মোঃ মাজহারুল পারভেজ
সাভারের গৃহিণী ফিরোজা বেগম। সম্প্রতি ঘুরতে যান রংপুরে। বাসে কথা হয় পাশের সিটের রংপুরের রাজুর সঙ্গে। দীর্ঘ পথে লম্বা আলাপ বেশ জমে উঠে। এক পর্যায়ে ফিরোজা রাজুর কাছে জানতে চায় তিনি কি করেন। রাজু জানান, তিনি অনলাইনে ব্যবসা করেন। টাকা বিনিয়োগ করলেই টাকা আসে। আর তিনি দেশ বিদেশ ঘোরেন। রাজুর কাছ থেকে ব্যবসাটি শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন ফিরোজা। আর রাজুও মন্ত্রের মত শিখিয়ে দিল সবকিছু!
প্রথম ধাপে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন ফিরোজা। বিনিয়োগের পর প্রতিদিন ৩২০ টাকা করে পেতে থাকেন। পরে ৬ হাজার টাকা করে মাত্র ১২ হাজার টাকায় ২ টি রোবট কিনে ফেলেন। ২টি এক সাথে কেনায় আবার একটা রোবট দেয়া হয় বিনামূল্যে। দিন যত যায়, ব্যবসা ভালোই জমে ওঠে ফিরোজার। এরপর ২৫ হাজার টাকার আরো একটি রোবট কেনেন। প্রতিদিন মুনাফা পান ৯৭৫ টাকা করে। ২০ হাজার ৪’শ টাকা লাভও পেয়েছেন । এরপর থেকে আর থেমে নেই ফিরোজা। বিনিয়োগের নেশায় খালার দেয়া ৯ মাসের কন্যার সোনার হার বিক্রি করে ৮ হাজার টাকা করে ৪০ দিনের জন্য ফিক্সড বিনিয়োগ করেছেন ৫টা। প্রতি ৮ হাজারে ৪০ দিন পর ২৭ হাজার টাকা দেয়ার কথা। চলতি মাসের ২৬ তারিখে বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন সব বন্ধ। যিনি তাকে এই ব্যবসা শিখিয়েছেন সেই রাজুর ফোন ও বন্ধ। এখন তিনি কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। এক রকম দিশেহারা ফিরোজা!
ফিরোজার মতো আরেকজন ভুক্তভোগী এমডি ওয়ালিউল্লাহ। থাকেন রাজধানীর রামপুরায়। তিনি নিখাদ খবরকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শফিউল ও বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে মিস্ট্রায়াল এআই থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি প্যাকেজ কিনেছিলেন। কিছু টাকা দৈনিক মুনাফা পেলেও ৩৬ হাজার টাকা হারিয়েছেন এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ভুক্তভোগী নিখাদ খবরকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শফিউল দীর্ঘদিনের পরিচিত হওয়ায় তিনি ও আত্মীয়-স্বজন মিলে মিস্ট্রায়াল এআইতে অন্তত ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন সব শেষ! পরিবারকে কোনো উত্তর দিতে পারছেন না মধ্যবয়সী এই ভুক্তভোগী।
নিখাদ খবর কথা বলেছে কুড়িগ্রাম ও রংপুরের ভুক্তভোগীদের সঙ্গেও। যারা ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে তারা প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে টাকা পাবেন এ লোভে পড়ে সদস্যরা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। কুড়িগ্রামের শহীদুল নামে এক ভুক্তভোগী জানান, লোভে পড়ে তার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেছে। এখন কি করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঋণ করেও বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। বিকাশ-নগদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হয়। ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন তাকে দেয়া হতো ৩২০ টাকা লাভ। তবে এত অল্প বিনিয়োগ হলে তো আর বড় লাভ আসবে না। এ জন্য ৫০ হাজার, এমনকি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহকরা।
বিনিয়োগ যত বেশি, লাভের পরিমাণও তত বেশি দিতো কোম্পানিটি। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আবার মাঝে মাঝে লোকসান দেখানো হতো। গ্রাহকরা জানান, মাসে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের ওপর লাভ পাওয়া যেত।
প্রতারকরা গ্রাহকদের বোঝাত, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবোটিক লেনদেন করত । অর্থাৎ রোবট নিজেই প্রতিদিন লেনদেন করত আর তাদের লাভ এনে দিত। এতে কোনো ব্যক্তি হাত নেই।
শুধু বিনিয়োগের ওপর লাভই নয়, কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারলে তাদের লাভের ওপর পাওয়া যেত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। এমন করে কারও মাধ্যমে ১০০ জন গ্রাহক বিনিয়োগ করলে তার পদবি হতো এজেন্ট। কমিশন আর নিজের বিনিয়োগের অর্থ মিলে ওই কথিত এজেন্ট মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারত।
