ওরিয়ন গ্রুপের হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম
বিশেষ প্রতিনিধি
সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম
করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তিন ভাই । তারা হলেন, ওরিওন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ব্রাহ্মণ বাড়িয়া -৫ (নবীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিম।
পৃথক তিন মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড কাঁধে নিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন ওবায়দুল করিম। সাজা ঘোষণার তিনটিসহ তার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়। এই শিল্প গ্রুপটি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একে একে সাতটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার সরকারকে কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আত্মসাৎ করেছে আরও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
দেশের টাকা চুরি করে দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম। দুবাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেলহাসাকে ফাঁদে ফেলে জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অপকর্মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। আবার সেই টাকা পাচার করেছেন খোদ দুবাইয়ে। পাচার করা টাকায় দুবাইয়ের অভিজাত এলাকায় কিনেছেন বিলাসবহুল হোটেল, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমিজমা।
দুবাইয়ে চার তারকা মানের একটি হোটেল কেনার রেজিস্ট্রেশন নথিতে তিনি নিজেকে আলবেনিয়ার নাগরিক পরিচয় দিয়েছেন। আলবেনিয়ার করপোরেট রেজিস্ট্রির নথিতে তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি অ্যাগ্রি প্রোডাক্টসে ইউরোপের নাম উল্লেখ রয়েছে। যা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে গোল্ডেন পাসপোর্ট স্কিমের মাধ্যমে তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে আলবেনিয়া। একটি বিনিয়োগ কর্মসূচির অধীনে তাকে নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছে সাইপ্রাস সরকার। এ ক্ষেত্রে তাকে সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে ২ লাখ ইউরো বা প্রায় আড়াই লাখ ডলার এবং সাইপ্রাসের রিয়েল এস্টেটে প্রায় ২০ লাখ ইউরো বা প্রায় ২৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
এদিকে বাহরাইনে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের। ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। তবে সেখানে তার ছেলেকে বাংলাদেশি হিসেবে বলা হলেও ওবায়দুল করিমকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বিপুল পরিমাণের অর্থ লোপাটের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে মির্জা আজম, আলাউদ্দিন নাসিম ও শামীম ওসমান উল্লেখযোগ্য। ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এই তিন জনের কারো না কারো শেয়ার ছিল।
ওবায়দুল করিমের মেয়ে জারিন করিম সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি জেশা জেনারেল ট্রেডিং এলএলসির মালিক, যেখানে তাকে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিমের রয়েছে ডোমিনিকান পাসপোর্ট। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর এই পাসপোর্ট ইস্যু করেছে সেই দেশ। তাদের মেয়ে জারিন করিম ২০২৪ সালে ডোমিনিকার সম্মানসূচক কনসাল হিসেবে বাংলাদেশে নিয়োগ পান এবং তিনি এখনো এই পদে রয়েছেন। জারিন করিমও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নাগরিকত্ব পেতে সে দেশের রিয়েল এস্টেট খাতে ২ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন।
এদিকে দুবাইয়ের ‘প্যালেট রয়েল রিফ্লেকশন হোটেল অ্যান্ড স্পা’ নামের চার তারকা হোটেলের মালিকানায় ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ওবায়দুল করিমের। ২০১৪ সালে নির্মিত এই ১০০ কক্ষের হোটেলটি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা বার দুবাইয়ে অবস্থিত। ওবায়দুল করিম, তার স্ত্রী আরজুদা করিম ও মেয়ে জারিনের নামে দুবাইয়ের আল মেরকাধ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রেসিডেন্সে দুটি বাড়ি ও তিনটি বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলিয়ে দুবাইয়ে ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া বিলাসবহুল গাড়িসহ অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার।
দুবাইয়ে বিশাল সম্পত্তি গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার কোটি টাকার পুরোটাই প্রতারণা, জালিয়াতি ও আত্মসাতের মাধ্যমে অর্জন করেন ওবায়দুল করিম।
জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। সে সময় যৌথ বাহিনীর গঠিত দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তবে দুর্নীতির মামলা ও সাজা থেকে রক্ষা পাননি। তার অনুপস্থিতিতে বিশেষ আদালতে রায় ঘোষণা হয়। একটিতে যাবজ্জীবনসহ তিনটি মামলায় তার অন্তত ৪৮ বছর কারাদণ্ড হয়।
