মোঃ ফারুকুজ্জামান
বর্ষার প্রথম সকালে কিশোরগঞ্জ শহর যেন এক অপূর্ব স্নিগ্ধতায় ঢেকে ছিল। ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের নিস্তরঙ্গ প্রাঙ্গণে তখনো ঘুমিয়ে ছিল প্রকৃতি। টাটকা বৃষ্টির পানিতে মাঠ ভিজে সিক্ত, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কাঁচা মাটির ঘ্রাণ। এমন শান্ত সকালে ঠিক ৯টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎই নিস্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় এক আকর্ষণীয় ডাক- “কোয়াক, কোয়াক”- যা যেন জানিয়ে দেয়, প্রকৃতি জেগে উঠেছে বর্ষার আহ্বানে।
প্রথমে যেন মনে হয় কোনো শিশুর খেলা বা দূরের কোনো শব্দ। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই স্পষ্ট হয়- এটি এক প্রজাতির ব্যাঙের ডাক। আর এই ডাক মুহূর্তেই প্রকৃতিপ্রেমী মনে কাঁপন ধরায়।
স্থানীয়ভাবে যাকে গতা ব্যাঙ বলা হয়, সেই কোলা ব্যাঙের দেখা মেলে কলেজ মাঠে। চোখে পড়ে কয়েকটি সোনালী হলদে চামড়ার ব্যাঙ- প্রজনন মৌসুমের উত্তেজনায় লাফিয়ে বেড়াচ্ছে ভেজা ঘাসের ওপর। কারও কারও গালের পাশে ফুলকা দ্রুত ওঠানামা করছে, যেন হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
ব্যাঙের ডাক শুনে যারপরনাই আনন্দিত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনেকে মোবাইল ক্যামেরা হাতে ছুটে যান সেসব ব্যাঙের ছবি তুলতে। এখনকার দিনে কোলা ব্যাঙ খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণও স্পষ্ট-জলাশয় ভরাট, পরিবেশ দূষণ এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস।
ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রমজান হোসেন বলেন,
“শহরের জলাধারগুলো আজ অনেকটাই নিশ্চিহ্ন। যেগুলো আছে, সেগুলোও দূষিত। ফলে ব্যাঙদের জন্য প্রজনন উপযোগী পরিবেশ খুব কমই পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কলেজ মাঠে জমে থাকা পরিষ্কার বৃষ্টির পানি এবং নিরাপদ পরিবেশ এদের টানছে। তাদের ডাক আর বিচরণ আমাদের সবাইকে বিমোহিত করেছে।”
প্রকৃতিবিদদের মতে, ব্যাঙ শুধু উভচর প্রাণী নয়, বরং প্রকৃতির এক সংবেদনশীল বার্তাবাহক। অনেক সময় দুর্যোগ, বিশেষ করে ভূমিকম্পের আগাম সংকেত দিতে এদের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোলা, কুনো, কটকটি, চামড়াঝোলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ব্যাঙদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পালন করা হয় “বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস”। আমাদের লোকজ সংস্কৃতিতেও রয়েছে ব্যাঙের অস্তিত্ব- রূপকথা, ছড়া, গল্প এমনকি সাহিত্যের পাতায় পাতায়।
কোলা ব্যাঙের ডাকটি মূলত পুরুষ ব্যাঙের প্রেমের ডাক। মে-জুন মাস হলো এদের ব্রিডিং সিজন। বৃষ্টি হলে সকালের সময়টাই এদের সবচেয়ে সক্রিয়। পুরুষ ব্যাঙ এ সময় ডাকে নারী ব্যাঙকে আকৃষ্ট করতে। ডাকের মধ্যেই থাকে আকুতি, আকর্ষণ আর টিকে থাকার লড়াই।
শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাট, ইট-পাথরের দালান আর জমি ভরাটের ভিড়ে এমন ব্যাঙের দেখা পাওয়া এখন দুর্লভ। তাই কিশোরগঞ্জের এক কলেজ মাঠে বর্ষার শুরুতেই কোলা ব্যাঙের ডাক যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস- এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি।
এই ব্যাঙের পা উন্নত দেশগুলোতে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ফলে বাণিজ্যিকভাবে একসময় মানুষ এদের ধরতে শুরু করে। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ থেকে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে এমন দুর্লভ প্রজাতি।
ব্যাঙ শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নয়, বরং প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগে সংরক্ষণের দাবি রাখে। কোলা ব্যাঙের এই ফিরে আসা যেন এক সতর্ক বার্তা ও ভালোবাসার অনুরণন হয়ে ধরা দেয়- প্রকৃতিকে রক্ষা করুন, তাহলেই প্রকৃতি ফিরিয়ে দেবে তার সুর, তার প্রাণ।