রংপুরের ভুক্তভোগী তরুণ জুলহাস জানান, তাদের এজেন্টের নাম শহীদুল । শহীদুল ইতোমধ্যে তার ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রুপের মধ্যেও নাই। তাদের গ্রুপে মোট সদস্য ৫০০ জন। জুলহাসের মাত্র ৫ হাজার টাকা লস হলেও অন্যদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে।
বিকাশে ও নগদে কুড়িগ্রামের সদরের পাটেশ্বরির মো: কামরুল ইসলামের সোহাগ মিয়া এই নম্বরে ০১৮৯২৫৫২৫৯৫ অ্যাকাউন্ট খুলে ৮৫ হাজার টাকা ও এই নম্বরে ০১৩২৫৪৯৬৮৮৮ অ্যাকাউন্ট খুলে মোট ৪৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন পুরোটাই লস!
ভুক্তভোগীরা নিখাদ খবরকে জানিয়েছেন, শিগগিরই প্রতারণার ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান সবাই।
অনুসন্ধানে মিস্ট্রায়াল এআই, বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস বন্ধ পাওয়া গেছে। পাওয়া যায়নি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ। গ্রাহকরাও এসব গ্রুপে ঢুকতে পারছেন না। সবাইকে জানানো হয়েছে সবকিছু হ্যাক হয়ে গেছে। গ্রাহকরা বলছেন, কমপক্ষে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন দেশের অন্তত ৫ লাখ গ্রাহক। ভয়াবহ এক প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছিল মিস্ট্রায়াল এআই, বাংলাদেশ। লাখ লাখ তরুণের স্বপ্ন লুট করে এখন তারা পালানোর পথ খুঁজছে। অ্যাপস অচল হয়ে যাওয়ার পরও প্রতারকরা নতুন ফাঁদ তৈরি করেন। প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপগুলোতে প্রচারণা চালান, কোম্পানির হাতে ওয়েবসাইটটির আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের সাথে যুক্ত হতে হলে নতুন করে আবার ৪ হাজার টাকার প্যাকেজ কিনতে হবে। সরল বিশ্বাসে ৪ হাজার টাকার প্যাকেজও কিনেছেন লাখো তরুণ-তরুণী।
নিখাদ খবরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শুধু রাজধানী ঢাকা, সাভার, কুড়িগ্রাম, রংপুর নয়-দেশের অন্তত ৩৫টি জেলায় গোপনে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে মিস্ট্রায়াল এআই-এমএ। মূলত ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেটুইউ এর মতো অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তারা। সারাদেশে কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করে মুনাফার অতিলোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করেছে তারা।
রোবট দিয়ে আয়ের নানা প্রলোভন দেখিয়ে সারাদেশ থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ লোককে যুক্ত করেছে মিস্ট্রায়াল এআই এর প্রতারক চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। গত দুইদিন ধরে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ওয়েবসাইট আর অ্যাপস খুলে দীর্ঘদিন ধরে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানে না।
নিখাদ খবর কথা বলে ডিসি, ডিবি (উত্তর)-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম হাসান মো. নাসের রিকাবদারের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা এমন ঘটনাকে আশঙ্কার চোখে দেখছেন। তারা বলছেন, অ্যাপসের মাধ্যমে এমন প্রতারণা হলে পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।
উদাহরণ টেনে তিনি আরও জানান, ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেটুইউ- এমন সব কোম্পানি একসময় মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের কথা বলে প্রতারণা করেছে। তবে অ্যাপের মাধ্যমে এমন প্রতারণা দ্বিগুণ ভয়ংকর। আগে কারও হাতে হাতে প্রতারণা হতো, কোনো বিপদ হলে তাকে ধরা যেত। শুধু প্রযুক্তি দিয়ে এমন প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনলাইন প্রতারণায় এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নিখাদ খবরকে জানান, বিএফআইইউ ইতোমধ্যে এমন ১১০টিরও বেশি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিনিয়তই মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের সাবধানতার বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, নাগরিক হিসেবেও তো দায়িত্ব রয়েছে। যেই-সেই জায়গায় কেন আমি বিনিয়োগ করব। মানুষ সচেতন না হলে আমাদের পক্ষে আর কতটা করা সম্ভব?
