ক্যাঙারুর রঙে সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি

প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

রং প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ক্যাঙারু পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড রঙে সবচেয়ে বেশী সীসার পরিমাণ পাওয়া গেছে। এই রঙে সিসার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার পিপিএম পর্যন্ত। সিসা অত্যন্ত বিষাক্ত পদার্থ, যা গুরুতর স্বাস্থ্যসমস্যা সৃষ্টি করে। এর কোনো মাত্রাকেই নিরাপদ হিসাবে গণ্য করা হয় না।

অথচ তাদের স্লোগান “রঙের ছোঁয়ায় বদলে যাক পৃথিবী”। আইন অনুযায়ী রঙে সিসা ব্যবহারের নিরাপদ মাত্রা মাত্র সর্বোচ্চ ৯০ পিপিএম। ক্ষতিকারক এই কারখানাটি খোদ রাজধানীর ৪১৩/সি খিলগাতে অবস্থিত। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডোর সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া ডেকোরেটিভ রঙে সীসার এই উদ্‌বেগজনক মাত্রার তথ্য এসেছে।

ক্যাঙ্গারুর পরেই রয়েছে ইউরো ব্র্যান্ড (১ লাখ ৭০ হাজার, পিপিএম), নাহার (৮১ হাজার), নিউ টুয়া (৭৪ হাজার), টপ সিল (৫৪ হাজার), মদিনা বেটার, রুবিল্যাক (১৯ হাজার), মেঘনা প্লাস (১৮ হাজার), র‍্যামি (১৮ হাজার) ও তুর্কি (১৬ হাজার)। এসব রঙের বেশির ভাগই ছিল হলুদ বা সোনালি-হলুদ রঙের অয়েলভিত্তিক ডেকোরেটিভ রং। এসব রঙেই গবেষণায় সবচেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি ধরা পড়ে। লাল ও সাদা রঙেও সিসার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেশি ছিল।

তারা বাজারের প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দখল করে আছে।

গবেষণায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯৩টি (৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ) নমুনায় সিসার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএমের নিচে ছিল। বাকি ৬৮টি নমুনা (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) বিএসটিআই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় সিসার পরিমাণ ১ হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশে ৫০ হাজার পিপিএম ছাড়িয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ২১ দশমিক ৬ শতাংশ রঙে (৩৫টি নমুনা) সিসা মুক্ত বা পরিবেশবান্ধব লেখা লেবেল ছিল। জরিপে অংশ নেওয়া দোকানদারদের অর্ধেকের বেশি বিএসটিআই নির্ধারিত ৯০ পিপিএম সিসা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, ১০ হাজার পিপিএমের বেশি সিসাযুক্ত সব নমুনাই এসেছে ছোট বা অনানুষ্ঠানিক উৎপাদকদের কাছ থেকে। পাশাপাশি চীন, সিঙ্গাপুর ও কিছু অঘোষিত আমদানি করা রঙেও অসংগতিপূর্ণ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং কাস্টমস স্ক্রিনিংয়ে দুর্বলতা নির্দেশ করে।

এসডোর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, “আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব প্রকার রং থেকে সিসা নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ দাবি করছি। উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহারে সম্মিলিত দায়বদ্ধতার পক্ষে আমরা কথা বলছি।“

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, "এই গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ আমাদের লক্ষ্য কাউকে দোষারোপ করা নয়, বরং একটি সম্মিলিত সংকট মোকাবিলা করা, যেখানে শিল্পকলা, উৎপাদন এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তাকে অবশ্যই আপোশহীন একটি অংশ হতে হবে।”

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা বলেন, "আমরা যে রং ব্যবহার করি, তা যদি নিরাপদ না হয়, তবে এটি প্রতিটি পরিবার এবং শিল্পীর জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মানসিক উদ্‌বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ অর্জনে আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।"

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

বিশেষ সংবাদ নিয়ে আরও পড়ুন

গবেষণায় ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৯৩টি (৫৭ দশমিক ৮ শতাংশ) নমুনায় সিসার পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএমের নিচে ছিল। বাকি ৬৮টি নমুনা (৪২ দশমিক ২ শতাংশ) বিএসটিআই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ নমুনায় সিসার পরিমাণ ১ হাজার পিপিএমের বেশি এবং ৩ দশমিক ১ শতাংশে ৫০ হাজার পি

২ দিন আগে

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুস্করনী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে সোমবার (২৭ অক্টোবর) বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুখরিত হয়ে ওঠে সদ্যপুষ্করনী । ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের কার্যক্রম পরিদর্শন এবং স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ঘনিষ্ঠভাবে জানার উদ্দেশ্যে আগমন করেন

৫ দিন আগে

দেশে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৫টি। শেখ হাসিনা সরকার গত পনেরো বছরে দেশে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে অপরিকল্পিতভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রে চাহিদাও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি

৭ দিন আগে

বন্ধু মনে হলেই, বন্ধু হয়ে গেছি। সে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান দেখার সময় আমার নেই। তবে এর জন্য আমার মাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এবং এ কারণে আমার পিঠে বেত এবং গাছের ডাল ভাঙা হয়েছে। কিন্তু আমি নিজের জগতে অবিচল

৭ দিন আগে