সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসার নামে হচ্ছেটা কী!

প্রতিনিধি
নীলফামারী
Thumbnail image
ছবি : প্রতিনিধি

নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে টিকিট বাণিজ্যসহ রোগ নির্ণয় পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে রোগীপ্রতি টিকিটের মূল্য তিন টাকা নির্ধারিত হলেও আদায় করা হচ্ছে পাঁচ থেকে দশ টাকা। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে দুর্ব্যবহারের শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এছাড়া, রোগ নির্ণয়ের কোনো উপাদান বা ডায়াগনস্টিক টুলস সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকলেও নিজেরাই বাইরে থেকে কিনে ইচ্ছে মতো ফি আদায়ে করা হচ্ছে। এভাবে রোগীর পকেট কেটে বছরে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এমনকি একে ওপর দায় চাপাচ্ছেন স্বাস্থ্য, পরিবার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সিভিল সার্জন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগীরা টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখান গড়ে ২৫০ জনের ওপরে। মাসে গড়ে হয় ৬ হাজার রোগী। সেই হিসেবে গত এক বছরে প্রায় ৭২ হাজার জন রোগী চিকিৎসক দেখান। প্রতি রোগী থেকে অতিরিক্ত ২ থেকে ৭ টাকা করে বেশি নিলে কয়েক লাখ টাকা বেশি নিচ্ছেন রোগীদের কাছ থেকে। এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে রোগ নির্ণয়ের কোনো উপদান সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় রোগ পরীক্ষা বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু, হাসপাতালের রোগ নির্ণায়ক কর্মকর্তা আল-আমিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অমিতাভ রায় নিজের টাকায় বাইরে থেকে নিম্নমানের রোগ নির্ণয়ের উপদান কিনে রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো ফি আদায় করছেন। অথচ রোগীদের দেওয়া হচ্ছে না কোনো রশিদ।

রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আতিকা আঞ্জুম চৌধুরী, স্টাফ নার্স অমিতাভ রায়, রোগ নির্ণায়ক কর্মকর্তা আল-আমিন ও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভাগাভাগি করে নেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী।

ছবি : প্রতিনিধি
ছবি : প্রতিনিধি

সরেজমিনে বহির্বিভাগে কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মাসিস্ট আতিকা আঞ্জুম চৌধুরী টিকিট বিক্রি করছেন। তিনি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। কেউ দুই টাকা দিলে টাকা ফেলে ফেরত দিচ্ছেন। পরে রোগীরা বাধ্য হয়ে তার চাহিদা মতো টাকা দিচ্ছেন।

উপজেলার সাহেবপাড়া থেকে আসা আনোয়ারী বেগম বলেন, আমি কাউন্টারে এসে টিকিট চাইলে ৫ টাকা দাবি করেন কাউন্টারে থাকা আতিকা আঞ্জুম। তিন টাকার কথা বললে তিনি আমাকে লাইনের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং বলেন, বেশি কথা বললে টিকিট দেব না। পরে তিনি ৫ টাকা দিয়েই টিকিট কাটেন।

সেবা নিতে আসা একাধিক রোগীদের অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে সেবার মান ভালো না। টিকিটের দাম ৩ টাকা। কাউন্টার থেকে নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা পর্যন্ত। অথচ খুচরা দিলেও পাঁচ টাকা নেওয়া হচ্ছে। প্যাথলজি পরীক্ষার জন্য টাকা নিলেও দেওয়া হচ্ছে না রশিদ।

এসব অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা আতিকা আঞ্জম চৌধুরী বলেন,

হাসপাতালে লোকবল সংকট। কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই কাউন্টারে বসেছেন। বাড়তি কাজ করি। হাতা ধোয়ার সাবান, ঝাড় তাওয়াল কেনা টাকা অফিস থেকে দেওয়া হয় না। এসব কারণে তিনি বাড়তি কিছু টাকা নেন। এটি অফিসের সকলেই জানেন।

এদিকে অভিযোগ স্বীকার করে হাসপাতালের রোগ নির্ণায়ক কর্মকর্তা আল-আমিন ও সিনিয়র স্টাফ নার্স অমিতাভ রায় বলেন,

দীর্ঘদিন থেকে রক্ত, ডায়াবেটিস, আরবিএস, এফবিএস ও প্রস্রাব পরীক্ষার জন্য কোনো উপদান আসছে না। রোগীর সেবা কথা চিন্তা করে, তারা বাইরে থেকে উপাদান বা ডায়াগনস্টিক টুলস কিনে এনে এসব রোগ পরীক্ষা করছেন। এতে যা লাভ আসে মিলে-মিশে ভাগ করে নেন। তবে এ সময় তিনি রোগীদের কোনো রেজিস্টার এবং ফি আদায়ের রশিদ দেখাতে পারেননি।

সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোছা. শামসুন নাহার বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রটি তার দেখভাল করার কথা, তা তিনি জানেন না। এ সময় তার অধিনস্থ কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি শুনে তৎপর হওয়া অভিনয় করেন। অথচ তিনি সব জানেন এবং তার নির্দেশেই এসব অনিয়ম জানালেন নাম প্রকাশে একাধিক কর্মচারী।

নীলফামারী সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি যোগদানের পর খুব একটা সেখানে যাননি। ব্যস্ততার কারণে এসব কিছু তার আড়ালে থেকে গেছে। পুরোপুরি দায় চাপালেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শামসুন নাহারের ওপর। তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তাকেই দেখা উচিত ছিল। তিনি দায় এড়াতে পারেন না। এ বিষয়ে তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ২০ বছর বয়সী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন

৪ ঘণ্টা আগে

খুলনার লবণচরা দরবেশ মোল্লা গলিতে সংঘটিত নৃশংস ট্রিপল মার্ডার রহস্যের পরিধি বাড়ছে। শিশু মোস্তাকিম (৮), ফাতিহা (৬) ও তাদের নানি মহিতুন্নেছা বেগমকে হত্যা করার ঘটনায় এখনও কোনো নিশ্চিত আসামি শনাক্ত হয়নি, তবে সন্দেহের তালিকায় বাদ যাচ্ছে না নিহত শিশুদের পরিবারের সদস্যরাও

৫ ঘণ্টা আগে

নরসিংদীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে এ অভিযান পরিচালনা করে তিনটি পাম্পের পাঁচটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছ বিএসটিআই। সংস্থাটির আঞ্চলিক কার্যালয় নরসিংদীর সহকারী পরিচালক (মেট্রোলজি) মো: কামরুল পলাশের নেতৃত্বে এবং পরিদর্শক (মেট্রোলজি) মো: আরিফ হোসেন আসিফ ও কাজী শাখাওয়াত হোসেন এ অভিযান পরিচালনা করেন।

১ দিন আগে