উর্দু শব্দ ছাড়া হিন্দিতে কথোপকথন সম্ভব নয়: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

প্রতিনিধি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
Thumbnail image
বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রন। ছবি: সংগৃহীতছবি: সংগৃহীত

ভাষার সঙ্গে ধর্ম মেলানো ঠিক নয় এবং উর্দুকে মুসলমানদের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা বাস্তবতা ও বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের একটি ‘দুঃখজনক বিচ্যুতি’ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।

মহারাষ্ট্রের একটি পৌর পরিষদের নামফলকে উর্দু ব্যবহারের বিরোধিতা করে দায়ের করা একটি পিটিশন খারিজের সময় শীর্ষ আদালত এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন।

এসময় বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার পাতুরের সাবেক কাউন্সিলর বর্ষাতাই সঞ্জয় বাগাদের একটি পিটিশনের শুনানি করছিলেন। বাগাদে পৌর পরিষদের নামফলকে মারাঠির পাশাপাশি উর্দু ব্যবহারের বিরোধিতা করেন। তিনি যুক্তি দেন, পৌর পরিষদের কাজ শুধু মারাঠিতেই পরিচালিত হতে পারে। সাইনবোর্ডে উর্দু ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য।

এর আগে, পরিষদ তার পিটিশন খারিজ করে দেয় এবং বোম্বে হাইকোর্ট থেকেও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি। এরপর সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘ভাষা ধর্ম নয়’ এবং এটি ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না। আদালত আরও বলেন, ‘ভাষা একটি সম্প্রদায়ের, একটি অঞ্চলের, জনগণের; কোনো ধর্মের নয়। ভাষা হলো সংস্কৃতি। ভাষা একটি সম্প্রদায় এবং তার জনগণের সভ্যতার অগ্রগতি পরিমাপ করার মাপকাঠি। উর্দু ভাষার ক্ষেত্রেও তাই, যা গঙ্গা-যমুনা তেহজিব (সংস্কৃতি) বা হিন্দুস্তানি তেহজিবের সর্বোত্তম উদাহরণ, যা উত্তর ও মধ্য ভারতের সমভূমির মিশ্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তবে ভাষা শিক্ষার হাতিয়ার হওয়ার আগে, এর প্রাথমিক এবং প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যোগাযোগ স্থাপন।’

আদালত উল্লেখ করেছেন, পৌর পরিষদ নামফলকে উর্দু রেখেছে, কারণ অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ভাষাটি বোঝেন। আদালত বলেছেন, ‘পৌর পরিষদ শুধু একটি কার্যকর যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল।’

এ বিষয়ে আদালত আরও বলেছেন, ‘উর্দুর প্রতি একদেশদর্শিতার মূলে রয়েছে এই ভুল ধারণা যে, উর্দু ভারতের বাইরের ভাষা। আমরা মনে করি, এই ধারণাটি ভুল কারণ উর্দু, মারাঠি ও হিন্দির মতোই একটি ইন্দো–আর্য ভাষা। এটি এই মাটিতেই জন্ম নেওয়া ভাষা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের মানুষের মধ্যে ধারণা বিনিময় এবং যোগাযোগের প্রয়োজনের কারণে ভারতে উর্দুর বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, এটি আরও পরিশীলিত হয়েছে এবং অনেক বিখ্যাত কবির পছন্দের ভাষা হয়ে উঠেছে।’

সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত ভাষা উর্দু শব্দে পরিপূর্ণ, এমনকি অনেকে সেটি জানেনই না। এটা বলা ভুল হবে না যে, উর্দু বা উর্দু থেকে উদ্ভূত শব্দ ব্যবহার না করে হিন্দিতে দৈনন্দিন কথোপকথন করা সম্ভব নয়। এমনকি ‘হিন্দি’ শব্দটি ফারসি শব্দ ‘হিন্দভি’ থেকে এসেছে বলেও আদালত মত জানিয়েছেন।

