বিশেষ প্রতিনিধি
গত ১০ বছরে দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারের অন্তত ৬০০ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দিয়েছেন জিবিএক্স লজিস্টিকস নামের প্রতিষ্ঠানটি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন একক আধিপত্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছেন। তবে এই পুরো সময়জুড়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। এনবিআরের সনদ জালিয়াতি করে বছর বছর ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে আয় দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দ্বৈত কর আরোপণ পরিহার চুক্তির (ডিটিএএ) আড়ালে অবৈধ সুবিধা নেওয়া, ভুয়া আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে সরকারি ও ব্যাংকিং সুবিধা ভোগ করার মতো জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতার কাছে অসহায় ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিএফআইইউ, কাস্টমস ও আদালত। এতসব জালিয়াতি ও অনিয়মের পরেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আহমেদ ইউসুফ। ক্ষমতার পালাবদল হলেও এখনো কমেনি তার দোর্দণ্ডপ্রতাপ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের এক পরিচিত নাম। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড বিএলপিএল লজিস্টিকস (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড ও ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস লাইনের মতো প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম চালায় জিবিএক্স। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালেই চলছে আর্থিক অপরাধের এক ভয়ংকর চিত্র। নথিপত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ডিসেম্বর ২০১৪ (২০১৫-১৬) কর বর্ষে একটি আংশিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও এরপর থেকে গত ১০ বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে রিটার্ন দাখিল করেছেন সেখানেও ধরা পড়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ।
কর গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫-১৬ কর বর্ষে ৫৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয় জিবিএক্স। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) নির্দেশে কর সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিসমূহ), কর অঞ্চল-২ তদন্তে নামে। ওই তদন্তে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের বিপুল পরিমাণ আয় গোপনের বিষয়টি উঠে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে শিপিং এজেন্সি কমিশনের বিপরীতে ৫ শতাংশ উৎসে কর জমার তথ্য দেখিয়ে আয়কর সমন্বয়ের একটি ফাঁকফোকর ব্যবহার করেন। এতে শিপিং এজেন্সি থেকে আয় হওয়া ১২ কোটি ১২ লক্ষ ৪০১ টাকার কমিশন আয় সুকৌশলে গোপন করে। যা ট্যাক্স এসেসমেন্টের ভাষায় অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে গণ্য। এর মাধ্যমে জিবিএক্স কোম্পানির প্রকৃত আয়কে অনেক কম দেখিয়েছে। পাশাপাশি ঐ সময়ে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া ১৪৭ কোটি ৭১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪১১ টাকার লেনদেনের তথ্যও গোপন করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ করযোগ্য আয় গোপনের দায়ে তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস (ডিসিটি) জিবিএক্স লজিস্টিকসের ওপর প্রায় ৫৬ কোটি টাকার আয়কর ধার্য করার সুপারিশ করেন। এরপরে জিবিএক্স এর বিরুদ্ধে মামলা হয় বকেয়া কর পরিশোধে রায়ও হয়। কিন্তু তবুও টাকা দেয়নি ওয়ালিদ। অভিযোগ রয়েছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের মালিক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ওই তদন্ত প্রতিবেদন আটকে দেন। কর নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সেই হিসেবে বছরে ৫৬ কোটি টাকা করে ধরলেও গত ১০ বছরে ৫৬০ কোটি টাকা সরকারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করলেও দেখানো হয়েছে মাত্র ১২টি। আবার ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের দুই ধরনের আয় খাত রয়েছে। শিপিং এজেন্ট ব্যবসা হতে এজেন্সি কমিশন আয় এবং ফ্রেইড ফরওয়ার্ডিং ব্যবসা হতে আয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি শিপিং এজেন্ট ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত এজেন্সি কমিশন আয় গোপন করে শুধুমাত্র ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত কমিশন আয় প্রদর্শন করেছেন। সব মিলিয়ে
এতে সরকারের প্রায় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ব্যাংক লেনদেনের বিপুল পরিমাণ টাকা গোপন করে তিনি ও তার স্ত্রী মেরিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নিয়েছেন।
তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জিবিএক্স লজিস্টিকস কোনো আয়কর রিটার্ন জমা না দিলেও এনবিআর থেকে দ্বৈত করারোপণ পরিহার চুক্তির (ডিটিএএ) সকল সুবিধা ভোগ করছে। এনবিআরের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বছরের বছর ধরে নির্বিঘ্নে সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এছাড়া শিপিং এজেন্ট ব্যবসা চালিয়ে নিতে ২০২১ সালে জিবিএক্স লজিস্টিকস চট্টগ্রাম কাস্টমসে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে আবেদন করেন। আবেদনের সময় কোম্পানির যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়া হয় তা এডিট করা। এভাবে ভুয়া রিটার্ন জমা দিয়েই লাইসেন্স নবায়ন করে জিবিএক্স।
নিখাদ খবর এর হাতে আসা চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটির মেরিন বিভাগের একটি নথীতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর ১৮১০২, ২৪ এপ্রিল জি আরটি নম্বর-১৭১৫৩, ২৬ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর- ১৭১৯৪, ২৮ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর ১৫৭৪১ এবং ৩০ এপ্রিলের জিআর নম্বর ৯৯৯০ চালানে কন্ট্রেইনার আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
যেভাবে শুল্ক ফাঁকি দেয় জিবিএক্স: অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর গোয়েন্দাদের তদন্ত অনুযায়ী ফাঁকি দেয়া টাকা উদ্ধারে যখন কোনো কার্যকর অগ্রগতি হচ্ছিল না তখন জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। পিটিশন নম্বর ৯৪২১/২০১৯। তখন তড়িঘড়ি করে একটি অ্যাসেসমেন্ট করার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরবর্তীতে এই আয়কর মামলাটি ৫৬ কোটি টাকার পরিবর্তে ১২ কোটি ৬০ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৩৮ টাকা নির্ধারণ করে নিষ্পত্তি করে কর সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিজ), কর অঞ্চল-২। যেখানে বিশাল অঙ্কের আয় গোপন করার মতো গুরুতর এবং প্রমাণিত অপরাধের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির ওপর কোনো প্রকার জরিমানা বা সুদ পর্যন্ত আরোপ করা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন কর অফিস ও আপিল অফিসে প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ মামলাটি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসেন। কর সার্কেল-৩৫ এর কর নির্ধারণী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও পরবর্তীতে ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনালে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড কোনো প্রকার কর জমা না দিয়েই নিজেদের পক্ষে রায় পান। কমিশনার অফ ট্যাক্সেস (আপিল) ও ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনাল, প্রতিষ্ঠানটির দাখিলকৃত সেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তাদের সব প্রকার আয়কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। যেখানে তদন্ত প্রতিবেদন ও উপ-কর কমিশনারের কর নির্ধারণী আদেশে ব্যাংক জমার তথ্য গোপনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। জিবিএক্স সর্বমোট ১৯টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে মাত্র ১২টি ব্যাংক হিসাবের বিবরণীর জমা দেখিয়েছিল। এরই মধ্যে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড তাদের ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ব্যবসার একটি ক্ষতি বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা শিপিং ব্যবসার আয় থেকে সমন্বয় করার দাবি করা হয়। কর গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। তবে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে হাইকোর্টে রহস্যজনকভাবে কোনো প্রকার আপিল দায়ের করা হয়নি।
যেভাবে লাইসেন্স জালিয়াতি করে জিবিএক্স: শুধু ২০২১ সালেই নয় চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকেও সুবিধা পেতে নিয়মিতভাবে এই ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা কাস্টমস থেকে কোনো প্রকার যাচাইÍ বাছাই ছাড়াই জিবিএক্স এর অনুকূলে পোর্টের সব ছাড়পত্র ইস্যু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে কাস্টমসের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন গোপন নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড গত ১০ বছর ধরে কোনো প্রকার আয়কর বিবরণী জমা না দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসে জমা দেওয়া আয়কর সনদটি নকল। যা ফটোশপ পরে বানিয়ে কাস্টমসে জমা দিয়ে শিপিং লাইসেন্স নবায়ন করেন জিবিএক্স। জমা দেয়া আয়কর সনদের বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডে খোঁজ নেয়া হলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের