নির্বাচনের রোডম্যাপ জানতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধি দল

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তৈরি ধোঁয়াশা কাটিয়ে একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’য় গেছে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে তারা যমুনায় পৌঁছায়। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর সঙ্গে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

দলীয় সূত্র বলছে, আজকের বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ বৈঠকে সরকারের অবস্থান পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে চায় বিএনপি। যদি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট বার্তা মেলে, তবে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবে দলটি। অন্যথায় রাজনৈতিক কর্মসূচির পথে হাঁটার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা।

গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে বিএনপি মহাসচিব বলেছিলেন, "নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। আমরা সবসময় বলে আসছি—আলোচনা ও ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।"

সেদিনই তিনি চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন।

বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আগের বৈঠকেও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল যেন তিনি জাতির উদ্দেশে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং সরকারের বিভিন্ন স্তরে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিতদায়ক বক্তব্য নতুন করে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে কেউ যেন উল্টো পথে হাঁটতে না পারে। নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে, তা দেশের জন্য শুভ নয়।”

তিনি আরও বলেন, “যে গণতন্ত্রের জন্য এত প্রাণ গেছে, মানুষ আন্দোলন করেছে—সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? ডিসেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর মধ্যে কার স্বার্থ রয়েছে?”

সংবিধানবহির্ভূত নয়- এমন সব সংস্কার নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাহী আদেশ কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করে বিএনপি। নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধনের মতো বড় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে দলের অবস্থান।

তাদের দাবি, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং সংস্কার- দুটিই সমান্তরালভাবে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বিলম্বিত প্রক্রিয়ার নামে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেন ডিসেম্বর, কেউ বলেন জুন, আবার কেউ পাঁচ বছরের কথা বলেন। এক উপদেষ্টা বলেন, তারা নির্বাচিত। অন্যজন বলেন, গণতন্ত্র থেকেই ফ্যাসিবাদ আসে। এই বিপরীতমুখী বার্তাগুলো জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে।”

তিনি যোগ করেন, “আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে একটি স্পষ্ট অবস্থান জানতে চেয়েই আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছি।”

বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বিএনপি। এর আগে ২৩ মার্চ দলটি কমিশনে তাদের সংস্কার-সম্পর্কিত মতামত জমা দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ৬ মার্চ কমিশনের পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাবনা এবং মোট ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ছক আকারে মতামত পাঠানো হয়েছিল।

বর্তমানে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছে। যদি আজকের বৈঠক থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি না পাওয়া যায়, তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করে ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিএনপি নিয়ে আরও পড়ুন

যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বেশকিছু কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়

৬ ঘণ্টা আগে

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন। সেই হরতালের সমর্থনের মিছিল থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে

৭ ঘণ্টা আগে

সম্প্রতি ঘোষিত নকলা উপজেলা সমন্বয় কমিটি অযোগ্য, অনাদর্শিক ও সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য প্রধান সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে গঠিত হওয়ায় তারা কমিটি প্রত্যাখান করছেন। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন

৯ ঘণ্টা আগে