রাতের আঁধারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) আন্তর্জাতিক আইন না মেনে সাতক্ষীরার কুশখালি , খাগড়াখড়ির রাঙ্গামাটি ও ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে নারী ও শিশুসহ ৩০ জন বাংলাদেশিকে পুশ-ইন করেছে।

এর মধ্যে সাতক্ষীরার কুশখালি সীমান্ত দিয়ে চারজন নারী ও দুইজন পুরুষকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শিশু সহ ১৩ জনকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্ত ও বাকি ১১ জনকে ফেনির ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইন করা হয়।

সাতক্ষীরা জেলার কুশখালি সীমান্তে পুশইন করা ব্যক্তিদেরেকে বিজিবি রাতে সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর থানায় বিজিবির থেকে পাওয়া সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশি এইসব নাগরিকরা বিভিন্ন সময়ে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যায়।

তারা ভারতের বোম্বে নগরীতে কেউ গৃহকর্মী, কেউ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

ভারতীয় পুলিশ তাদের বোম্বে এলাকা থেকে আটক করে পশ্চিমবাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে পুশইন করে।

বুধবার রাত ৮ টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্তের টহল বিজিবি তাদের আটক করে সাতক্ষীরা সদর থানায় সোপর্দ করে।

আটককৃতদের মধ্যে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের মুন্সি নজরুল হকের ছেলে আবু সাঈদ মুন্সি। সে ৬ বছর আগে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়ে কাজের সন্ধানে ভারতের বম্বে যায়।

রংপুরের মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা নাজিম উদ্দীনের ছেলে ওয়াজ কুরুনী দুই বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের বম্বে কৃষিকাজ করতো।

নারায়ণগঞ্জের কদমতলী গ্রামের মোঃ মাসুদের স্ত্রী রোকসানা বেগম কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতের বম্বে কাজের সন্ধানে গিয়েছিল।

একইভাবে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাঘআছড়া গ্রামের কোরবান আলীর স্ত্রী সাবরিনা খাতুন পাঁচ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভারতের বোম্বে যায়।

একই উপজেলার সনাতনকাটি গ্রামের ইব্রাহীম সরদারের মেয়ে মোছাঃ হাফিজা বেগম এক বছর ২ মাস আগে কাজের সন্ধানে গিয়েছিল ভারতের বোম্বে।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের ওমর আলীর স্ত্রী রোকসানা খাতুন ৬ বছর আগে বোম্বে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলো বলে বিজিবির কাছে স্বীকার করেছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) শামিনুল হক জানান,“ বিজিবির সোপর্দ করা পুশইনের ওই ৬ জনকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে”।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুসহ আরো ১৩ জনকে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।

বৃহস্পতিবার ভোর রাতে এদেরকে পুশইন করার পর আটক করে তানাক্কাপাড়া পাড়াকেন্দ্রে বিজিবির হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৭ মে থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ১শ ৫৯ জনকে বিএসএফ বাংলাদেশে পুশইন করেছে।

পুশইনকৃতরা জানান,তারা ১২ বছর যাবত ভারতে মহারাষ্ট্র রাজ্যে বসবাস করে আসছে। সেখানে তারা ইটের ভাটায় কাজ করতেন। গত ১৩ জুন তাদের মহারাষ্ট্র থেকে আটক করে চোখ-হাত বেধে বিমানযোগে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে দক্ষিণ ত্রিপুরায় নিয়ে এসে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে জোরপূর্বক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, পুশইনকৃতরা কোন দেশের নাগরিক যাচাই-বাছাই চলছে।

এদিকে বুধবার দিনগত রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার যশপুর সীমান্তে ১১ জনকে পুশইন করার ঘটনা ঘটে। পুশইনকৃতদের মধ্যে একজন পুরুষ, সাতজন নারী এবং তিনজন শিশু রয়েছে। তারা সবাই যশোর, নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাত আনুমানিক ২টার দিকে ছাগলনাইয়ার যশপুর বিওপির মটুয়া ২১৯১ নম্বর পিলার দিয়ে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগে বিএসএফ এসব বাংলাদেশি নাগরিককে পুশইন করে। পরে তাদের বিজিবি আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়, তারা দালালের মাধ্যমে চোরাইপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে এবং সেখানে গৃহকর্মসহ বিভিন্ন পেশায় কাজ করছিলেন। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে পরে বাংলাদেশ সীমান্তে পুশইন করে।

ফেনীস্থ ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত বাংলাদেশি নাগরিকদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে থানায় হস্তান্তর করা হবে।

এ ঘটনায় সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।