নারায়ণগঞ্জের গোগন নগরে ‘ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়নের। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম ও তার তিন ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া, মির্জা গোলাম রাব্বানি ও মির্জা জিল্লুর রহমান।
সিদ্ধিরগঞ্জে ‘ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল ওরিয়ন গ্রুপ। বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ও তার ভাই জামালউদ্দিন আহমেদ।
‘ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড’ নামে ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে শামীম ওসমানকে ৪ শতাংশ দিয়ে বাকি ৯৬ শতাংশ ভোগ করেছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। এই ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে মালিকানায় ছিল ওরিয়ন গ্রুপ, মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
খুলনায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড’এর ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায়ও যৌথ মালিকানায় আছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায়ও ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে ছিল মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট ২, ঢাকা’ ৬৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় রাখা হয় চীনের ফুজিয়ান লং এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড ও দুবাইয়ের ফার্স্টজেন এনার্জি নামের দুই কোম্পানি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই দুই বিদেশি কোম্পানির মালিক ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।
ওরিয়ন পরিবারের মালিকানাধীন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রেও চীন ও দুবাইয়ের সেই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে। মূলত এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। তবে ‘ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড’ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একক মালিকানায় রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ।
এই ৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫২৩৩ কোটি টাকা। এই ঋণ উত্তোলনে সহযোগী ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সরকার থেকে নিয়েছে ৪৫২৫ কোটি টাকা।
ওরিয়ন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তাদেরই পার্টনার বানিয়ে এপর্যন্ত ১১৪১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২৩৯ কোটি টাকা।
এছাড়াও বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম ময়মনসিংহের ভালুকায় সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) অন্তত ১০০ একর জমি অবৈধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বনবিলাস। সেখানে ওরিয়ন ফ্রিজ তৈরির কারখানা, ব্যক্তিগত প্রমোদ বাংলোসহ নির্মাণ করা হয়েছে নানা রকম স্থাপনা।
ওবায়দুল করিম ছাড়াও তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ও ব্রাহ্মণ বাড়িয়া -৫ (নবীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিম ও একই বনের আরও ১০০ একর করে জমি দখল করেছেন। অধৈভাবে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখলে রেখেও তারা আজও আছেন বহাল তবিয়তে।
সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম
করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তিন ভাই । তারা হলেন, ওরিওন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ব্রাহ্মণ বাড়িয়া -৫ (নবীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিম।
পৃথক তিন মামলায় ৪৮ বছরের কারাদণ্ড কাঁধে নিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন ওবায়দুল করিম। সাজা ঘোষণার তিনটিসহ তার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের ৪৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা হয়। এই শিল্প গ্রুপটি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একে একে সাতটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার সরকারকে কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আত্মসাৎ করেছে আরও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
দেশের টাকা চুরি করে দুবাইয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম। দুবাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেলহাসাকে ফাঁদে ফেলে জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অপকর্মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন হাজার কোটি টাকা। আবার সেই টাকা পাচার করেছেন খোদ দুবাইয়ে। পাচার করা টাকায় দুবাইয়ের অভিজাত এলাকায় কিনেছেন বিলাসবহুল হোটেল, ফ্ল্যাট, বাড়ি ও জমিজমা।