পর থেকে এই কোম্পানির নামে কোনো ভ্যাট ট্যাক্স প্রদান করা হয়নি। তাদের টিন নম্বরও আপডেট না। ভুয়া আয়কর সনদ ব্যবহার করে শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সের মত গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স নবায়ন করায় নজিরবিহীন জালিয়াতিও ধামাচাপা পড়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন নেতার সুপারিশে লাইসেন্স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়া পরেও এনবিআর বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার সঙ্গে গভীর সখ্যতা ছিল। এই সুবাদে তার ব্যবসা বাণিজ্যে একের পর এক জালিয়াতি ও অনিয়ম করে গেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কর ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ইতোমধ্যে আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
ব্যাংক বিমাকেও বোকা বানিয়েছে ওয়ালিদ: অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ব্যাংক ঋণ, ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, চট্টগ্রাম বন্দরে তালিকাভুক্তি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের হালনাগাদ প্রমাণক জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেখানে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড কীভাবে কোনো প্রকার আয়কর দাখিল না করেই বছরের পর বছর ধরে তাদের এই বিশাল এবং প্রকাশ্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে? সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি একাধিক সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে ভুয়া ও জাল ট্যাক্স সার্টিফিকেট জমা দিয়েই এই সকল গুরুত্বপূর্ণ সেবা নির্বিঘ্নে গ্রহণ করে আসছে।
এবিআরে কি আছে জিবিএক্সের: জিবিএক্স লজিস্টিকসের অন্যতম প্রধান ব্যবসা হলো শিপিং এজেন্সি পরিচালনা। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম কাস্টমসের অধীনে নিবন্ধিত শিপিং লাইসেন্স নম্বর হলো ৩৭১৭/১২। উক্ত লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০২০-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এই নিয়ম সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করে নকল ও ভুয়া আয়কর সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে, যা উক্ত লাইসেন্সের নথিতে ৫৮৩ নম্বর নথি হিসেবে সংরক্ষিত আছে। উপ-কর কমিশনার, সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিসমূহ), কর অঞ্চল-২ এর দাপ্তরিক তথ্য অনুসারেই, ২০১৫-১৬ কর বর্ষের পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আর কোনো আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের গুরুতর জাল ও ভুয়া আয়কর সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে তারা তাদের শিপিং লাইসেন্স নবায়ন করেছে।
যেভাবে ব্যাংকগুলোকে বোকা বানায় জিবিএক্স: জিবিএক্স লজিস্টিকসের অথরাইজড ডিলার (এডি) ব্যাংক হিসেবে এইচএসবিসি, ব্যাংক এশিয়া ও জনতা ব্যাংকের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তফসিলি ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর প্রতারক প্রতিষ্ঠান জিবিএক্স লজিস্টিককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং সেবা, বিশেষ করে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেনের মতো স্পর্শকাতর সুবিধা প্রদান করে আসছে। সিটি কর্পোরেশন, রেগুলেটরি অথরিটি, ব্যাংক, বীমা ও ট্রেড এ্যাসোসিয়েশন সকল প্রতিষ্ঠানকেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বোকা বানিয়েছেন জিবিএক্স।
জিবিএক্স লজিস্টিকসের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মিনারকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো মোটেও সত্য নয়। দীর্ঘদিন ধরেই একটা চক্র আমাদের পিছনে লেগেছে। তবে লেগেওে কিছু করতে পারেনি।কারণ আমরা কোন কর ফাঁকি দেইনি।
গত ১০ বছরে দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে সরকারের অন্তত ৬০০ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দিয়েছেন জিবিএক্স লজিস্টিকস নামের প্রতিষ্ঠানটি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দেশের শিপিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠা করেছেন একক আধিপত্য। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একচেটিয়া ব্যবসা করে আসছেন। তবে এই পুরো সময়জুড়ে আয়কর রিটার্ন জমা দেননি। এনবিআরের সনদ জালিয়াতি করে বছর বছর ব্যবসা চালিয়ে গেছেন। