খুলনা ১ আসনে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনায় জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দী

প্রতিনিধি
খুলনা
Thumbnail image
ছবি: প্রতিনিধি

খুলনা-১ (বটিয়াঘাটা–দাকোপ) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীকে ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও জামায়াতের প্রার্থী হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি ভারতের হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের এক নেতার সঙ্গে তাঁর তোলা ছবি ভাইরাল হওয়ায় বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে।

কৃষ্ণ নন্দী একজন ব্যবসায়ী। তার গ্রামের বাড়ি ডুমুরিয়ার চুকনগর এলাকায়। চুকনগর দিব্যপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি পরিবারের ব্যবসা পরিচালনায় যুক্ত হন। তার ব্যবসার মধ্যে রয়েছে মোটরসাইকেল শোরুম, তেল, রড–সিমেন্ট ও টিনের ব্যবসা। কৃষ্ণ নন্দী ২০০৩ সালে সাবেক জামায়াত এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের হাত ধরে দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তবে স্থানীয়রা জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক সহিংসতার আগে তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ্যে সক্রিয় ছিলেন না। এরপর পুনরায় তিনি জামায়াতে সক্রিয় হন এবং উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। ৩১ অক্টোবর জামায়াতের হিন্দু সম্মেলনে তার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যোগদান করেন।

সাম্প্রতিক কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওয়ার্ল্ড হিন্দু স্ট্রাগল কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি শিপন কুমার বসুর সঙ্গে কৃষ্ণ নন্দীর ছবি ভাইরাল হয়েছে। সাংবাদিক জুলকার নাইন সায়ের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেন। কৃষ্ণ নন্দী বলেন, “ছবিতে থাকা ব্যক্তিকে আমি চিনি না। এটি এআই-জেনারেটেড ছবি এবং আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।”

তার রাজনৈতিক যাত্রা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কৃষ্ণ নন্দী ২০০৯-২০১৪ সালের মধ্যে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ক্ষুব্ধ জনতা তার ব্যবসা ও বাড়িতে আগুন দেয়। কৃষ্ণ নন্দী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ব্যবসায়ীর হিসেবে মন্ত্রীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল, কিন্তু ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। আমি ২০০৩ সাল থেকে জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত।”

খুলনা-১ আসন দেশের সবচেয়ে বেশি হিন্দু অধ্যুষিত আসনগুলোর মধ্যে একটি। দাকোপে ৫৪.৪৪% এবং বটিয়াঘাটায় ২৭.৫৬% ভোটার হিন্দু। মোট ভোটারের প্রায় ৪৩% হিন্দু, আর খ্রিস্টানও ২% এর বেশি। স্বাধীনতার পর থেকে সংখ্যালঘু প্রার্থীরাই এ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সালে কুবের চন্দ্র বিশ্বাস, পরবর্তীতে প্রফুল্ল কুমার শীল ও পঞ্চানন বিশ্বাস জয়ী হয়েছেন। ২০২৪ সালে ননী গোপাল মন্ডল পুনরায় জয়ী হন।

জামায়াত দীর্ঘদিন এ আসনে প্রার্থী দেয়নি। প্রায় তিন দশক পর এবার প্রথমে মাওলানা আবু ইউসুফকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে পরিবর্তন করে কৃষ্ণ নন্দীকে চূড়ান্ত প্রার্থী করা হয়। বিএনপিও এখানে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছে; তারা পূর্বের মতো এবারও আমীর এজাজ খানকে প্রার্থী করেছে।

কৃষ্ণ নন্দী দাবি করেন, তার ব্যাপক আত্মীয়স্বজন ও পরিচিত জন এ এলাকায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, “দাকোপ–বটিয়াঘাটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে। হিন্দু–মুসলিম সবাইকে একত্রিত করেই আমি নির্বাচন করবো।”

সব মিলিয়ে খুলনা-১ আসনে জামায়াতের কৃষ্ণ নন্দীকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক এবং ভোটারদের মধ্যে প্রশ্ন যে তিনি কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকতে পারবেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

জামায়াতে ইসলামী নিয়ে আরও পড়ুন

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির উদ্যোগে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১২ ঘণ্টা আগে

শেরপুর সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব পালন করছেন হজরত আলী। তিনি এর আগে শেরপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু প্রমোশন না হয়ে সেখানে তার বিশাল ডিমোশন হয়েছে। এতে সহজেই বুঝা যায় একজন রাজনৈতিক নেতা কতটা দেউলিয়া হলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক থেকে তিনি এ

১৩ ঘণ্টা আগে

রাজশাহী সদর (রাজশাহী-২) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজশাহীর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মিনুর পক্ষে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন মহানগর বিএনপির নেতারা।

১৪ ঘণ্টা আগে

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) গাজীপুরের টঙ্গীস্থ আহসান উল্লাহ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, গাজীপুর-২ আসনের বর্তমান মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা হোক।

১৪ ঘণ্টা আগে