মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু বিক্রি করেই গ্রামবাসীর আয় হবে ১০ কোটি টাকা

Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

গ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, প্রতিটি ছোট বড় রাস্তার দুই পাশে সারি সারি লিচুগাছ। প্রতিটি গাছেই রক্তিম বর্ণের টকটকে রসালো পাঁকা লিচু ঝুলছে। বাদ নেই এ গ্রামের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনাসহ পুকুর পাড়, এমনকি ফসলি জমিও। এ যেন লিচুর রাজ্য। প্রথমবার কেউ এ গ্রামে আসলে চোখ জুড়ানো এমন দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়াবেন মূহুর্তেই।

শত বছর ধরে মধু মাস জৈষ্ঠ্য এলেই এমন মন মাতানো দৃশ্যের দেখা মিলে। সব মৌসুমে গ্রামটিতে প্রায় ১০ থেকে ১২কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। তবে চলতি মৌসুমে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া গ্রাম। জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এ লিচু গ্রামের অবস্থান। কালক্রমে গ্রামের নামানুসারে লিচুর নামই এখন মঙ্গলবাড়িয়া লিচু।

এ লিচুর স্বাদ বাজারে অন্যান্য লিচুর চেয়ে ভাল। পাশাপাশি মঙ্গলবাড়ীয়া লিচু আগাম জাতের হওয়ায় অন্যান্য লিচু বাজারে আসার ১৫ দিন আগেই বিক্রি শুরু হয়। তাই মৌসুম এলেই জেলার সবকটি উপজেলার মানুষসহ দূরদূরান্ত থেকে এ গ্রামে ছুটে আসেন লিচু প্রেমী পর্যটকটরা।

1000118067

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে এ লিচু গ্রামে আসা সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার স্বামীর সঙ্গে এ নিয়ে তিন মৌসুম ধরে আসা। ঘুরে ঘুরে দেখছি, যে গাছের লিচু বেশি পছন্দ হবে সে গাছ থেকে লিচু কিনবো। এখানে শুধু লিচু কিনতেই আসা নয়, এত সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতেও আসি আমি। গ্রামে ঢোকার পর থেকে যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই গাছে লাল রঙের রসালো লিচু ঝুলছে।

জেলার নিকলী উপজেলা থেকে আসা কামরুল হাসান বলেন, মৌসুম এলেই অন্যান্য জেলার আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি পাঠাতে এবং নিজের পরিবারের জন্য মঙ্গলবাড়ীয়া লিচু কিনতে আসি। পাশাপাশি পরিবারের সবাই মিলে এমন চোখ জুড়ানো মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করতেও ছুটে আসা হয় একটা দিন সময় করে। দুই'শ লিচু কিনলাম, প্রতি শ লিচুর দাম নিলো ৮শ টাকা করে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর খরার কারণে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর ফলন কম হয়েছে। দেখতে লাল টুকটুকে ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় এ লিচুর খ্যাতি রয়েছে দেশ-বিদেশে। চলতি মৌসুমে ৩০ হাজারেরও বেশী গাছ থেকে এবাও ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির প্রত্যাশা এ গ্রামের চাষিদের।

গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান পেশা লিচু চাষ। এখন প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুম। আর তাই মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। চাষিদের চোখে মুখেও আনন্দের ঝিলিক। দেশের গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসী বাঙালিরাও এ লিচুর স্বাদ উপভোগ করেন বহু বছর ধরে।

লিচু চাষি মো. আফির উদ্দিন জানান, আমার দুই'শ লিচু গাছ রয়েছে। খরার কারণে ফলন নষ্ট হয়েছে।তবে বিক্রি শুরু করেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে ৮থেকে ১০ লক্ষ টাকার লিচু বিক্রি হবে। আমাদের লিচু বাজারে নিতে হয়না। পর্যটকরা যারা ঘুরতে আসেন এখানে তাদের কাছেই বেশিরভাগ লিচু বিক্রি হয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় দুই'শ বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের জনৈক হাশিম মুন্সি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করেন। এ গাছ থেকেই এ উন্নত লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত গ্রামে।

পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ২০০টি পরিবার লিচুচাষের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া এই জাতের লিচু আশপাশের গ্রাম কুমারপু, নারান্দী ও হোসেন্দীতে বিস্তার লাভ করেছে। এবছর বাগানগুলো থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির আশা করছেন চাষিরা।

পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার নূর-ই-আলম জানান, মঙ্গলবাড়িয়ার মাটি লিচু চাষের জন্য উপযোগী। এ গ্রামের উৎপাদিত লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু। প্রতিটি লিচুই গোলাপি রঙের। শাঁস মোটা, রসে ভরপুর, গন্ধও অতুলনীয়।

তিনি আরও জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় ২০০টি পরিবার লিচু চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এছাড়া আশপাশের গ্রাম কুমারপুর, নারান্দী ও হোসেন্দীতেও লিচু চাষ হচ্ছে। এবছর বাগানগুলো থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষিদের যাবতীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

দেশব্যাপী নিয়ে আরও পড়ুন

পঞ্চগড়ে প্রতিটি কৃষকের বাড়িতে সুপারির গাছ লাগানোসহ এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান আকারে সুপারি চাষ করা হচ্ছে। এবারে সুপারির ফলনও হয়েছে ভালো,বাজারে সুপারির দামও ভালো। এবছর সুপারি বিক্রি করে চাষি ও বাগান মালিকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

২ দিন আগে

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে টানা ১০ দিন বন্ধ থাকবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তবে এই সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।

১৩ দিন আগে