সাভারের গৃহিণী ফিরোজা বেগম। সম্প্রতি ঘুরতে যান রংপুরে। বাসে কথা হয় পাশের সিটের রংপুরের রাজুর সঙ্গে। দীর্ঘ পথে লম্বা আলাপ বেশ জমে উঠে। এক পর্যায়ে ফিরোজা রাজুর কাছে জানতে চায় তিনি কি করেন। রাজু জানান, তিনি অনলাইনে ব্যবসা করেন। টাকা বিনিয়োগ করলেই টাকা আসে। আর তিনি দেশ বিদেশ ঘোরেন। রাজুর কাছ থেকে ব্যবসাটি শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন ফিরোজা। আর রাজুও মন্ত্রের মত শিখিয়ে দিল সবকিছু!
প্রথম ধাপে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন ফিরোজা। বিনিয়োগের পর প্রতিদিন ৩২০ টাকা করে পেতে থাকেন। পরে ৬ হাজার টাকা করে মাত্র ১২ হাজার টাকায় ২ টি রোবট কিনে ফেলেন। ২টি এক সাথে কেনায় আবার একটা রোবট দেয়া হয় বিনামূল্যে। দিন যত যায়, ব্যবসা ভালোই জমে ওঠে ফিরোজার। এরপর ২৫ হাজার টাকার আরো একটি রোবট কেনেন। প্রতিদিন মুনাফা পান ৯৭৫ টাকা করে। ২০ হাজার ৪’শ টাকা লাভও পেয়েছেন । এরপর থেকে আর থেমে নেই ফিরোজা। বিনিয়োগের নেশায় খালার দেয়া ৯ মাসের কন্যার সোনার হার বিক্রি করে ৮ হাজার টাকা করে ৪০ দিনের জন্য ফিক্সড বিনিয়োগ করেছেন ৫টা। প্রতি ৮ হাজারে ৪০ দিন পর ২৭ হাজার টাকা দেয়ার কথা। চলতি মাসের ২৬ তারিখে বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু এখন সব বন্ধ। যিনি তাকে এই ব্যবসা শিখিয়েছেন সেই রাজুর ফোন ও বন্ধ। এখন তিনি কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। এক রকম দিশেহারা ফিরোজা!
