ড. খন্দকার মোহাম্মদ সোহেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image
ফাইল ছবি

ঢাকার ধানমন্ডির ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইডিয়াল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক ড. খন্দকার মোহাম্মদ সোহেলের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপি, গভর্নিং বডির ওপর অযাচিত প্রভাব বিস্তার, অবৈধ পদোন্নতি এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তিনি বারবার বিতর্কের কেন্দ্রে এসেছেন। এই অভিযোগগুলো কলেজের শিক্ষক ও প্রশাসনিক পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং প্রতিষ্ঠানের সুনামের ওপর প্রশ্ন তুলেছে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের সূচনা

২০১১ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ড. খন্দকার মোহাম্মদ সোহেল আইডিয়াল কলেজের রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদন করেন। তখন তিনি নারায়ণগঞ্জের মুরাপাড়া কলেজে চাকরিরত ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কার্যক্রমের অজুহাতে তিনি আইডিয়াল কলেজে যোগ দেন নাই। তিনি গভর্নিং বডিকে প্রভাবিত করে নিয়োগ স্থগিত রাখেন, যদিও এই সময়ে তিনি মুরাপাড়া কলেজে চাকরি চালিয়ে যান। এই স্থগিতকরণ বিধিসম্মত না হওয়ায় তা বিতর্কের জন্ম দেয়।

২০১৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পরও তিনি পূর্বের স্থগিত নিয়োগে যোগদান করেননি। পরে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত আরেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি পুনরায় আবেদন করেন। উল্লেখ্য, এই বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী অধ্যাপক পদের কোনো উল্লেখ ছিল না। ৬ নভেম্বর ২০১৫ অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন, কিন্তু পূর্বের ২০১২ সালের স্থগিত নিয়োগের ভিত্তিতে গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করে ২৩ নভেম্বর ২০১৫-এ সহকারী অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। এই প্রক্রিয়া নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশাসনিক পদে যাওয়ার অবৈধ প্রচেষ্টা

২০১৫ সালে যোগদানের পর থেকে ড. সোহেল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি নিজেকে কলেজের একমাত্র পিএইচডিধারী হিসেবে প্রচার করেন, অন্য বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে দলবাজি করেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন। এই সময়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ শামসুল আলম অবসরে যাওয়ার পর গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম আহসান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন। তবে ড. সোহেলের অপকর্ম অব্যাহত থাকে। তিনি অধ্যক্ষ পদে আবেদন করলেও অকৃতকার্য হন এবং জসীম উদ্দীন আহমেদ নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।

তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তদন্ত প্রতিবেদন ও একাডেমিক কমিটির সুপারিশ অনুসারে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮-এ গভর্নিং বডির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

পুনর্বহাল অবৈধ পদোন্নতি

২০২২ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ জসীম উদ্দীন আহমেদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ভুয়া পিএইচডির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্তের পর কলেজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে ড. সোহেল আদালতের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বপক্ষে পত্র ইস্যু করান এবং ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট -এ পুনর্বহাল হন। পুনর্বহালের পর তিনি গভর্নিং বডির সদস্যদের ম্যানেজ করে এবং একাডেমিক ও প্রমোশন কমিটির সুপারিশ ছাড়াই ২০২৪ সালের ১৪ মার্চ -এ সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নেন। এই প্রমোশন প্রায় ৩০-৩৫ জন শিক্ষকের প্রমোশনের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার পথ প্রশস্ত করার কৌশল হিসেবে বিবেচিত হয়।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে যাওয়ার ষড়যন্ত্র

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে জ্যেষ্ঠতম ৫ জন শিক্ষকের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করতে হয়, যেখানে জ্যেষ্ঠতা গণনা করা হয় কলেজে যোগদানের তারিখের ভিত্তিতে। ড. সোহেল আইডিয়াল কলেজে মোট ৩ বছর ৬ মাস চাকরি করলেও তিনি জ্যেষ্ঠতম ৫ জনের তালিকায় নেই (তিনি ১০তম স্থানে)। তবুও তিনি গভর্নিং বডির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজ গ্রামের অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ২-৩ জন সদস্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।

২০২৪ সালে রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোবাশ্বের হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ পাওয়ার পর ড. সোহেল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে কলেজ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করেন। এমনকি তিনি মোবাশ্বের হোসেনকে ‘ভারতীয় নাগরিক’ বলে অপবাদ দেন, যা তার ৩৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কখনো শোনা যায়নি। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেযওয়ানুল হকের বিরুদ্ধেও তিনি ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং আইনি মামলার মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি

৫ জুলাই ২০২৫-এর গভর্নিং বডির সভার আগে ড. সোহেল বেআইনিভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে। তিনি গভর্নিং বডির সদস্যদের ম্যানেজ করে এবং কলেজের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটিয়ে নিজের স্বার্থ অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ধারাবাহিক অপকর্ম প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও সুনামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ড. খন্দকার মোহাম্মদ সোহেলের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপি, অবৈধ পদোন্নতি, দলবাজি, মিথ্যা অভিযোগ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে যাওয়ার জন্য অবৈধ কৌশল। এই অভিযোগগুলো তার প্রশাসনিক পদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে, যা কলেজের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তবে, এই অভিযোগগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত এবং আইনি প্রক্রিয়া অপরিহার্য। আইডিয়াল কলেজের সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

পঞ্চগড় পৌরসভার ডোকরো পাড়া এলাকায় বাস, মিনি বাস, কোচ, মাইক্রোবাস পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম আল মামুনের বাসায় জুয়ার ব্যবসা চলছিল। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। এসময় দুই লক্ষ ১৩ হাজার ৭৯০ টাকা, নয়টি বাটন ফোন ও চারটি স্মার্ট ফোন জব্দ করা হয়

৪ ঘণ্টা আগে

রোববার (১৭ আগস্ট ) রাত আনুমানিক ৯ টায় নরসিংদী জেলা ডিবি পুলিশ রায়পুরা থানার শীর্ষ সন্ত্রাসী তৈয়বকে গ্রেফতার করে

৫ ঘণ্টা আগে

তারা বিভিন্ন দেশ থেকে অজ্ঞাতনামা যাত্রীর মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে স্বর্ণ নিয়ে আসে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তারা বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের রিসিভার হিসেবে কাজ করে আসছে

৬ ঘণ্টা আগে

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের ওয়াকিটকিতে দেওয়া বক্তব্য ফাঁস করার অভিযোগে অমি দাশ নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

৬ ঘণ্টা আগে