দুবাইয়ে চার তারকা মানের একটি হোটেল কেনার রেজিস্ট্রেশন নথিতে তিনি নিজেকে আলবেনিয়ার নাগরিক পরিচয় দিয়েছেন। আলবেনিয়ার করপোরেট রেজিস্ট্রির নথিতে তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানি অ্যাগ্রি প্রোডাক্টসে ইউরোপের নাম উল্লেখ রয়েছে। যা ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে গোল্ডেন পাসপোর্ট স্কিমের মাধ্যমে তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছে আলবেনিয়া। একটি বিনিয়োগ কর্মসূচির অধীনে তাকে নাগরিকত্ব পাইয়ে দিয়েছে সাইপ্রাস সরকার। এ ক্ষেত্রে তাকে সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে ২ লাখ ইউরো বা প্রায় আড়াই লাখ ডলার এবং সাইপ্রাসের রিয়েল এস্টেটে প্রায় ২০ লাখ ইউরো বা প্রায় ২৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হয়েছে।
এদিকে বাহরাইনে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে ৩০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়ন ফার্মা লিমিটেডের। ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান এই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। তবে সেখানে তার ছেলেকে বাংলাদেশি হিসেবে বলা হলেও ওবায়দুল করিমকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই বিপুল পরিমাণের অর্থ লোপাটের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে মির্জা আজম, আলাউদ্দিন নাসিম ও শামীম ওসমান উল্লেখযোগ্য। ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই এই তিন জনের কারো না কারো শেয়ার ছিল।
ওবায়দুল করিমের মেয়ে জারিন করিম সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কোম্পানি জেশা জেনারেল ট্রেডিং এলএলসির মালিক, যেখানে তাকে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওবায়দুল করিম ও তার স্ত্রী আরজুদা করিমের রয়েছে ডোমিনিকান পাসপোর্ট। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর এই পাসপোর্ট ইস্যু করেছে সেই দেশ। তাদের মেয়ে জারিন করিম ২০২৪ সালে ডোমিনিকার সম্মানসূচক কনসাল হিসেবে বাংলাদেশে নিয়োগ পান এবং তিনি এখনো এই পদে রয়েছেন। জারিন করিমও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের নাগরিকত্ব পেতে সে দেশের রিয়েল এস্টেট খাতে ২ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন।
এদিকে দুবাইয়ের ‘প্যালেট রয়েল রিফ্লেকশন হোটেল অ্যান্ড স্পা’ নামের চার তারকা হোটেলের মালিকানায় ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ওবায়দুল করিমের। ২০১৪ সালে নির্মিত এই ১০০ কক্ষের হোটেলটি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা বার দুবাইয়ে অবস্থিত। ওবায়দুল করিম, তার স্ত্রী আরজুদা করিম ও মেয়ে জারিনের নামে দুবাইয়ের আল মেরকাধ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার রেসিডেন্সে দুটি বাড়ি ও তিনটি বেডরুমের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। সব মিলিয়ে দুবাইয়ে ওবায়দুল করিম ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাড়ে ৭০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া বিলাসবহুল গাড়িসহ অস্থাবর সম্পদ রয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার।
দুবাইয়ে বিশাল সম্পত্তি গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার কোটি টাকার পুরোটাই প্রতারণা, জালিয়াতি ও আত্মসাতের মাধ্যমে অর্জন করেন ওবায়দুল করিম।
জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে ব্যাপক সমালোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে শীর্ষ দুর্নীতিবাজের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। সে সময় যৌথ বাহিনীর গঠিত দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তবে দুর্নীতির মামলা ও সাজা থেকে রক্ষা পাননি। তার অনুপস্থিতিতে বিশেষ আদালতে রায় ঘোষণা হয়। একটিতে যাবজ্জীবনসহ তিনটি মামলায় তার অন্তত ৪৮ বছর কারাদণ্ড হয়।
নারায়ণগঞ্জের গোগন নগরে ‘ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৬০ শতাংশ শেয়ার ছিল ওরিয়নের। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম ও তার তিন ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া, মির্জা গোলাম রাব্বানি ও মির্জা জিল্লুর রহমান।
সিদ্ধিরগঞ্জে ‘ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড’ নামক ১০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৭০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল ওরিয়ন গ্রুপ। বাকি ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম ও তার ভাই জামালউদ্দিন আহমেদ।
