জামালপুরের প্রখ্যাত অলি হযরত শাহ্ কামাল (রহঃ) এর মাস ব্যাপী ওরস শরীফ শুরু

প্রতিনিধি
জামালপুর
Thumbnail image

জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ এলাকায় শাহ্ সুফি সৈয়্যাদ শাহ কামাল (রহ :)-এর মাজার শরীফে এক মাস ব্যাপী ওরস শরীফ শুরু হচ্ছে। যুগ-যুগ ধরে প্রতি বছর ১ বৈশাখ থেকে শুরু হয়ে বৈশাখের শেষ দিন পর্যন্ত এক মাস ব্যাপী ওরস শরীফ পালিত হয়ে থাকে। ওরস শরীফ চলা কালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু ভক্তবৃন্দ রেল পথ ও সড়ক পথে দুরমুঠ মাজার প্রাঙ্গণে আগমন ঘটে।

এ সময় ভক্তবৃন্দের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। মনের কামনা-বাসনা পূরণের জন্য ফকির মিসকিন, মোসাফির, ভক্ত বৃন্দের মাঝে তাদের মান্নত শিরনি, ফিন্নি, পায়েসসহ খুরমা-বাতাসা বিতরণ করে থাকেন।

গণ ইতিবৃত্ত গ্রন্থে আলহাজ গোলাম মোহাম্মদ এর লিখনির মাধ্যমে জানাজায়,হযরত শাহ্ সুফি সৈয়্যাদ শাহ কামাল (রহ) মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ অবস্থান কালের পূর্বেই তিনি ইস্পানদিয়ার খান গাজী এবং রাজা মনিন্দ্র নারায়ণ কর্তৃক এই এলাকায় জায়গীর প্রাপ্ত হন।

জনশ্রুতি রয়েছে তৎকালীন ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জ এলাকার তৎকালীন রাজা মহেন্দ্র নারায়নের পুত্র ভগদেব কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন। রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ তার পুত্রের বহু চিকিৎসার করে ব্যর্থ হয়ে প্রখ্যাত অলি হযরত শাহ্ সুফি সৈয়্যাদ শাহ কামাল (রহ) কাছে শরণাপন্ন হন। হযরত শাহ্ কামাল (রহ :) রাজপুত্র ভগদেব এর জন্য সুস্থতা কামনা করে দোয়া করলে তাৎক্ষণিক সে সুস্থ হয়ে উঠেন। তার এই অসিম কারামতি দেখে রাজা মহেন্দ্র নারায়ণ অশ্রুসিক্ত আবেগ আপ্লুত এবং মুগ্ধ হয়ে তাৎক্ষনিক হযরত শাহ্ কামাল (রহ :)এর হাত ধরে তওবা পড়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এমনকি রাজা মহেন্দ্রর জমিদারি কিয়দাংশ প্রখ্যাত ওলির নামে লিখে দিয়ে জায়গিরদারি দান করেন।

কথিত আছে প্রখ্যাত অলি হযরত শাহ্ সুফি সৈয়্যাদ শাহ কামাল (রহ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নে আস্তানা গড়ে সেখানে দীর্ঘদিন ধ্যান সাধনায় মগ্ন থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন।

হযরত শাহ্ কামাল (রহ) সংসার জীবনে তার ৪জন স্ত্রী ছিলেন বলে অনেকেই ধারণা করে থাকেন। কিন্তু শুধু মাত্র ছোট স্ত্রী বারই রাণী ব্যতীত অন্য তিনজনের নামের পরিচয় আজও জানা যায়নি। অনেকেইর ধারণা প্রথম স্ত্রীর মাজারটি হয়ত তার নিজের মাজারের সাথে যৌথ মাজার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর মাজারটি মিয়াবাড়ি সংলগ্ন বৌরানী জোড়া মাজার নামে পরিচিত এবং ৪র্থ স্ত্রী বারই রানীর মাজারটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সরুলিয়া গ্রামে অবস্থিত সেখানে রয়েছেন।

হযরত শাহ্ কামাল (রহ) এর ভক্তরা জটিল বিষয়ে নিস্পত্তির জন্য প্রায়ই বৌরানী জোড়া মাজারে উপস্থিত হয়ে সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা করে থাকেন।

