সরকার পতনে হাসিনার তিন মন্ত্রীকে প্রভাবিত করেছিল মার্কিন প্রশাসন

নর্থইস্ট নিউজের চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন

প্রতিনিধি
নিখাদ খবর ডেস্ক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি হলো শেখ হাসিনার সরকারের পতন। নর্থইস্ট নিউজ ইনডিয়ার চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পেছনে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ নাকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

সাংবাদিক চন্দন নন্দী এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর কয়েক মাস আগে থেকেই তার সরকারের তিনজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ‘প্রভাবিত’ করেছিল মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’। সেই সঙ্গে তাদের এমনভাবে পরিচালিত করেছিল, যাতে তাদের কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ সরকারের ‘স্বার্থের বিরুদ্ধে’ যায়।

সেই তিনজন হলেন শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত।

নর্থইস্ট নিউজ লিখেছে, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনার সরকার ও আওয়ামী লীগ কেন ব্যর্থ হয়েছিল, তার বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে ওই তিন ব্যক্তির রহস্যজনক ভূমিকার কথা, যা মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এগিয়ে নিতে ভূমিকা রেখেছিল।’

ওই বছর ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা। আর ১৩ আগস্ট রাতে ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে গ্রেফতার করার কথা বলা হল।

ভারতীয় পত্রিকাটি লিখেছে, আরাফাত তার ‘পশ্চিমা যোগাযোগ’ কাজে লাগিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলেই অনেকের ধারণা; তবে তার অবস্থান সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় না।

শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘দরবেশ’ নামে পরিচিতি পাওয়া সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়ে তিনি অবহিত ছিলেন।

সাবেক ওই মন্ত্রীর ভাষায়, ‘দরবেশ’ কার্যত শেখ হাসিনার কাছ থেকে তাদের ‘দূরে সরিয়ে’ রেখেছিলেন।

সেই আওয়ামী লীগ নেতাকে উদ্ধৃত করে নর্থইস্ট নিউজ লিখেছে, ‘তারা কমপক্ষে ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশে এবং বিদেশে দায়িত্বরত এবং অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছিলেন।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই তিনজন যে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করতে পারেন, শেখ হাসিনা কখনোই তা ‘সন্দেহ করেননি’। তবে এখন তিনি তাদের ভূমিকা সম্পর্কে ‘অবগত’।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত তৎপরতার সূচনা নিয়ে দুই রকম তথ্য পাওয়ার কথা লিখেছে নর্থইস্ট নিউজ।

একটি পক্ষ বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ বাংলাদেশের ‘ক্ষমতার পট পরিবর্তনের’ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে।

আরেকটি পক্ষ বলেছেন, সেই পরিকল্পনা কার্যকর করা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের এপ্রিল-মে মাসে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ঢাকায় তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ‘অবাধ ও মুক্ত’ নির্বাচনের ব্যাপারে প্রকাশ্য আলোচনা শুরু করেছিলেন।

২০২২ সালের ২ জুন ভারতের একটি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নর্থইস্ট নিউজ লিখেছে, “ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যিনি বাংলাদেশকে বারবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তিনিও শেখ হাসিনার সরকার উৎখাতের বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ।

“২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে শেখ হাসিনা যখন শেষবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন, তখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে মার্কিন ‘ডিপ স্টেট’ তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চাইছে।”

ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময় দলের ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা তার সরকারের সামনে ছয়টি ‘জটিল সমস্যার’ কথা তুলে ধরেন, যেগুলো ‘মার্কিন চাপ থেকে’ উদ্ভূত।

এর মধ্যে ছিল কোয়াডে যোগদানের প্রস্তাব, জিইওএসওএমআইএ এবং এসিএসএ চুক্তিতে স্বাক্ষর, আমেরিকান কোম্পানিগুলিকে ২৬টি তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ অঞ্চলে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া এবং মার্কিন ‘বার্মা অ্যাক্ট’ অনুযায়ী মিয়ানমার সীমান্ত সমস্যার সমাধানের মত বিষয়।

পত্রিকাটি লিখেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা এখন মনে করছেন, শেখ হাসিনার ‘বিচ্ছিন্নতার’ একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ৮ থেকে ১০ জুলাইয়ের ‘বিপর্যয়কর’ চীন সফর। নির্ধারিত তারিখের এক দিন আগে তার দেশে ফেরার মধ্যে এই ইঙ্গিতই মিলেছিল যে, তার চীন সফরের পরিকল্পনা সফল হয়নি।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা নর্থইস্ট নিউজকে বলেছেন, ভারতও ওই সময় শেখ হাসিনার প্রতি নাখোশ ছিল, কারণ তাদের বিচারে ওই সময় তার চীন সফর ছিল কৌশলগতভাবে ‘ভুল সিদ্ধান্ত’।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

আওয়ামী লীগ নিয়ে আরও পড়ুন

সাক্ষাতে বাংলাদেশের শিল্প বাণিজ্যের সম্ভাবনা, নতুন বিনিয়োগ ও তার পরিবেশ, সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে শ্রম আইন ২০২৫ নিয়ে আলোচনা হয়

১৬ ঘণ্টা আগে

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমাদের যে চার দিনের কর্মসূচি ছিল সেটি আমরা দুই দিন পালন করেছি। জনস্বার্থে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হরতাল প্রত্যাহার করা হয়েছে

১৭ ঘণ্টা আগে

সরকার পরিচালনার যে অভিজ্ঞতা দরকার তার অভাব এইসরকারের রয়েছে। সাংবাদিকদের সাথে সরকারের অভিজ্ঞতার অভাবে দেশে মবের সৃষ্টি হচ্ছে, বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচন যেকোনো মূল্যেই করতে হবে

১৭ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে। আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসনের মাধ্যমেই মূলত কল্যাণসাধন সম্ভব। অন্য কোন তন্ত্র-মন্ত্র ও চেতনাধারীদের দ্বারা দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি আর হবেও না। যা বিগত দিনে বার বার প্রমাণিত হয়েছে

১৮ ঘণ্টা আগে