ভারতে আ:লীগের কার্যালয় বন্ধের আহ্বান

নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দেয়া বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত

প্রতিনিধি
নিখাদ খবর ডেস্ক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের মাটিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে কড়া অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার (২০ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক অফিস বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত ও ফৌজদারি মামলার পলাতক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা এখনও ভারতে অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন গত ২১ জুলাই দিল্লি প্রেস ক্লাবে একটি এনজিওর ব্যানারে সভা করার চেষ্টা করেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করেন। বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

কলকাতা লাগোয়া উপশহরের একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে'দলীয় দফতর' খুলেছে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ এবং মধ্যম স্তরের নেতারা এ বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াত করছেন গত কয়েক মাস ধরে। পাঁচশো বা ছয়শো স্কোয়ার ফুটের এই অফিস সম্পর্কে জানেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ স্তরের অনুমোদন ছাড়া কোন ভাবেই এই দলীয় কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ কাজকর্ম চালাতে পারত না।

তবে অফিসের বাইরে কোনো সাইন বোর্ড নেই। ভিতরে শেখ হাসিনা অথবা শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি নেই। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক এখানেই হয়। এক সাথে ৩০-৩৫ জনের বৈঠক করা যায় এই দফতরে। এছাড়া ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো, যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে করেন তারা।

এদিকে দিল্লিতে শেখ হাসিনার জন্য একটি রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আগামীতে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ভারতের ডিপ স্টেট তথা গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনা এবং সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে এই রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দিল্লির এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের জন্য এক অশনিসংকেত বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। শেখ হাসিনার জন্য রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এক ভয়াবহ হস্তক্ষেপ। দিল্লির আধিপত্যবাদী এই আগ্রাসন মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের ঐক্যের বিকল্প নেই।

কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়া দিল্লির যে সুরক্ষিত ভবনে শেখ হাসিনা অবস্থান করছেন সেই ভবনেই তার জন্য সচিবালয় স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক কমিউনিকেশন ফ্যাসিলিটিজসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই সচিবালয়ে। শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ এবং বার্তা আনা-নেওয়ার জন্য দিল্লির একজন প্রভাবশালী বাঙালি সাংবাদিককে নিয়োগ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের লক্ষ্যে লন্ডনে একটি লবিং ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি জাতিসংঘে তোলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে চাপ দিতে স্টিভেন পল্‌স কে সি এবং অ্যালেক্স টিনসলে নামের ব্রিটেনের দুই বিখ্যাত আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যাতে অংশ নিতে পারে সে জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে এই দুই আইনজীবীর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জাতিসংঘে একটি আবেদনও করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের এ ধরনের কার্যকলাপ বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট অবমাননা। এতে শুধু দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার সম্পর্কই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক রূপান্তর প্রক্রিয়াতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বাংলাদেশে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কের ওপরও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

সাবেক একাধিক মন্ত্রী, দ্বাদশ সংসদের অন্তত ৮০ জন সাবেক সংসদ সদস্য, তারও আগে সংসদ সদস্য ছিলেন এমন ১০-১২ জন,আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সম্পাদক, নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হুসেইন, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মেয়রসহ শীর্ষ নেতার বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদেরও কলকাতার এ অফিসে দেখা গেছে।

এদের কেউ কেউ সপরিবারে থাকেন, আবার কোথাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলেও একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। কারও পরিবার মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে এসেও কিছুদিন কাটিয়ে যান।

সহযোগী সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাও থাকেন কলকাতার আশেপাশেই। কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আওয়ামী লীগের যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বাস করছেন, তাদের প্রায় সবাই 'পার্টি অফিসে' যাতায়াত করে থাকেন।

গত এক বছরের কিছুটা কম সময় ধরে ভারত থেকেই আওয়ামী লীগ পরিচালিত হচ্ছে। দলটির নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির কাছাকাছি কোথাও থাকেন, আর বড় অংশ থাকেন কলকাতা সংলগ্ন অঞ্চলে।

গত ৩১শে জুলাই শীর্ষ নেতৃত্বের কয়েকজনকে দিল্লিতে এক বৈঠকে ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ওই বৈঠকের বিষয়টি বিবিসি বাংলার কাছে নিশ্চিত করেছিলেন, তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, কোথায় বৈঠক হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি ওই নেতারা।

দলের নেত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকটি ছাড়া এবং নিজেদের মধ্যে সশরীরে দেখা সাক্ষাৎ এবং বৈঠক ছাড়া দলটির বাকি সব কাজই চলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে।

বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের জন্য আলাদা হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ইত্যাদি গড়া হয়েছে। এছাড়া নিয়মিতই লাইভ অনুষ্ঠান করে থাকে দলটি। এরকম লাইভ অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝেই যোগ দেন শেখ হাসিনা নিজেও।

সেসব আলোচনাগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা যেমন হয়, তেমনই আবার মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মী – যারা বাংলাদেশেই থেকে গেছেন, তাদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়ে থাকে।

ইতোমধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন, "তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে আমরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে পারছি, তাদের মতামত জানতে পারছি, কী করণীয় সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে পারছি।"

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ ভারতের এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশের জন্য এক অশনি সংকেত আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটা ভারতের চিরাচরিত একটি আচরণ। ভারত দালাইলামাকে আশ্রয় দিয়ে বছরের পর বছর রেখেছে এবং দালাইলামা প্রকাশ্যে তার কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এখন বাংলাদেশের দালাইলামা শেখ হাসিনার জন্যও একই ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। শেখ হাসিনাকে তারা পুষবে। শেখ হাসিনাকে তারা শুধু রাজনৈতিক কার্যালয়ই দেবে না। আর্থিক সুবিধাসহ যা প্রয়োজন তাই দেবে। এটাই তাদের আধিপত্যবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

ভারত নিয়ে আরও পড়ুন

ভারতের মাটিতে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিষয়ে কড়া অবস্থান জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বুধবার (২০ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের সব রাজনৈতিক অফিস বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

৯ ঘণ্টা আগে

এ নিয়োগের মধ্য দিয়ে তিনি বর্তমান কাউন্সিলর (হজ) বিসিএস (প্রশাসন) ২২তম ব্যাচের যুগ্মসচিব মো. জহিরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হলেন

১৮ ঘণ্টা আগে

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির সংসদ ভবনে আত্মহত্যা করেছেন তরুণ সংসদ সদস্য এমেলি পেলটোনেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সী এই এমপি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিনিধিত্ব করতেন।

১৯ ঘণ্টা আগে

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ভোরবেলায় মালুমফাশি এলাকার প্রত্যন্ত উঙ্গুয়ান মানতাউ গ্রামে মুসল্লিরা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন। তখনই বন্দুকধারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটে

২১ ঘণ্টা আগে