এক ভয়ংকর পুলিশ অফিসার আশরাফুল আজীম

প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ১৫: ৪৩
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

দুদকের জালে স্বরাষ্ট্র ও পুলিশের ৯৬ কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন কাজী আশরাফুল আজীম। নীতি নৈতিকতাহীন ভয়ংকর চরিত্রের এই পুলিশ কর্মকর্তা ২০০৫ সালে পুলিশে নিয়োগ পান । ২৪ ব্যাচের এই পুলিশ কর্মকর্তা এমন কোন অনিয়ম নেই যে তিনি করেননি। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। বাবাকে বানিয়েছেন পৌর মেয়র। সর্বশেষ তিনি ডিএমপির উত্তরার ডিসি ছিলেন। এর আগে তিনি নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। নরসিংদীর আগে শেরপুরের পুলিশ সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালের ৭ জুন তিনি শেরপুরের পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচণে তিনি কম করে হলেও ১০/১২ কোটি টাকা অবৈধভাবে রোজগার করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি করেছেন তিনি নরসিংদীতে। দুর্নীতির পাশাপাশি তিনি বিএনপি নিধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তার আমলে এ জেলায় দিন দুপুরে হত্যা ডাকাতি চুরি রাহাজানি ছিনতাই ও দস্যুতা ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও পুড়িয়ে ফেলে তার পালিত সন্ত্রাসীরা। পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটেছিল। এমন কি তার নির্দেশে ছাত্র দলের দুই নেতা সাদেকুর রহমান (৩২) ও আশরাফুল ইসলামকে (২০) গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। পরে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান হত্যা মামলায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও তার স্ত্রী বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়।

নিহত ছাত্রনেতা সাদেকুর রহমানের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় এই মামলা করেন। ঘটনার কয়েক দিন পর নিহত সাদেকের ভাই বাদী আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন আসামির নাম দিয়েছে পুলিশ। তিনি একজনের নামও দেননি। আবেদনে স্বাক্ষর ছাড়া তিনি কিছুই জানতে না। তিনি তখন আরো বলেছিলেন,ঘটনাস্থল আমাদের বাড়ি থেকে অনেকদূর। আমরা কিছুই দেখিনি ও জানি না। ঘটনার সময় পুলিশ সামনে ছিল। সেহেতু পুলিশই আসামিদের নাম দিয়েছে। যদিও এ ঘটনার দিন খায়রুল কবীর খোকন ও তার স্ত্রী শিরিন সুলতানা ঢাকায় ছিলেন।

পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীমের সময় এমন আরো অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে নরসিংদীতে। কিন্তু সে তুলনায় একেবারেই মামলা হয়নি। কারণ পুলিশ তখন মামলা নিত না। মামলা নিলে অপরাধের সংখ্যা কাগজে কলমে বেড়ে যায়। তাই অপরাধের সংখ্যা কম দেখিয়ে তিনি তখন ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ পুলিশ সুপার হয়েছেন ।

বিএনপি নিধনে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ফলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে খুবই পছন্দ করতো।

আশরাফুল আজীমের নির্দেশনায় ট্র্যাফিক পুলিশের নেতৃত্ব ঢাকা সিলেট মহাসড়কে সে সময় ব্যাপক চাঁদাবাজি হতো। মাল বোঝাই ট্রাক, কাভারভ্যান, লরি ও যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো। পুলিশ কল্যাণ তহবিলের নামে তোলা এ টাকা যেত আশরাফুল আজীমের পকেটে।

ঢাকা সিলেট মহাসড়ক দিয়ে ভারত থেকে আসা অবৈধ মালামাল থেকে টাকা তুলতো ডিবি পুলিশ। প্রতি মাসে কোটি টাকা চাঁদা আদায় হতো এ-খাত থেকে। এসবের সব টাকা যেত আজীমের পকেটে। মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতো তৎকালীন ডিবি পুলিশ। মাদক থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা যেত আশরাফুল আজীমের পকেটে। মাদকের তখন সবচেয়ে বড় কারবারি ছিল জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য সচিব নাজমা বেগম। তার বাড়ি পৌর এলাকার ব্যাপারীপাড়া মহল্লায়। তার বাবা ও ভাই শাহপরান মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। নাজমা প্রতিমাসে পুলিশকে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতেন। এসব টাকাও যেত আজীমের পকেটে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সুপার আশরাফুর আজীম একজন ভয়ংকর ও অসাধু পুলিশ অফিসার ছিলেন। তার আমলে নরসিংদীতে অর্ধশত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বেড়েছিল মাদকসহ নানা অপরাধ।

কাজী আশরাফুল আজীম নরসিংদীর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। শুধু টাকা নয় কুরবানির জন্য গরু নিয়েছেন এমন কথাও লোকমুখে শোনা গেছে। শিল্পপতিদের কাছ থেকেও তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন। তার ও তার স্ত্রী এবং স্বজনদের নামে রাজধানী ঢাকায় ও ঝিনাইদাহতে প্রচুর সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

আটক রুবেল দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল

১ দিন আগে

বাগেরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় এ এস এম হায়াত উদ্দিন (৪২) নামে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পৌর শহরের হাড়িখালি এলাকায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। নিহত হায়াত উদ্দিন দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন।

২ দিন আগে

প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে

৩ দিন আগে

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে গোপনে খবর পেয়ে শেরপুরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোয়েব হত্যা মামলার প্রধান আসামি জামিলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন

৪ দিন আগে