ফিরোজার মতো আরেকজন ভুক্তভোগী এমডি ওয়ালিউল্লাহ। থাকেন রাজধানীর রামপুরায়। তিনি নিখাদ খবরকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শফিউল ও বন্ধুবান্ধবের কথা শুনে মিস্ট্রায়াল এআই থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ৪টি প্যাকেজ কিনেছিলেন। কিছু টাকা দৈনিক মুনাফা পেলেও ৩৬ হাজার টাকা হারিয়েছেন এই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ভুক্তভোগী নিখাদ খবরকে জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা শফিউল দীর্ঘদিনের পরিচিত হওয়ায় তিনি ও আত্মীয়-স্বজন মিলে মিস্ট্রায়াল এআইতে অন্তত ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন সব শেষ! পরিবারকে কোনো উত্তর দিতে পারছেন না মধ্যবয়সী এই ভুক্তভোগী।
নিখাদ খবর কথা বলেছে কুড়িগ্রাম ও রংপুরের ভুক্তভোগীদের সঙ্গেও। যারা ১০ হাজার টাকা জমা দিয়েছে তারা প্রতিদিন ১ হাজার টাকা করে টাকা পাবেন এ লোভে পড়ে সদস্যরা ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। কুড়িগ্রামের শহীদুল নামে এক ভুক্তভোগী জানান, লোভে পড়ে তার কয়েক লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেছে। এখন কি করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না। ঋণ করেও বিনিয়োগ করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। বিকাশ-নগদের মাধ্যমে বিনিয়োগ করতে হয়। ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন তাকে দেয়া হতো ৩২০ টাকা লাভ। তবে এত অল্প বিনিয়োগ হলে তো আর বড় লাভ আসবে না। এ জন্য ৫০ হাজার, এমনকি ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন গ্রাহকরা।
বিনিয়োগ যত বেশি, লাভের পরিমাণও তত বেশি দিতো কোম্পানিটি। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য আবার মাঝে মাঝে লোকসান দেখানো হতো। গ্রাহকরা জানান, মাসে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের ওপর লাভ পাওয়া যেত।
প্রতারকরা গ্রাহকদের বোঝাত, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে রোবোটিক লেনদেন করত । অর্থাৎ রোবট নিজেই প্রতিদিন লেনদেন করত আর তাদের লাভ এনে দিত। এতে কোনো ব্যক্তি হাত নেই।
শুধু বিনিয়োগের ওপর লাভই নয়, কাউকে বিনিয়োগ করাতে পারলে তাদের লাভের ওপর পাওয়া যেত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন। এমন করে কারও মাধ্যমে ১০০ জন গ্রাহক বিনিয়োগ করলে তার পদবি হতো এজেন্ট। কমিশন আর নিজের বিনিয়োগের অর্থ মিলে ওই কথিত এজেন্ট মাসে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারত।
রংপুরের ভুক্তভোগী তরুণ জুলহাস জানান, তাদের এজেন্টের নাম শহীদুল । শহীদুল ইতোমধ্যে তার ফোন বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রুপের মধ্যেও নাই। তাদের গ্রুপে মোট সদস্য ৫০০ জন। জুলহাসের মাত্র ৫ হাজার টাকা লস হলেও অন্যদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে।
বিকাশে ও নগদে কুড়িগ্রামের সদরের পাটেশ্বরির মো: কামরুল ইসলামের সোহাগ মিয়া এই নম্বরে ০১৮৯২৫৫২৫৯৫ অ্যাকাউন্ট খুলে ৮৫ হাজার টাকা ও এই নম্বরে ০১৩২৫৪৯৬৮৮৮ অ্যাকাউন্ট খুলে মোট ৪৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এখন পুরোটাই লস!
