এক মাস ধরে পানির নিচে ঝুলন্ত সেতু, পর্যটনশিল্পে চরম মন্দা

প্রতিনিধি
রাঙামাটি
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

রাঙামাটির পর্যটনশিল্পে চলছে গভীর মন্দা। বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় এক মাস ধরে সম্পূর্ণ ডুবে আছে জেলার প্রধান আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। এতে পর্যটনকেন্দ্রটি বর্তমানে পর্যটকশূন্য এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেলগুলো বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে।

পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঝুলন্ত সেতুতে এখন প্রবেশ নিষিদ্ধ। যারা দূর-দূরান্ত থেকে এই সেতু দেখতে আসছেন, তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এটি ঝুঁকিপূর্ণও হয়ে উঠেছে। শুধু ঝুলন্ত সেতু নয়, এর প্রভাবে জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও দর্শনার্থীদের আনাগোনা কমে গেছে। ফলে ঘাটে বাঁধা পড়ে আছে অসংখ্য পর্যটকবাহী বোট, কমেছে হোটেল বুকিং এবং টেক্সটাইল ব্যবসায়ীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

১৯৮৬ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এই ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে, যা পরে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর থেকেই বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের উচ্চ পানি প্রবাহের কারণে এটি নিয়মিতভাবে তলিয়ে যেতে শুরু করে। কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়াই এর প্রধান কারণ। তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ জুলাই থেকে সেতুটি পানির নিচে রয়েছে এবং ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এটি দুই ফুট পানিতে তলিয়ে ছিল। সাধারণত, প্রতি বছর বর্ষায় প্রায় তিন মাস পর্যন্ত এই সেতু ডুবে থাকে।

কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের তথ্যমতে, কাপ্তাই বাঁধের মাধ্যমে ১৯৬২ সালে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। হ্রদে পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল হলেও, ১০৫ এমএসএল অতিক্রম করলেই ঝুলন্ত সেতু ডুবে যায়। কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল।

কুমিল্লা থেকে আসা আরমান হোসেন হতাশা প্রকাশ করে জানান, ‘প্রবেশ ফি নিলেও এখানে দেখার কিছুই নেই। ডুবন্ত সেতু দেখতেও টাকা দিতে হচ্ছে। বোট দিয়ে ওপারে যেতেও ভাড়া দিতে হয়, যা ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।’ ঢাকা থেকে আসা মো. ফাহিম আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখানে আসার আগ পর্যন্ত জানতাম না সেতু ডুবে আছে। জানলে তো আসতাম না। তেমন পর্যটকও নেই। এসে হতাশ হলাম।’ স্থানীয় বাসিন্দা সমীর চাকমাও জানান, তার ঢাকা থেকে আসা বন্ধুরা সেতু ডুবে যাওয়ায় হতাশ হয়েছেন।

রাঙামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা কামাল উদ্দিন বলেছেন, একসময় শুধু শীতকালে পর্যটকরা আসতেন, কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুমেও রাঙামাটির ঝরনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। ঝুলন্ত সেতু ডুবে থাকার কারণে পর্যটকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তিনি পর্যটনশিল্পকে বাঁচাতে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন, অন্যথায় পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যাবেন এবং ভবিষ্যতে আর রাঙামাটিতে আসতে চাইবেন না।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক অলোক বিকাশ চাকমা জানিয়েছেন, সেতুটি প্রতি বছর বর্ষায় ডুবে যায় এবং এই সময়ে প্রতি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আয় বন্ধ থাকে। সেতুটি যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তাই এটিকে আরও উঁচুতে উঠানোর চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে এবং তারা ব্যবস্থা নেবেন।

প্রবেশ ফি সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমানে ডুবন্ত সেতুর জন্য কোনো ফি নেওয়া হচ্ছে না, বরং টিকিটটি ইকোপার্কের জন্য, যা সেতুর গেট থেকে সংগ্রহ করতে হয়।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেছেন, প্রতি বছর বর্ষায় সেতু ডুবে যাওয়া সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আধুনিকভাবে নতুন সেতু নির্মাণের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, প্রস্তাব অনুমোদন পেলে আধুনিক একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মিত হবে, যা রাঙামাটির পর্যটনকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে আটক করা ৯ বাংলাদেশি নাগরিককে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। পরে তাঁদের মহেশপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

৯ ঘণ্টা আগে

কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার বহু ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় বিভিন্ন মৌসুমে গ্রামে-গঞ্জে নানা খেলাধুলার আয়োজন হতো, যার অধিকাংশই এখন আর দেখা যায় না।

১০ ঘণ্টা আগে

রাঙামাটির পর্যটনশিল্পে চলছে গভীর মন্দা। বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় এক মাস ধরে সম্পূর্ণ ডুবে আছে জেলার প্রধান আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু। এতে পর্যটনকেন্দ্রটি বর্তমানে পর্যটকশূন্য এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেলগুলো বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে।

১০ ঘণ্টা আগে

অবশেষে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত— কমিটির কাছে জেলা পরিষদের কার্যালয়ে হাজিরা দিয়েছেন দুর্নীতির দায়ে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিরোনা ত্রিপুরা। সে সাথে অনাস্থা ভোটে ১৪-০১ ভোটে পারজিত হয়েছেন তিনি।

১৩ ঘণ্টা আগে