গণ-অভ্যুত্থান মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ০০
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

এক নতুন মোড় নিয়ে সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘোষণা করে। বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ দ্বিতীয় অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড এবং প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় দেন।

আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে—শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন। একই মামলায় আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধেও অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়ে সত্য প্রকাশ করায় তার শাস্তি কমানোর কথা জানানো হয়।

রায়ের কাজ শুরু হয় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে, যেখানে ৪৫৩ পৃষ্ঠার বিশদ রায়ের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠ করেন বিচারক। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয় এবং এরপর জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধের প্রথম মামলা হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত ১৭ অক্টোবর প্রথম শুনানিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

শুরুর দিকের মামলাটি একমাত্র শেখ হাসিনাকে ঘিরেই ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে সহআসামি হিসেবে যুক্ত করা হয়। তদন্ত সংস্থা ১২ মে জমা দেয় ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার বিস্তৃত প্রতিবেদন, যার মধ্যে রয়েছে তথ্যসূত্র, জব্দতালিকা, দালিলিক প্রমাণ ও শহীদদের তালিকা।

১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল সেগুলো আমলে নেয় এবং ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। পরে মামুন দোষ স্বীকার করে সত্য উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করলে আদালত তা গ্রহণ করে।

২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন অবশ্য তাদের খালাস প্রার্থনা করেন। রায়ের তারিখ ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করা হয়।

মামলার পাঁচ অভিযোগ

১ম অভিযোগ: ১৪ জুলাই গণভবনের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উল্লেখ করে উসকানি ছড়ানোর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হয়।

২য় অভিযোগ: হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করতে শেখ হাসিনা নির্দেশ দেন—যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বাস্তবায়ন করেন। অডিও রেকর্ডেও এ নির্দেশের প্রমাণ পাওয়া যায়।

৩য় অভিযোগ: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়।

৪র্থ অভিযোগ: রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনাতেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।

৫ম অভিযোগ: আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও একইভাবে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান এবং মামুনের বিরুদ্ধে প্রযোজ্য হয়।

এই রায়ের মাধ্যমে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

আইন-বিচার নিয়ে আরও পড়ুন

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর আইন ও প্রয়োগ বিভাগে সদস্য পদে থাকা এ কে এম বদিউল আলমকে দেশের বাইরে যাত্রা থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ মো. সাব্বির ফয়েজ এই আদেশ দেন।

১ দিন আগে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাঠপর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করার উদ্দেশ্যে বডি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তবে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা কেনার সিদ্ধান্ত হলেও, সাম্প্রতিক পুনর্বিবেচনার পর সংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে

১ দিন আগে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার (১৭ নভেম্বর) দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে থাকা সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে

২ দিন আগে

জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে রাজসাক্ষী হিসেবে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে

২ দিন আগে