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নামে আয় দেখিয়ে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দ্বৈত কর আরোপণ পরিহার চুক্তির (ডিটিএএ) আড়ালে অবৈধ সুবিধা নেওয়া, ভুয়া আয়কর রিটার্ন সার্টিফিকেট ব্যবহার করে সরকারি ও ব্যাংকিং সুবিধা ভোগ করার মতো জালিয়াতিরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির ক্ষমতার কাছে অসহায় ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বিএফআইইউ, কাস্টমস ও আদালত। এতসব জালিয়াতি ও অনিয়মের পরেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আহমেদ ইউসুফ। ক্ষমতার পালাবদল হলেও এখনো কমেনি তার দোর্দণ্ডপ্রতাপ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের এক পরিচিত নাম। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড বিএলপিএল লজিস্টিকস (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড ও ওরিয়েন্টাল এক্সপ্রেস লাইনের মতো প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম চালায় জিবিএক্স। কিন্তু এই পরিচয়ের আড়ালেই চলছে আর্থিক অপরাধের এক ভয়ংকর চিত্র। নথিপত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ডিসেম্বর ২০১৪ (২০১৫-১৬) কর বর্ষে একটি আংশিক আয়কর রিটার্ন দাখিল করলেও এরপর থেকে গত ১০ বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যে রিটার্ন দাখিল করেছেন সেখানেও ধরা পড়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ।
কর গোয়েন্দা ইউনিটের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫-১৬ কর বর্ষে ৫৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয় জিবিএক্স। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) নির্দেশে কর সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিসমূহ), কর অঞ্চল-২ তদন্তে নামে। ওই তদন্তে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের বিপুল পরিমাণ আয় গোপনের বিষয়টি উঠে আসে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে শিপিং এজেন্সি কমিশনের বিপরীতে ৫ শতাংশ উৎসে কর জমার তথ্য দেখিয়ে আয়কর সমন্বয়ের একটি ফাঁকফোকর ব্যবহার করেন। এতে শিপিং এজেন্সি থেকে আয় হওয়া ১২ কোটি ১২ লক্ষ ৪০১ টাকার কমিশন আয় সুকৌশলে গোপন করে। যা ট্যাক্স এসেসমেন্টের ভাষায় অপ্রদর্শিত আয় হিসেবে গণ্য। এর মাধ্যমে জিবিএক্স কোম্পানির প্রকৃত আয়কে অনেক কম দেখিয়েছে। পাশাপাশি ঐ সময়ে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া ১৪৭ কোটি ৭১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪১১ টাকার লেনদেনের তথ্যও গোপন করা হয়। এই বিপুল পরিমাণ করযোগ্য আয় গোপনের দায়ে তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস (ডিসিটি) জিবিএক্স লজিস্টিকসের ওপর প্রায় ৫৬ কোটি টাকার আয়কর ধার্য করার সুপারিশ করেন। এরপরে জিবিএক্স এর বিরুদ্ধে মামলা হয় বকেয়া কর পরিশোধে রায়ও হয়। কিন্তু তবুও টাকা দেয়নি ওয়ালিদ। অভিযোগ রয়েছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের মালিক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ওই তদন্ত প্রতিবেদন আটকে দেন। কর নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সেই হিসেবে বছরে ৫৬ কোটি টাকা করে ধরলেও গত ১০ বছরে ৫৬০ কোটি টাকা সরকারে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। এছাড়াও প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি ১৯টি ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করলেও দেখানো হয়েছে মাত্র ১২টি। আবার ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেডের দুই ধরনের আয় খাত রয়েছে। শিপিং এজেন্ট ব্যবসা হতে এজেন্সি কমিশন আয় এবং ফ্রেইড ফরওয়ার্ডিং ব্যবসা হতে আয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি শিপিং এজেন্ট ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত এজেন্সি কমিশন আয় গোপন করে শুধুমাত্র ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত কমিশন আয় প্রদর্শন করেছেন। সব মিলিয়ে
এতে সরকারের প্রায় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া ব্যাংক লেনদেনের বিপুল পরিমাণ টাকা গোপন করে তিনি ও তার স্ত্রী মেরিনা আক্তারের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নিয়েছেন।
তথ্য বলছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত জিবিএক্স লজিস্টিকস কোনো আয়কর রিটার্ন জমা না দিলেও এনবিআর থেকে দ্বৈত করারোপণ পরিহার চুক্তির (ডিটিএএ) সকল সুবিধা ভোগ করছে। এনবিআরের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বছরের বছর ধরে নির্বিঘ্নে সরকারের শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এছাড়া শিপিং এজেন্ট ব্যবসা চালিয়ে নিতে ২০২১ সালে জিবিএক্স লজিস্টিকস চট্টগ্রাম কাস্টমসে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে আবেদন করেন। আবেদনের সময় কোম্পানির যে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়া হয় তা এডিট করা। এভাবে ভুয়া রিটার্ন জমা দিয়েই লাইসেন্স নবায়ন করে জিবিএক্স।