‘ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড’ নামে ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে শামীম ওসমানকে ৪ শতাংশ দিয়ে বাকি ৯৬ শতাংশ ভোগ করেছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। এই ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে মালিকানায় ছিল ওরিয়ন গ্রুপ, মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
খুলনায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড’এর ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায়ও যৌথ মালিকানায় আছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায়ও ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে ছিল মির্জা আজম ও তার তিন ভাই।
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ‘ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট ২, ঢাকা’ ৬৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় রাখা হয় চীনের ফুজিয়ান লং এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড ও দুবাইয়ের ফার্স্টজেন এনার্জি নামের দুই কোম্পানি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই দুই বিদেশি কোম্পানির মালিক ওরিয়ন গ্রুপের ওবায়দুল করিম ও তার ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি।
ওরিয়ন পরিবারের মালিকানাধীন সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রেও চীন ও দুবাইয়ের সেই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার রয়েছে। মূলত এই দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়। তবে ‘ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড’ বিদ্যুৎকেন্দ্রের একক মালিকানায় রয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ।
এই ৭ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৫২৩৩ কোটি টাকা। এই ঋণ উত্তোলনে সহযোগী ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। এছাড়া এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে সরকার থেকে নিয়েছে ৪৫২৫ কোটি টাকা।
ওরিয়ন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তাদেরই পার্টনার বানিয়ে এপর্যন্ত ১১৪১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২৩৯ কোটি টাকা।
এছাড়াও বিতর্কিত শিল্প গ্রুপ ওরিয়নের মালিক ওবায়দুল করিম ময়মনসিংহের ভালুকায় সংরক্ষিত বনের (রিজার্ভ ফরেস্ট) অন্তত ১০০ একর জমি অবৈধ দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বনবিলাস। সেখানে ওরিয়ন ফ্রিজ তৈরির কারখানা, ব্যক্তিগত প্রমোদ বাংলোসহ নির্মাণ করা হয়েছে নানা রকম স্থাপনা।
ওবায়দুল করিম ছাড়াও তার ভাই বীকন গ্রুপের মালিক ও ব্রাহ্মণ বাড়িয়া -৫ (নবীনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা এবাদুল করিম এবং রিদিশা গ্রুপের মালিক রেজাউল করিম ও একই বনের আরও ১০০ একর করে জমি দখল করেছেন। অধৈভাবে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দখলে রেখেও তারা আজও আছেন বহাল তবিয়তে।
দেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের নাম থার্মেক্স গ্রুপ। সরকারের কাস্টমস বিভাগের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্স নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাস্টমস শুল্ক বা ভ্যাট ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি আমদানি করতে পারে। যেহেতু বন্ড সুবিধা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি সেহেতু বিদেশের বাজারে পণ্যসামগ্রি বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার
২ দিন আগেবরিশালে পুলিশের অভিযানে ১০ কেজি গাঁজাসহ নয়ন তালুকদার (১৯) নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।
২ দিন আগেফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ।
২ দিন আগেনারী নির্যাতন মামলায় গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।মঙ্গলবার (২০ মে) ডিএমপির মিডিয়া আ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৩ দিন আগেসব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হাজার হাজার কোটি টাকার অনিয়ম
দেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের নাম থার্মেক্স গ্রুপ। সরকারের কাস্টমস বিভাগের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্স নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাস্টমস শুল্ক বা ভ্যাট ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি আমদানি করতে পারে। যেহেতু বন্ড সুবিধা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি সেহেতু বিদেশের বাজারে পণ্যসামগ্রি বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার
বরিশালে পুলিশের অভিযানে ১০ কেজি গাঁজাসহ নয়ন তালুকদার (১৯) নামে এক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।
ফটোগ্রাফার নূরুল ইসলামকে খুন করে ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির হাজারীবাগ থানা পুলিশ।