উপদেষ্টাদের মতামত এড়িয়ে ৫০৬ কোটি টাকার ফিল্ম সিটি প্রকল্প

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image
প্রতীকী ছবি

বর্তমানে দেশ অর্থনৈতিক সংকটে থাকলেও বিলাসবহুল প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের জন্য উঠছে। ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২)’ নামের ৫০৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আগামী রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা শুরুতে প্রকল্পটি ছোট পরিসরে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা আমলে নেয়নি। এমনকি শেখ হাসিনার সরকারের মেয়াদকালে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে তোলা হলেও অনুমোদন পায়নি।

তখন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৩৭৯ কোটি টাকা। এবার সেটি বাড়িয়ে ৫০৬ কোটি টাকা করা হয়েছে।

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে পাঁচতারা হোটেল ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও পরিকল্পনা উপদেষ্টা গত ২১ এপ্রিল মন্তব্য করেন, ‘প্রথম পর্যায়ে আরো ছোট আকারে, যেমন—হোটেল ও কনভেনশন হল বাদ দিয়ে প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে তিন বছর ছয় মাস মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। গাজীপুরের কবিরপুরে ১০৫ একর জমিতে নির্মাণ করা হবে এই ফিল্ম সিটির দ্বিতীয় ধাপ।

প্রকল্পটির আগে নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি। ফিল্ম সিটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম বাদ গেলেও তাঁর ভাস্কর্য নির্মাণে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এখানে থাকবে আধুনিক শুটিং স্পট, পোস্ট-প্রোডাকশন স্টুডিও, ফ্লোর, কেবল কার, ঝর্না, কটেজ, ইকোপার্কসহ পর্যটকদের জন্য নানা বিনোদনের ব্যবস্থা।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে বিবেচনায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।’ তবে চূড়ান্ত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এই পরামর্শ প্রতিফলিত হয়নি।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত হলে নির্মাতারা দেশেই শুটিং ও টেকনিক্যাল কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবেন। এতে দেশীয় শিল্পে গতি আসবে বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘৫০৬ কোটি টাকা বিনিয়োগে কতটা রিটার্ন আসবে, তা স্পষ্ট নয়। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এ ধরনের বিলাসী ব্যয় কতটা যুক্তিসংগত, সেই প্রশ্ন থেকে যায়।’ তাঁর মতে, বড় বাজেটের প্রকল্পে ক্রয়সংক্রান্ত স্বচ্ছতার ঘাটতি ও সময়সীমা অতিক্রমের ঝুঁকি থাকে। পর্যটন উপযোগী অংশগুলো (যেমন—কটেজ, ইকোপার্ক) রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষণেও প্রকল্প থেকে লাভ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নেট প্রেজেন্ট ভ্যালু (এনপিভি) মাত্র ৩১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, বেনিফিট কস্ট রেশিও (বিসিআর) ১.০৭ এবং ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন (আইআরআর) ১৪ শতাংশ, যা এত বড় প্রকল্পের জন্য খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়।

পরিকল্পনা কমিশনের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এই মুহূর্তে এত বড় ব্যয়ে এই প্রকল্প নেওয়ার প্রয়োজন নেই। পরিকল্পনা উপদেষ্টাও বলেছিলেন, ছোট আকারে শুরু করা হোক। কিন্তু মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য পক্ষের চাপেই প্রকল্পটি অনুমোদনের দিকে এগোচ্ছে।’

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সরকার নিয়ে আরও পড়ুন

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচিত সরকার নেবে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

৫ ঘণ্টা আগে

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিলম্বের কোনো কারণ নেই এবং সরকার নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে সম্পূর্ণ বদ্ধপরিকর

৭ ঘণ্টা আগে

সরকার জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে এমন পুলিশ সদস্য পাওয়া যাচ্ছে না, যিনি ওই তিন নির্বাচনের কোনো একটিতে দায়িত্ব পালন করেননি

৭ ঘণ্টা আগে

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশের সব উপজেলা সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম পর্যাপ্তভাবে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দিয়েছে

১ দিন আগে