দুর্গাপূজার আনন্দ ঢেকে দিয়েছে উচ্ছেদের ভয়

প্রতিনিধি
বরিশাল
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

‘এবার দুর্গাপুজোয় আনন্দ নাই, শুধু ভয়’-কথাগুলো বলার সময় কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল বেণুরানীর।

সত্তরোর্ধ্ব এই নারী জানালেন, জন্ম, বিয়ে, সংসার-সবই কেটেছে বরিশালের সুইপার কলোনিতেই।

শত বছরের ভিটেমাটি থেকে হঠাৎ উচ্ছেদের আতঙ্কে এখন তাদের রাতের ঘুম উধাও।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এই সুইপার কলোনিতে তিন দশকের বেশি হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো বসবাস করে আসছে।

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নগরের পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসা মানুষগুলোই আজ নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত।

হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর অভিযোগ, দুর্গাপুজোর পর যে কোনো সময় কলোনি থেকে সরে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কলোনির ভেতর এখন নেই পুজোর আনন্দ।

বেণুরানী বললেন, ‘আমাদের এবারের দুর্গাপুজোয় কোনো আনন্দ নাই। শুধু আতঙ্ক-কখন যে শত বছরের ঘর থেকে উচ্ছেদ হতে হয়।’

উচ্ছেদের মৌখিক নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আতঙ্কগ্রস্ত পরিবারগুলো নগর ভবনে গিয়ে প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

স্মারকলিপি প্রদানকারীদের একজন মুনু লাল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন সুইপার কলোনিতে থেকে যেতে পারি-এই আবেদন জানিয়েছি।

প্রশাসকের পিএ স্মারকলিপি নিয়েছেন। এখন আশা করছি কর্তৃপক্ষ আমাদের কথা ভাববে।’

স্মারকলিপি নিয়ে এসেছিলেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধা বীনা রানী। কথা বলতে গিয়ে যেন তিনি হতবাক।

তবুও বলছিলেন, ‘কয়েক পুরুষ ধরে আমরা এখানে আছি। জন্মও এখানে, বিয়েও এখানে। হঠাৎ সিটি কর্পোরেশনের এত আক্রোশ কেন-আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা করপোরেশনের কাজ করি। শহর পরিষ্কার রাখি। মাথা গোজার ঠাইটুকু হারালো কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কলোনির উচ্ছেদ-চাপের পেছনে রয়েছে বাণিজ্যিক স্বার্থ। কাঠপট্টি এলাকার জমির দাম হু হু করে বেড়েছে।

প্রভাবশালীরা এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করতে চায়। তাই সিটি কর্পোরেশনকে চাপ দিয়ে সুইপারদের সরানোর উদ্যোগ চলছে।

টাকার প্রভাবে হয়তো হরিজনদের কলোনি ছেড়ে পথেই দাঁড়াতে হবে।

ঝর্ণা লাল নামের এক সুইপার বলেন, ‘আমরা যে বেতন পাই, তা দিয়ে বাইরে ভাড়া করে থাকা সম্ভব নয়। এই কারণেই একসময় মিউনিসিপ্যালিটির উদ্যোগে কলোনিগুলো তৈরি হয়েছিল। এখন জায়গার দাম বাড়ায় প্রভাবশালীদের চোখ পড়েছে। তারাই নেপথ্যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পাঁয়তারা করছেন।’

৭৫ বছর বয়সী মুন্না লালের কণ্ঠে ক্ষোভ ও দুঃখ মেশানো। মাথা নীচু করে ক্ষীনস্বরে বললেন, ‘আমরা যুগ যুগ ধরে নগরবাসীকে সেবা দিচ্ছি। এখন আমাদেরই উচ্ছেদ করা হবে! এটা কেমন বিচার?’

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি উত্তম কুমার ভক্ত বলেন, হরিজনরা সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ। অতি সামান্য বেতনে নগর পরিষ্কার রাখে তারাই। অথচ তাদেরই ভিটেমাটি থেকে সরানোর উদ্যোগ চলছে। ঢাকার মিরেন জল্লা সুইপার কলোনিতেও একসময় এমন প্রচেষ্টা হয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে তা বন্ধ হয়। আমরাও সেই পথে হাটবো।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী অবশ্য দাবি করেছেন, এখনো হরিজন সম্প্রদায়ের উচ্ছেদ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁর ভাষায়, ‘কারা ওই কলোনিতে আছেন, সেই তালিকা জানতে চাওয়া হয়েছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জেলা নিয়ে আরও পড়ুন

হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর অভিযোগ, দুর্গাপুজোর পর যে কোনো সময় কলোনি থেকে সরে যাওয়ার জন্য মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কলোনির ভেতর এখন নেই পুজোর আনন্দ

৩ ঘণ্টা আগে

এসময় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন ফ্রন্ট, সৈয়দপুর হিন্দু কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দ ৯৮ বছরের পুরোনো সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপের ইতিহাস তুলে ধরে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের কাছে জানান

৩ ঘণ্টা আগে

ঐতিহ্যবাহী বাফলার বিল কচুরিপানায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ায় উপজেলা প্রশাসন ও ওয়ার্ড ভিশনের উদ্যোগে কচুরিপানা অপসারণ শুরু করেছে

৩ ঘণ্টা আগে

জনসাধারণের চলাচলের রাস্তার জায়গা দখল করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যবসা পরিচালনার অপরাধে খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দুই ব্যবসায়ীকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর আওতায় ৪ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়

৩ ঘণ্টা আগে