত্র বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করছে।

উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায়ও লুট হওয়া এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা নির্বাচনে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চাপের মধ্যে রাখতে পারে। এসব অস্ত্র আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

গত বছর ডিসেম্বরে মুন্সীগঞ্জে শাহিদা আক্তার নামের এক তরুণীকে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তলটি ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। অপরাধীরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে সমাজে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে। এটি অস্ত্র উদ্ধার প্রক্রিয়াকে আরো বাধাগ্রস্ত করছে।

অভিযোগ রয়েছে, লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে? আবার অনেকেই এসব অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড- ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন।

প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর কাজে অস্ত্রের ব্যবহার নতুন নয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এবারও নির্বাচনের আগে নতুন করে ‘অস্ত্রের বাজার’ সচল হওয়ার আভাস মিলছে। এর সঙ্গে লুট হওয়া অস্ত্রও মিশে গেলে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্বাচনের আগে সব অস্ত্রই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, সব সময়ের জন্য অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ঠেকাতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া আগের তুলনায় এখন সীমান্ত অনেক বেশি সুরক্ষিত আছে বলেও দাবি করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।

Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা । জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় থানাসহ পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় জনতার হামলা ও ভাঙচুরের সময় বিভিন্ন ধরনের ৫,৭৫৩টি অস্ত্র ও ৬ লাখের বেশি গোলাবারুদ লুটপাট করা হয়েছে। যৌথ বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে লুট হওয়া অস্ত্রের বড় অংশ উদ্ধার করলেও এখনো এক হাজার তিন শর বেশি অস্ত্র এবং আড়াই লাখের বেশি গোলাবারুদ উদ্ধারের বাইরে রয়ে গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এসব অস্ত্র কয়েকবার হাত বদল হয়েছে। ফলে বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারে। চলে গেছে অপরাধীদের হাতে। লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। যদিও উদ্ধার করা কঠিন।

পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, গত বছর ৫ আগস্টের পর দেশের ৪৬০ থানা ও ১১৪টি ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণভবন থেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৫ হাজার ৭৫৩টি অস্ত্র লুট হয়।

এছাড়া ৬ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২টি গোলাবারুদ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৯০টি। এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৩৬৩টি। এছাড়া গোলাবারুদের মধ্যে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ১১২টি। এখনো উদ্ধার হয়নি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৭২০টি।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের তিন মেয়াদে সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিল। এরমধ্যে ১০ হাজারের মতো অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়।

গণ-অভ্যুত্থানের পর এসব লাইসেন্স ও লাইসেন্সের বিপরীতে ইস্যুকৃত অস্ত্র নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বছর এসব লাইসেন্স বাতিল করে। তারপরই এসব লাইসেন্স ও অস্ত্র অবৈধ হয়ে যায়। লাইসেন্সের বিপরীতে যাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে তাদেরকে সেসব অস্ত্র থানায় জমা দেয়ার জন্য ৩রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু লাইসেন্স স্থগিত করার পর থানায় জমা পড়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৩৪৯টি অস্ত্র। এই হিসাবে ১৯ হাজার ৫৯৪টি লাইসেন্সের বিপরীতে ৬ হাজার ২৪৫টি অস্ত্র জমা দেয়া হয়নি।

এসব অবৈধ অস্ত্র এখন কার কাছে আছে তারও কোনো হদিস নাই। ধারণা করা হচ্ছে এসব অস্ত্রের কিছুটা স্থগিত করা লাইসেন্সের মালিক ও কিছু অস্ত্র বিক্রি হয়ে যেতে পারে। এখন এসব অবৈধ অস্ত্র নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের ২৫ মে রাত ১১টায় রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধন। এসময় দুই তরুণ তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এর দু-দিন পর ২৭ মে মিরপুরে গুলি করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর ২১ লাখ টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। ৬ আগস্ট মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে গুলিতে মারা যান শাহেন শাহ নামে এক তরুণ।

শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি চলছে। গত ২০ আগস্ট দাবি করা ৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে একদল অস্ত্রধারী যুবক। বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে হামলার বিষয়টি ধরা পড়ে। এসব ঘটনায় কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে নিশ্চিত না হলেও লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহারের শঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

গণ-অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ায় অনেক সদস্য থানা ছেড়ে পালিয়ে যান। এ কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে অস্ত্র উদ্ধারে স্থবিরতা তৈরি হয়। এ সুযোগে অপরাধীরা অস্ত্র লুকিয়ে ফেলার কিংবা স্থানান্তর করার যথেষ্ট সময় পায়। পরবর্তী সময়ে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অস্ত্র উদ্ধারও করে। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের গতি এক পর্যায়ে কমে গেছে বলে মনে করেন অনেকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে অস্ত্রের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

