রাজসিকভাবেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান

আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ১৬
Thumbnail image

বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানই এখন প্রধান নেতা। আগামী নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই দলটি নির্বাচন করবে এবং ধারণা করা হচ্ছে দল ক্ষমতায় এলে তিনিই হবেন বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এতদিনেও কেন তারেক রহমান দেশে ফিরছেন না, সেটি নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি এতদিনেও দেশে না ফেরায় জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দেশে ফিরতে কোনো আইনি বাধা না থাকলেও তার নিরাপত্তা একটি বড়ো বিষয়। সরকারসহ বিভিন্ন মহল মনে করে, সামনের নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে তারেক রহমানই হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাই এমন একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ জটিল।

দ্বিতীয়ত, বিএনপি চাইছে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন যেন রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর সময়ে হয়। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে তার ফিরে আসাটা দলের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। এছাড়াও, চলমান বর্ষা মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাকে বড়ো ধরনের গণসংবর্ধনার প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটতে পারে বলেও মনে করছেন বিএনপির নেতা কর্মীরা।

আগে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেছেন, তারেক রহমান সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই দেশে ফিরবেন। মামলা সংক্রান্ত যে-সব আইনি জটিলতা আছে সেগুলো কেটে গেলে তিনি মাতৃভূমিতে পদার্পণ করবেন।

কিন্তু আইনি এবং রাজনৈতিক সকল বাধা দূর হলেও দীর্ঘ প্রায় সতেরো বছর দেশের বাইরে থাকা তারেক রহমান কবে দেশে ফিরবেন, এ বিষয়ে এখনও সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বা পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়নি।

দলীয় সূত্র এবং তার ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরেই আগামী নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন। সেই হিসেবে ২০২৫ সালের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের ফিরবেন, এমন ধারণাই দেওয়া হচ্ছে।

তবে পাঁচই অগাস্টের পর থেকেই রাজনৈতিকভাবেও সমগ্র বাংলাদেশে বিএনপির আধিপত্য দৃশ্যমান। এ অবস্থায় তিনি বাংলাদেশে আসছেন না কেন, তাহলে কি তারেক রহমানের নিরাপত্তার ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রশ্নে হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ওনার মতো লিডারের সিকিউরিটি কনসার্ন (নিরাপত্তার উদ্বেগ) স্বাভাবিকভাবে আছেই। এটা এশিয়া মহাদেশের রাজনীতিতে নাথিং নিউ। পলিটিক্স ইন দ্য এশিয়া প্যাসিফিক অর সাউথ এশিয়া এনি হোয়্যার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড এই ধরনের সিনিয়র পলিটিক্যাল লিডারের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়তো আছেই।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা আসার পর তারেক রহমান গ্রেপ্তার হন এবং ২০০৮ সালে তিনি লন্ডনে যান। পরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা প্রয়াত মওদুদ আহমদ তাঁর 'কারাগারে কেমন ছিলাম (২০০৭-২০০৮)' বইতে লিখেছেন, "এমনও হতে পারে তিনি (খালেদা জিয়া) জেনারেলদের সাথে এই সমঝোতা করেছিলেন যে, তারেক রহমান আপাতত নিজেকে রাজনীতিতে জড়াবেন না এবং এ মর্মে তারেক রহমান কোনো সম্মতিপত্রে স্বাক্ষরও দিয়ে থাকতে পারেন।" "যে সময় তিনি (তারেক রহমান) গিয়েছিলেন সেসময়তো তাকে জোর করে পাঠানো হয়েছিল। আর চিকিৎসাও একটা লক্ষ্য ছিল।"

আমাদের দেশের রাজনীতিটা হচ্ছে প্রতিহিংসাপরায়ণতায় ভরা। তার প্রতি যে আচরণ সে সময় করা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ইনভলভ ছিল। তারা হয়ত ভাবতে পারে তারেক ফিরে এলে তিনি যদি প্রতিশোধ নেন। তো এরকম একটা চিন্তা থাকতে পারে। কারণ আমাদের রাজনীতিতে এটা হরদম চলছে" বলে মন্তব্য করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ। মি. আহমদের ভাষায়, ওনার আসাটাও হয়ত আমার মনে হয় নির্বাচনি শোডাউনের একটা পার্ট হবে। হয়ত সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আসবেন। কারণ শোনা যাচ্ছে উনি আসলে লাখ লাখ লোক এয়ারপোর্টে আসবেন। হয়ত এরকম একটা পরিকল্পনা আছে উনি ওইভাবে আসবেন।

"উনি তখনই আসবেন যখন ওনার দলের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হবেন এবং তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এরকম একটা নিশ্চয়তা হলে তিনি আসবেন।

"দেখা গেল একটা ইলেকশন হলো বিএনপি ভালো করতে পারলো না বা তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারলেন না তাহলে উনি এই আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে আসবেন কেন। সেটাও উনি হিসাব করতে পারেন" মনে করেন মি.আহমদ।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক জানান, যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশে ফিরলে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সূচি নির্ধারণ হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মহাসচিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরলে তার কাছে অনেক বার্তা থাকবে। তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানাবেন কবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফিরবেন।’

গত বছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই শুরু হয় তারেক রহমানের দেশে ফেরার আলোচনা। তবে সেটি ছাপিয়ে বড়ো দায়িত্ব ছিল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। চিকিৎসা শেষে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরে আসেন। অনেকেই আশা করেছিলেন, তারেক রহমান হয়ত তার সঙ্গেই দেশে ফিরবেন। এমনকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান দেশে ফিরলেও তারেক রহমান ফেরেননি। ফলে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে : কেন ফিরছেন না তিনি? এরপর আবার শুরু হয় জল্পনা, কবে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান?

তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে। তার প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে যে প্রত্যাশা ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। ২০২৫ সালের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের ফিরবেন, এমন ধারণাই দেওয়া হচ্ছে দল থেকে। তার আগমন ঘিরে দলীয়ভাবে বিভিন্ন প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন আলোচনা বা গুঞ্জন চলছে। যদিও তারেক রহমান ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন, সে বিষয়ে ঢাকায় বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তবে তারা বলছেন, শিগ্‌গিরই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে, তার নিরাপত্তা এবং দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তারেক রহমান কবে ফিরবেন, সেই দিনটির জন্যই এখন অপেক্ষা করছে সারাদেশ।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিএনপি নিয়ে আরও পড়ুন

বর্তমান সময়ে ইসলামের নামে নানান অপব্যাখ্যা দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করছে।ভূল তথ্য দিয়ে মানুষের মাঝে সংঘাত,বৈষম্য সৃষ্টি করছে এ ব্যাপারে আলেমরা তাদের বক্তব্যে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান

১৫ ঘণ্টা আগে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রায় এক ডজন এনসিপির নেতৃবৃন্দ। তারা নিজ নিজ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাপাপাশি কেন্দ্রেও চালাচ্ছেন জোর লবিং

১৫ ঘণ্টা আগে

সনদের পুরোপুরি বাস্তবায়ন এ সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, আগামী সরকারকে বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে। সংস্কার এবং বিচারের ট্যাবলেট খাওয়ালো সরকার

১৬ ঘণ্টা আগে

পিআর মানে ‘পার্মানেন্ট রেস্টলেসনেস’। এ ব্যবস্থায় স্থিতিশীল সরকার থাকে না, কয়েক মাস পরপর প্রধানমন্ত্রী ও সরকার পরিবর্তিত হয়। এতে কোনো দল জনগণের কাছে দেওয়া অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে না, উন্নয়নও ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রকে এমন অস্থিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া সম্ভব নয়

১৭ ঘণ্টা আগে