আদালত বলেন, হিন্দি ও উর্দুর মিলন উভয় পক্ষের কট্টরপন্থীদের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এবং হিন্দি আরও সংস্কৃত প্রভাবিত এবং উর্দু আরও ফারসি হয়ে উঠেছে। ঔপনিবেশিক শক্তি ধর্মীয় ভিত্তিতে দুটি ভাষাকে বিভক্ত করে একটি বিভেদ তৈরি করেছিল। এখন হিন্দি হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দু মুসলমানদের ভাষা হিসেবে বোঝানো হয়, যা বাস্তবতা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ধারণা থেকে একটি দুঃখজনক বিচ্যুতি।

আদালত আরও বলেন, একটি পৌর পরিষদ স্থানীয় সম্প্রদায়কে পরিষেবা দেয় এবং তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করে। যদি পৌর পরিষদের আওতাধীন এলাকার মানুষ বা কোনো গোষ্ঠী উর্দু ভাষার সঙ্গে পরিচিত হন, তাহলে সরকারি ভাষা অর্থাৎ মারাঠির পাশাপাশি, অন্তত পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে উর্দু ব্যবহার করলে কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়। ভাষা ধারণা বিনিময়ের একটি মাধ্যম যা বিভিন্ন মতামত ও বিশ্বাস পোষণকারী মানুষকে কাছাকাছি আনে। এটি তাদের বিভেদের কারণ হওয়া উচিত নয়।

এ বিষয়ে আদালত যোগ করেন, একটি ভাষার প্রতি আমাদের ভুল ধারণা, এমনকি সম্ভবত আমাদের সংস্কারগুলোকেও সাহসিকতার সঙ্গে এবং সত্যের নিরিখে পরীক্ষা করতে হবে, যা আমাদের জাতির এই মহান বৈচিত্র্য: যেটি আমাদের শক্তি, তা কখনই আমাদের দুর্বলতা হতে পারে না। আসুন আমরা উর্দু এবং প্রতিটি ভাষার সঙ্গে বন্ধুত্ব করি।

আদালত রায় দিয়েছেন, অতিরিক্ত ভাষা প্রদর্শন ২০২২ সালের মহারাষ্ট্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (সরকারি ভাষা) আইন লঙ্ঘন করে না। ওই আইনে সরকারি কার্যালয়ের সাইনবোর্ডে মারাঠি ভাষা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এসময় আদালত দায়েরকৃত পিটিশন খারিজ করে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের দেওয়া যুক্তির সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে একমত যে,২০২২ সালের আইনে বা আইনের অন্য কোনো বিধানে উর্দু ব্যবহারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আমাদের মতে, আপিলকারীর পুরো বিষয়টি আইনের একটি ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তাই এই মামলায় হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণ আমরা দেখছি না।’

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

ভারত নিয়ে আরও পড়ুন

ইয়েমেন সরকারের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আওয়াদ বিন মুবারক পদত্যাগ করেছেন। শনিবার (৩ মে) তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আর খবরটি নিশ্চিত করেছে রয়টার্স। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী মুবারক জানিয়েছেন, তিনি ‘অনেক সমস্যার’ সম্মুখীন হয়েছেন, যার মধ্যে সরকার পুনর্গঠন করতে না পারাও অন্যতম।

৫ মিনিট আগে

অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচনে ফের নিরঙ্কুশ জয়ের মালা পড়তে যাচ্ছেন দেশটির লেবার পার্টি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলপ্রধান ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতা পেলেন।

৮ মিনিট আগে

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভুত মার্কিন শিশুকে হত্যার দায়ে জোসেফ কুবা নামক যুক্তরাষ্ট্রের এক ব্যক্তিকে ৫৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। শুক্রবার ৭৩ বছর বয়সী জোসেফ কুবাকে ওই সাজা দেন বিচারক অ্যামি বার্টানি-টমজাক। অনলাইন আল জাজিরা।

২ ঘণ্টা আগে

সম্প্রতি কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ দাবি করছে পাকিস্তান। দেশটির সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। আর এবার ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিক অর্চনা তিওয়ারি কাশ্মীর হামলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

৮ ঘণ্টা আগে