এর বড় একটি কারণ হতে পারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় এবং আস্থার সংকট। অপরাধীদের ভয়ে অনেকে তথ্য দিতে এগিয়ে আসছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরস্কার ঘোষণা করে অস্ত্র উদ্ধার করা কঠিন। কারণ যারা এসব অস্ত্র দখলে রেখেছে তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া কঠিন হবে।

একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে উদ্ধারের বাইরে থাকা লুট হওয়া অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ তত বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিখাদ খবরকে বলেন, দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করে, তখন পেশিশক্তি দেখাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারও দেখা যায়। সীমান্ত দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র আনার তথ্যও পাওয়া যায়। আর এবার তো লুট হওয়া অনেক অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ফলে এসব অস্ত্র বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করছে।

উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায়ও লুট হওয়া এসব অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্র ব্যবহার করে দুর্বৃত্তরা নির্বাচনে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চাপের মধ্যে রাখতে পারে। এসব অস্ত্র আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোটের মাঠে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

গত বছর ডিসেম্বরে মুন্সীগঞ্জে শাহিদা আক্তার নামের এক তরুণীকে হত্যার ঘটনায় ব্যবহৃত পিস্তলটি ঢাকার ওয়ারী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। অপরাধীরা এসব অস্ত্র ব্যবহার করে সমাজে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে। এটি অস্ত্র উদ্ধার প্রক্রিয়াকে আরো বাধাগ্রস্ত করছে।

অভিযোগ রয়েছে, লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে? আবার অনেকেই এসব অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড- ঘটিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন।

প্রতিটি নির্বাচন ঘিরে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বাড়ে। স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার, ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানোর কাজে অস্ত্রের ব্যবহার নতুন নয়। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এবারও নির্বাচনের আগে নতুন করে ‘অস্ত্রের বাজার’ সচল হওয়ার আভাস মিলছে। এর সঙ্গে লুট হওয়া অস্ত্রও মিশে গেলে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নির্বাচনের আগে সব অস্ত্রই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, সব সময়ের জন্য অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ ঠেকাতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া আগের তুলনায় এখন সীমান্ত অনেক বেশি সুরক্ষিত আছে বলেও দাবি করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জাতীয় নিয়ে আরও পড়ুন

গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে চীনের  আমন্ত্রণ

গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে চীনের আমন্ত্রণ

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, উভয় দেশই সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা নির্বিঘ্নে চলছে এবং বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছে

১৪ মিনিট আগে
বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ: আলী রীয়াজ

বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ: আলী রীয়াজ

অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা

২ ঘণ্টা আগে
আমরা চাই ফ্যাসিস্ট শাসনের আগমন আর না ঘটুক: মাহমুদুর রহমান

আমরা চাই ফ্যাসিস্ট শাসনের আগমন আর না ঘটুক: মাহমুদুর রহমান

জুলাই গণহত্যার বিচার হতে হবে, যাতে দেশে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে। আমি চাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ন্যায়বিচার পেলে প্রায় ১৪০০ শহীদ ও ২০ হাজার আহত পরিবারের শোক কিছুটা হলেও লাঘব হবে

২১ ঘণ্টা আগে
ব্যক্তি বিবেচনায় এলএনজি কেনা হচ্ছে না :  অর্থ উপদেষ্টা

ব্যক্তি বিবেচনায় এলএনজি কেনা হচ্ছে না : অর্থ উপদেষ্টা

বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বাড়তি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করলেও, এতে ভোক্তার উপরে প্রভাব পড়বে না

১ দিন আগে
গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে চীনের  আমন্ত্রণ

গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে চীনের আমন্ত্রণ

চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, উভয় দেশই সম্পর্ক উন্নয়নের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রেখেছে। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা নির্বিঘ্নে চলছে এবং বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছে

১৪ মিনিট আগে
বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ: আলী রীয়াজ

বিশেষজ্ঞদের চার পদ্ধতিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ: আলী রীয়াজ

অধ্যাদেশ, নির্বাহী আদেশ, গণভোট ও বিশেষ সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা

২ ঘণ্টা আগে
ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা

ভোটের আগে লুটের অস্ত্র নিয়ে দুশ্চিন্তা

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তাদের তিন মেয়াদে সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি অস্ত্রের লাইসেন্স দিয়েছিল। এরমধ্যে ১০ হাজারের মতো অস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল রাজনৈতিক বিবেচনায়

৬ ঘণ্টা আগে
আমরা চাই ফ্যাসিস্ট শাসনের আগমন আর না ঘটুক: মাহমুদুর রহমান

আমরা চাই ফ্যাসিস্ট শাসনের আগমন আর না ঘটুক: মাহমুদুর রহমান

জুলাই গণহত্যার বিচার হতে হবে, যাতে দেশে গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে। আমি চাই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ন্যায়বিচার পেলে প্রায় ১৪০০ শহীদ ও ২০ হাজার আহত পরিবারের শোক কিছুটা হলেও লাঘব হবে

২১ ঘণ্টা আগে