জনশ্রুতি রয়েছে হযরত শাহ্ কামাল (রহঃ) ৪র্থ স্ত্রী বারই রাণীর বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে তার কারামতি অলৌকিক ঘটনা এলাকায় আজও শুনাযায়। তৎকালীন ইসলামপুর উপজেলার পার্থশী ইউনিয়নের মোজাআটা বারই পাড়া এলাকায় প্রভাবশালী হিন্দু জমিদারের বাড়িতে পূজার উপাসনা চলছিল হঠাৎ হযরত শাহ্ কামাল (রহ :) সেখানে উপস্থিত হন। পূজা অর্চনায় পূজারি দেবতাদের ভোগ দিচ্ছিলেন। সে সময় হযরত শাহ্ কামাল (রহ) পূজারীকে প্রশ্ন করলেন তুমি যে ভোগ দিচ্ছ কিন্তু দেবতারাতো তোমার ভোগ খাচ্ছে না?। এমন প্রশ্নের জবাবে পুজারীর পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন তাহলে তুমি খায়িয়ে দেখাও। কথিত আছে সেদিন নাকি তার নির্দেশে দেবতারা ভোগ খেয়েছিল। এ ঘটনার পর সেই বারইপাড়ার প্রভাবশালী হিন্দু জমিদারের একমাত্র মেয়ে বারই রানী তার কারামতি দেখে মুগ্ধ হয়ে পাগল বেশে তার পিছু ছুটেন। তাই তিনি বাধ্য হয়ে পরে তাকে সর্বশেষ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিলেন।

গণ ইতিবৃত্ত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে হযরত শাহ্ কামাল (রহঃ) কাগজপত্রে পর্যালোচনায় তাঁর তিন কন্যার নাম পরিচয় পাওয়া গেলেও কোন জীবিত ছেলে সন্তানের নাম কিংবা মাজার শরীফ আজও খোঁজে পাওয়া যায়নি। এ সম্পর্কে কারো কাছে তেমন কোন তথ্য নেই জানা। তাই ধারণা করা হয়ে থাকে হয়তো তিনি ছিলেন অপুত্রক।

এলাকার ৮০ বৎসর ঊর্ধ্ব বয়সীদের মাধ্যমে জানাজায়,ব্রিটিশ আমলে অর্থাৎ ১৯০৮ইং সন থেকে ১৯১২ইং সন পর্যন্ত তৎকালীন রংপুর সেটেলম্যান অফিসের অধীনে এ অঞ্চলে ক্যাটিস্টাল সার্ভে (সিএস রেকর্ড) ভূমি জরিপ হয়ে ছিল । সে সময়ের কাগজপত্র পর্যালোচনায় করে দেখা যায় হযরত শাহ্ কামাল (রহ :) তাঁর কোন পুত্র সন্তানের নামে ক্যাটিস্টাল সার্ভে (সিএস) ভূমি রেকর্ড না হলেও তার তিন কন্যা সন্তানের নামে ভূমি রেকর্ডে অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারা হলেন-নছিমুনন্নেছা, কছিমুন্নেছা ও আক্তারুন্নেছা। পিতা হযরত শাহ সুফি সৈয়্যাদ হজরত শাহ কামাল (রহ :) যা সিএস কাগজপত্রে রেকর্ডে পরিচয় মেলে। সেদিক থেকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মেয়েদের বার্ধক্যের বয়সে যদি ভূমি জরিপ হয়েও থাকে, তাহলে তাদের বয়সের চেয়ে সর্বোচ্চ একশ বৎসর পার্থক্য অর্থাৎ ১৮০০ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কিংবা মাঝামাঝি কোন এক সময় এই অঞ্চলে হযরত শাহ্ সুফি সৈয়্যাদ হজরত শাহ কামাল (রহ :) মহান এই সাধকের এ অঞ্চলে আগমন ঘটে ছিল বলে ধারণা করা যায়।

এই মহান সাধকের মাস ব্যাপী ওরস শরীফ চলাকালে কোন ক্রমেই যেন মাজারের পবিত্রতা নষ্ট না হয় এমনকি কোন প্রকার যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়। সে দিক বিবেচনা করে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসিসহ সুধী মহল।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আরও পড়ুন

ঝিনাইদহ–কালীগঞ্জ সড়কের ছোট ভাটপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

২ দিন আগে

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মনু নদের বেড়িবাঁধের মাটি ধসে রণ মালাকার (৪০) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের রণচাপ গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

৪ দিন আগে

ঝিনাইদহে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তামান্না ইয়াসমিন নামে এক মেডিকেল পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে।

৫ দিন আগে

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে আলুক্ষেতে পানি দিতে রাস্তার ওপর বিছানো পাইপ পিছলে ভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ভ্যান চালক ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

৫ দিন আগে