নিখাদ খবর এর হাতে আসা চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটির মেরিন বিভাগের একটি নথীতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর ১৮১০২, ২৪ এপ্রিল জি আরটি নম্বর-১৭১৫৩, ২৬ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর- ১৭১৯৪, ২৮ এপ্রিলের জি আরটি নম্বর ১৫৭৪১ এবং ৩০ এপ্রিলের জিআর নম্বর ৯৯৯০ চালানে কন্ট্রেইনার আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
যেভাবে শুল্ক ফাঁকি দেয় জিবিএক্স: অনুসন্ধানে জানা গেছে, কর গোয়েন্দাদের তদন্ত অনুযায়ী ফাঁকি দেয়া টাকা উদ্ধারে যখন কোনো কার্যকর অগ্রগতি হচ্ছিল না তখন জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। পিটিশন নম্বর ৯৪২১/২০১৯। তখন তড়িঘড়ি করে একটি অ্যাসেসমেন্ট করার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরবর্তীতে এই আয়কর মামলাটি ৫৬ কোটি টাকার পরিবর্তে ১২ কোটি ৬০ লক্ষ ৯৯ হাজার ৩৩৮ টাকা নির্ধারণ করে নিষ্পত্তি করে কর সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিজ), কর অঞ্চল-২। যেখানে বিশাল অঙ্কের আয় গোপন করার মতো গুরুতর এবং প্রমাণিত অপরাধের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটির ওপর কোনো প্রকার জরিমানা বা সুদ পর্যন্ত আরোপ করা
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন কর অফিস ও আপিল অফিসে প্রভাব খাটিয়ে সম্পূর্ণ মামলাটি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসেন। কর সার্কেল-৩৫ এর কর নির্ধারণী আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও পরবর্তীতে ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনালে ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড কোনো প্রকার কর জমা না দিয়েই নিজেদের পক্ষে রায় পান। কমিশনার অফ ট্যাক্সেস (আপিল) ও ট্যাক্স আপিল ট্রাইব্যুনাল, প্রতিষ্ঠানটির দাখিলকৃত সেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তাদের সব প্রকার আয়কর থেকে অব্যাহতি প্রদান করে। যেখানে তদন্ত প্রতিবেদন ও উপ-কর কমিশনারের কর নির্ধারণী আদেশে ব্যাংক জমার তথ্য গোপনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। জিবিএক্স সর্বমোট ১৯টি ব্যাংক হিসাবের মধ্যে মাত্র ১২টি ব্যাংক হিসাবের বিবরণীর জমা দেখিয়েছিল। এরই মধ্যে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড তাদের ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং ব্যবসার একটি ক্ষতি বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা শিপিং ব্যবসার আয় থেকে সমন্বয় করার দাবি করা হয়। কর গোয়েন্দার তদন্ত প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। তবে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এই রায়ের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে হাইকোর্টে রহস্যজনকভাবে কোনো প্রকার আপিল দায়ের করা হয়নি।
যেভাবে লাইসেন্স জালিয়াতি করে জিবিএক্স: শুধু ২০২১ সালেই নয় চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকেও সুবিধা পেতে নিয়মিতভাবে এই ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যা কাস্টমস থেকে কোনো প্রকার যাচাইÍ বাছাই ছাড়াই জিবিএক্স এর অনুকূলে পোর্টের সব ছাড়পত্র ইস্যু করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে কাস্টমসের কর্মকর্তারাও জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন গোপন নথি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড গত ১০ বছর ধরে কোনো প্রকার আয়কর বিবরণী জমা না দিয়েই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমসে জমা দেওয়া আয়কর সনদটি নকল। যা ফটোশপ পরে বানিয়ে কাস্টমসে জমা দিয়ে শিপিং লাইসেন্স নবায়ন করেন জিবিএক্স। জমা দেয়া আয়কর সনদের বিষয়ে রাজস্ব বোর্ডে খোঁজ নেয়া হলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের পর থেকে এই কোম্পানির নামে কোনো ভ্যাট ট্যাক্স প্রদান করা হয়নি। তাদের টিন নম্বরও আপডেট না। ভুয়া আয়কর সনদ ব্যবহার করে শিপিং এজেন্ট লাইসেন্সের মত গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স নবায়ন করায় নজিরবিহীন জালিয়াতিও ধামাচাপা পড়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন নেতার সুপারিশে লাইসেন্স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়া পরেও এনবিআর বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানার সঙ্গে গভীর সখ্যতা ছিল। এই সুবাদে তার ব্যবসা বাণিজ্যে একের পর এক জালিয়াতি ও অনিয়ম করে গেলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কোনো প্রকার ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কর ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) ইতোমধ্যে আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে।