ভুক্তভোগীরা নিখাদ খবরকে জানিয়েছেন, শিগগিরই প্রতারণার ঘটনায় কুড়িগ্রাম সদর থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান সবাই।
অনুসন্ধানে মিস্ট্রায়াল এআই, বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ও অ্যাপস বন্ধ পাওয়া গেছে। পাওয়া যায়নি হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ। গ্রাহকরাও এসব গ্রুপে ঢুকতে পারছেন না। সবাইকে জানানো হয়েছে সবকিছু হ্যাক হয়ে গেছে। গ্রাহকরা বলছেন, কমপক্ষে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন দেশের অন্তত ৫ লাখ গ্রাহক। ভয়াবহ এক প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছিল মিস্ট্রায়াল এআই, বাংলাদেশ। লাখ লাখ তরুণের স্বপ্ন লুট করে এখন তারা পালানোর পথ খুঁজছে। অ্যাপস অচল হয়ে যাওয়ার পরও প্রতারকরা নতুন ফাঁদ তৈরি করেন। প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপগুলোতে প্রচারণা চালান, কোম্পানির হাতে ওয়েবসাইটটির আর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তাদের সাথে যুক্ত হতে হলে নতুন করে আবার ৪ হাজার টাকার প্যাকেজ কিনতে হবে। সরল বিশ্বাসে ৪ হাজার টাকার প্যাকেজও কিনেছেন লাখো তরুণ-তরুণী।
নিখাদ খবরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শুধু রাজধানী ঢাকা, সাভার, কুড়িগ্রাম, রংপুর নয়-দেশের অন্তত ৩৫টি জেলায় গোপনে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে মিস্ট্রায়াল এআই-এমএ। মূলত ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেটুইউ এর মতো অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তারা। সারাদেশে কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করে মুনাফার অতিলোভ দেখিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করেছে তারা।
রোবট দিয়ে আয়ের নানা প্রলোভন দেখিয়ে সারাদেশ থেকে কমপক্ষে ৫ লাখ লোককে যুক্ত করেছে মিস্ট্রায়াল এআই এর প্রতারক চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। গত দুইদিন ধরে ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। ওয়েবসাইট আর অ্যাপস খুলে দীর্ঘদিন ধরে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিছুই জানে না।
নিখাদ খবর কথা বলে ডিসি, ডিবি (উত্তর)-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম হাসান মো. নাসের রিকাবদারের সঙ্গে। তিনি জানান, তাদের কাছে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা এমন ঘটনাকে আশঙ্কার চোখে দেখছেন। তারা বলছেন, অ্যাপসের মাধ্যমে এমন প্রতারণা হলে পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব।
উদাহরণ টেনে তিনি আরও জানান, ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেটুইউ- এমন সব কোম্পানি একসময় মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের কথা বলে প্রতারণা করেছে। তবে অ্যাপের মাধ্যমে এমন প্রতারণা দ্বিগুণ ভয়ংকর। আগে কারও হাতে হাতে প্রতারণা হতো, কোনো বিপদ হলে তাকে ধরা যেত। শুধু প্রযুক্তি দিয়ে এমন প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয় বলেও মত দেন বিশেষজ্ঞরা।
অনলাইন প্রতারণায় এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নিখাদ খবরকে জানান, বিএফআইইউ ইতোমধ্যে এমন ১১০টিরও বেশি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিনিয়তই মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষের সাবধানতার বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, নাগরিক হিসেবেও তো দায়িত্ব রয়েছে। যেই-সেই জায়গায় কেন আমি বিনিয়োগ করব। মানুষ সচেতন না হলে আমাদের পক্ষে আর কতটা করা সম্ভব?
অভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোরাকারবারি, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, অবৈধ দখলদার, ডাকাত সদস্য, অবৈধ বালি উত্তোলনকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
৮ ঘণ্টা আগেপুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২ দিন আগেগাজীপুরের টঙ্গীতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ৬৯ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের আটক করা হয় বলে জানায় পুলিশ।
৩ দিন আগেপুলিশ সুপার কীর্তিমান চাকমা বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে ছয়জনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।’
৩ দিন আগেঅভিযানে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোরাকারবারি, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ, অবৈধ দখলদার, ডাকাত সদস্য, অবৈধ বালি উত্তোলনকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ মোট ৩২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
নিখাদ খবরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, শুধু রাজধানী ঢাকা, সাভার, কুড়িগ্রাম, রংপুর নয়-দেশের অন্তত ৩৫টি জেলায় গোপনে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে মিস্ট্রায়াল এআই-এমএ। মূলত ডেসটিনি, যুবক, ইউনিপেটুইউ এর মতো অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তারা।
পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ সোহাগকে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গাজীপুরের টঙ্গীতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে ৬৯ জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের আটক করা হয় বলে জানায় পুলিশ।