বর্ষার প্রথম সকালে কিশোরগঞ্জ শহর যেন এক অপূর্ব স্নিগ্ধতায় ঢেকে ছিল। ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের নিস্তরঙ্গ প্রাঙ্গণে তখনো ঘুমিয়ে ছিল প্রকৃতি। টাটকা বৃষ্টির পানিতে মাঠ ভিজে সিক্ত, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কাঁচা মাটির ঘ্রাণ। এমন শান্ত সকালে ঠিক ৯টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎই নিস্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় এক আকর্ষণীয় ডাক- “কোয়াক, কোয়াক”- যা যেন জানিয়ে দেয়, প্রকৃতি জেগে উঠেছে বর্ষার আহ্বানে।
প্রথমে যেন মনে হয় কোনো শিশুর খেলা বা দূরের কোনো শব্দ। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই স্পষ্ট হয়- এটি এক প্রজাতির ব্যাঙের ডাক। আর এই ডাক মুহূর্তেই প্রকৃতিপ্রেমী মনে কাঁপন ধরায়।
স্থানীয়ভাবে যাকে গতা ব্যাঙ বলা হয়, সেই কোলা ব্যাঙের দেখা মেলে কলেজ মাঠে। চোখে পড়ে কয়েকটি সোনালী হলদে চামড়ার ব্যাঙ- প্রজনন মৌসুমের উত্তেজনায় লাফিয়ে বেড়াচ্ছে ভেজা ঘাসের ওপর। কারও কারও গালের পাশে ফুলকা দ্রুত ওঠানামা করছে, যেন হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।
ব্যাঙের ডাক শুনে যারপরনাই আনন্দিত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনেকে মোবাইল ক্যামেরা হাতে ছুটে যান সেসব ব্যাঙের ছবি তুলতে। এখনকার দিনে কোলা ব্যাঙ খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণও স্পষ্ট-জলাশয় ভরাট, পরিবেশ দূষণ এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান ধ্বংস।
ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রমজান হোসেন বলেন,
“শহরের জলাধারগুলো আজ অনেকটাই নিশ্চিহ্ন। যেগুলো আছে, সেগুলোও দূষিত। ফলে ব্যাঙদের জন্য প্রজনন উপযোগী পরিবেশ খুব কমই পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কলেজ মাঠে জমে থাকা পরিষ্কার বৃষ্টির পানি এবং নিরাপদ পরিবেশ এদের টানছে। তাদের ডাক আর বিচরণ আমাদের সবাইকে বিমোহিত করেছে।”
প্রকৃতিবিদদের মতে, ব্যাঙ শুধু উভচর প্রাণী নয়, বরং প্রকৃতির এক সংবেদনশীল বার্তাবাহক। অনেক সময় দুর্যোগ, বিশেষ করে ভূমিকম্পের আগাম সংকেত দিতে এদের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ করা যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোলা, কুনো, কটকটি, চামড়াঝোলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ব্যাঙদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পালন করা হয় “বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস”। আমাদের লোকজ সংস্কৃতিতেও রয়েছে ব্যাঙের অস্তিত্ব- রূপকথা, ছড়া, গল্প এমনকি সাহিত্যের পাতায় পাতায়।
কোলা ব্যাঙের ডাকটি মূলত পুরুষ ব্যাঙের প্রেমের ডাক। মে-জুন মাস হলো এদের ব্রিডিং সিজন। বৃষ্টি হলে সকালের সময়টাই এদের সবচেয়ে সক্রিয়। পুরুষ ব্যাঙ এ সময় ডাকে নারী ব্যাঙকে আকৃষ্ট করতে। ডাকের মধ্যেই থাকে আকুতি, আকর্ষণ আর টিকে থাকার লড়াই।
শহরের ব্যস্ত রাস্তাঘাট, ইট-পাথরের দালান আর জমি ভরাটের ভিড়ে এমন ব্যাঙের দেখা পাওয়া এখন দুর্লভ। তাই কিশোরগঞ্জের এক কলেজ মাঠে বর্ষার শুরুতেই কোলা ব্যাঙের ডাক যেন এক স্বস্তির নিঃশ্বাস- এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি।
এই ব্যাঙের পা উন্নত দেশগুলোতে সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ফলে বাণিজ্যিকভাবে একসময় মানুষ এদের ধরতে শুরু করে। তারই ফলশ্রুতিতে আমাদের আশেপাশের পরিবেশ থেকে একে একে হারিয়ে যাচ্ছে এমন দুর্লভ প্রজাতি।
ব্যাঙ শুধু পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য নয়, বরং প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে আমাদের সবার সম্মিলিত উদ্যোগে সংরক্ষণের দাবি রাখে। কোলা ব্যাঙের এই ফিরে আসা যেন এক সতর্ক বার্তা ও ভালোবাসার অনুরণন হয়ে ধরা দেয়- প্রকৃতিকে রক্ষা করুন, তাহলেই প্রকৃতি ফিরিয়ে দেবে তার সুর, তার প্রাণ।