ব্যাংক বিমাকেও বোকা বানিয়েছে ওয়ালিদ: অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ব্যাংক ঋণ, ইন্স্যুরেন্স সুবিধা, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, চট্টগ্রাম বন্দরে তালিকাভুক্তি সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবার জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের হালনাগাদ প্রমাণক জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক, সেখানে জিবিএক্স লজিস্টিকস লিমিটেড কীভাবে কোনো প্রকার আয়কর দাখিল না করেই বছরের পর বছর ধরে তাদের এই বিশাল এবং প্রকাশ্য ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে? সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটি একাধিক সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে ভুয়া ও জাল ট্যাক্স সার্টিফিকেট জমা দিয়েই এই সকল গুরুত্বপূর্ণ সেবা নির্বিঘ্নে গ্রহণ করে আসছে।
এবিআরে কি আছে জিবিএক্সের: জিবিএক্স লজিস্টিকসের অন্যতম প্রধান ব্যবসা হলো শিপিং এজেন্সি পরিচালনা। প্রতিষ্ঠানটির চট্টগ্রাম কাস্টমসের অধীনে নিবন্ধিত শিপিং লাইসেন্স নম্বর হলো ৩৭১৭/১২। উক্ত লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাস্টমস এজেন্ট লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০২০-এর ধারা ১৫ অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণক জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এই নিয়ম সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন করে নকল ও ভুয়া আয়কর সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে, যা উক্ত লাইসেন্সের নথিতে ৫৮৩ নম্বর নথি হিসেবে সংরক্ষিত আছে। উপ-কর কমিশনার, সার্কেল-৩৫ (কোম্পানিসমূহ), কর অঞ্চল-২ এর দাপ্তরিক তথ্য অনুসারেই, ২০১৫-১৬ কর বর্ষের পর প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আর কোনো আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে এই ধরনের গুরুতর জাল ও ভুয়া আয়কর সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে তারা তাদের শিপিং লাইসেন্স নবায়ন করেছে।
যেভাবে ব্যাংকগুলোকে বোকা বানায় জিবিএক্স: জিবিএক্স লজিস্টিকসের অথরাইজড ডিলার (এডি) ব্যাংক হিসেবে এইচএসবিসি, ব্যাংক এশিয়া ও জনতা ব্যাংকের মতো দেশের শীর্ষস্থানীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তফসিলি ব্যাংকগুলো বছরের পর বছর প্রতারক প্রতিষ্ঠান জিবিএক্স লজিস্টিককে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং সেবা, বিশেষ করে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক লেনদেনের মতো স্পর্শকাতর সুবিধা প্রদান করে আসছে। সিটি কর্পোরেশন, রেগুলেটরি অথরিটি, ব্যাংক, বীমা ও ট্রেড এ্যাসোসিয়েশন সকল প্রতিষ্ঠানকেই ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে বোকা বানিয়েছেন জিবিএক্স।
জিবিএক্স লজিস্টিকসের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মিনারকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো মোটেও সত্য নয়। দীর্ঘদিন ধরেই একটা চক্র আমাদের পিছনে লেগেছে। তবে লেগেওে কিছু করতে পারেনি।কারণ আমরা কোন কর ফাঁকি দেইনি।
আটক রুবেল দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল
১৯ ঘণ্টা আগেবাগেরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় এ এস এম হায়াত উদ্দিন (৪২) নামে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পৌর শহরের হাড়িখালি এলাকায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। নিহত হায়াত উদ্দিন দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন।
১ দিন আগেপ্রাথমিকভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে
৩ দিন আগেমঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে গোপনে খবর পেয়ে শেরপুরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোয়েব হত্যা মামলার প্রধান আসামি জামিলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন
৪ দিন আগেআটক রুবেল দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল
বাগেরহাটে দুর্বৃত্তদের হামলায় এ এস এম হায়াত উদ্দিন (৪২) নামে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পৌর শহরের হাড়িখালি এলাকায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। নিহত হায়াত উদ্দিন দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ছিলেন।
প্রাথমিকভাবে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তাকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে গোপনে খবর পেয়ে শেরপুরের কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোয়েব হত্যা মামলার প্রধান আসামি জামিলকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন