বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

২০ বছরে অবৈধ আয় ২ হাজার ৪ শত কোটি টাকা

প্রতিনিধি
নরসিংদী
আপডেট : ২২ মে ২০২৫, ০৯: ৫২
Thumbnail image

দেশের বহুল আলোচিত ও সমালোচিত প্রতিষ্ঠানের নাম থার্মেক্স গ্রুপ। সরকারের কাস্টমস বিভাগের মাধ্যমে বন্ড লাইসেন্স নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাস্টমস শুল্ক বা ভ্যাট ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটি আমদানি করতে পারে। যেহেতু বন্ড সুবিধা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি সেহেতু বিদেশের বাজারে পণ্যসামগ্রি বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার কথা। কিন্তু শতভাগ রফতানি মুখী এই প্রতিষ্ঠান বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কাপড় ও সুতা দেশের বাজারে বিক্রি করছে। ফলে সরকার শুল্ক-কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

এত অনিয়ম করার পরও ঋণে জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি আজ প্রায় দেউলিয়া হতে বসেছে। আলোচিত এই গ্রুপের ওভেন, নিটিং ও ডেনিম এর তৈরি বিদেশে রফতানিযোগ্য কাপড় অনিয়ম করে বিক্রি করে প্রভাবশালীদের হাত ধরে। এক্সপোর্ট কোয়ালিটির এই কাপড় অবাধে অবৈধভাবে বিক্রি করার ফলে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

জানা যায় কোম্পানির অধিকাংশ কাপড় বিক্রি হয় ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের কাছে। আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে গড়ে প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করে গ্রুপটি।

এছাড়াও মিথ্যা ডিক্লারেশন দিয়ে বন্ড লাইসেন্স সুবিধাধারী এই শিল্পপতি কাপড়ের রংসহ প্রায় অর্ধশত রকমের ডাইং কেমিক্যাল আমদানি করছেন দেশের বাইরে থেকে। চাহিদার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি সামগ্রী আনেন তিনি। শুল্ক ছাড়া বিদেশ থেকে আনা এসব রং ও কেমিক্যাল দেশের বিভিন্ন ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানে উঁচু ধরে বিক্রি করে অধিক মুনাফা অর্জনের অভিযোগও রয়েছে এই গ্রুপের বিরুদ্ধে। থার্মেক্সের ডাইং শুধু নিজেদের কাপড় রং কারার কথা থাকলেও শুল্ক ছাড়া ক্রয় করা রং দিয়ে রাঙাচ্ছেন দেশের অন্যান্য কারখানার কাপড়। এসব অনিয়মের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মাসে অবৈধভাবে আরো আয় করে ৩ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কোম্পানি মাসে ব্ল্যাকমানি গুণছেন প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।

চার টাকার দিন মুজুর থেকে রাতারাতি শিল্পপতি বনে যাওয়া এই শিল্পপতি নদী ও পরিবেশ দূষণেও জেলায় প্রায় শীর্ষস্থান দখল করে আছেন। কেবল থার্মেক্সের ক্যামিকেলেই নষ্ট হয়েছে হাড়িদোয়া নদ।

যার হাত ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি উঠেছিল থার্মেক্সের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিখাদ খবরকে বলেন, শ্রমিকের অভিশাপ আর অনিয়মের কারণে এ প্রতিষ্ঠানটি ডুবতে বসেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অনিয়মের ফলে গড়ে প্রতি মাসে আব্দুল কাদির মোল্লার পকেটে ব্ল্যাকমানি ঢুকেছে ১০ কোটি টাকা করে। এ হিসেবে গত ২০ বছরে আব্দুল কাদির মোল্লার পকেটে কম করে হলেও ২ হাজার ৪ শত কোটি টাকা ঢুকেছে।

গত ২০ বছরে মধ্যে এনবিআরের হাতে কয়েকবার ধরাও পড়েছে তারা। হয়েছে জরিমানাও। কিন্তু তারপরও থেমে নেই এসব অনৈতিক কাজ। এত অনৈতিক কাজ করার পরও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, রুপালী, অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে এই প্রতিষ্ঠানের দেনার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা।

তবে এসব বিষয় সরকারের যে সকল সংস্থার দেখভাল করার কথা তারা একেবারেই চুপচাপ ছিল বিগত সরকারের আমলে। ২০১৪ সালে একবার এই গ্রুপের প্রায় ৩ কোটি টাকার চালান ছাড়া বিক্রিত কাপড় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর সদর উপজেলার সাহেপ্রতাব মোড়ে আটক হয় এনবিআরের হাতে। ঢাকার ইসলামপুরের ব্যবসায়ী ক্রেতাকে এনবিআর প্রায় কোটি টাকা জরিমানা করলেও বিক্রেতা থার্মেক্স গ্রুপ থেকে যান একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এরপরও থেমে থাকেনি তার এই অবৈধ ব্যাবসা বাণিজ্য।

বরাবরই এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো আব্দুল কাদির মোল্লার বড় মেয়ের জামাই কোম্পানির ইডি আসাদুজজ্জামান ইমন। এমডির পরেই কোম্পানিতে তার অবস্থান। গত ১৭ বছর নরসিংদী জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদেরকে দিয়ে ইমন এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতো। গত ৫ আগস্টের পর এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে একটি বড় রাজনৈতিক দলের হাতে।

এসব বিষয়ে কাদির মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি নিখাদ খবরকে বলেন, বেক্সিমকো থেকে শুরু করে সবাই কমবেশি এই ব্যবসা করে। আমরা অল্প কিছু করি মাত্র।

বিষয়:

দুর্নীতি
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দুর্নীতি নিয়ে আরও পড়ুন

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ২০ বছর বয়সী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন

৬ ঘণ্টা আগে

খুলনার লবণচরা দরবেশ মোল্লা গলিতে সংঘটিত নৃশংস ট্রিপল মার্ডার রহস্যের পরিধি বাড়ছে। শিশু মোস্তাকিম (৮), ফাতিহা (৬) ও তাদের নানি মহিতুন্নেছা বেগমকে হত্যা করার ঘটনায় এখনও কোনো নিশ্চিত আসামি শনাক্ত হয়নি, তবে সন্দেহের তালিকায় বাদ যাচ্ছে না নিহত শিশুদের পরিবারের সদস্যরাও

৭ ঘণ্টা আগে

নরসিংদীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে এ অভিযান পরিচালনা করে তিনটি পাম্পের পাঁচটি ইউনিট বন্ধ করে দিয়েছ বিএসটিআই। সংস্থাটির আঞ্চলিক কার্যালয় নরসিংদীর সহকারী পরিচালক (মেট্রোলজি) মো: কামরুল পলাশের নেতৃত্বে এবং পরিদর্শক (মেট্রোলজি) মো: আরিফ হোসেন আসিফ ও কাজী শাখাওয়াত হোসেন এ অভিযান পরিচালনা করেন।

১ দিন আগে