জাস্টিফাই না করতে দিলে গুলি করে মেরে ফেলেন

আদালতে হাবিবুল আউয়াল

প্রতিনিধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল পূর্বের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পায়। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যে শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।

এসময় পাবলিক প্রসিকিউটর উত্তেজিত হয়ে আদালতকে বলেন, তিনি নিজেকে জাস্টিফাই করছেন। তার এসব বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নেই। সেসময় আউয়াল বলেন, 'জাস্টিফাই না করতে দিলে রিভলভার দিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন।'

সেই সময় উপস্থিত আইনজীবীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে এজলাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি এই কথা বলেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ ও অন্যায় প্রভাব খাটিয়ে প্রহসনের নির্বাচন দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর শেরে বাংলা থানার মামলায় গ্রেফতার সাবেক এই সিইসিকে আজ দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালতে আনা হয়।

এ সময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপ-পরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে তোলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানিতে বলেন, এই আসামি ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলে ২৪ সালের ৭ জানুয়ারি এদেশে কলঙ্কজনক নির্বাচন হয়। সেই ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও দুয়েকটা দল ছাড়া আর কেউ অংশ নেয়নি। সেই নির্বাচন ছিল ডামি, একতরফা, লোক দেখানো ও প্রহসনের নির্বাচন। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিতে পারেননি। তখন তিনি বলেছেন, 'কেউ নির্বাচনে না এলে আমি কি বসে থাকব?' তিনি ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে যান।

পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুকী আরও বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, সারাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। ওইদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে তিনি জানান। তার এক ঘণ্টা পর ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান। অথচ আমরা দেখেছি কেন্দ্রগুলোতে কোনো মানুষ ছিল না। কুকুর-বিড়াল কেন্দ্রে শুয়ে আছে। ওই এক ঘণ্টা তিনি কোথায় ছিলেন, জানতে চাইলে গণমাধ্যমকে জানান, ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কতটা হাস্যকর কথাবার্তা।

'আসামির বিরুদ্ধে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আঁতাত করার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচনের থোক বরাদ্দ থেকে তিনি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সংবিধান-বহির্ভূত বক্তব্য দিয়ে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহ করেছেন। আমরা তার সর্বোচ্চ রিমান্ড প্রার্থনা করছি', বলেন তিনি।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এমিল হাসান রুমেল রিমান্ড বাতিল চেয়ে বলেন, তার বয়স ৭০ বছর। তিনি অনেক দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন। আমরা যেন ফ্যাসিস্ট দমাতে গিয়ে নিজেরা ফ্যাসিস্ট না হয়ে যাই।

এরপর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, প্রসিকিউশনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। নির্বাচনটি ডামি ও প্রহসনের নির্বাচন ছিল।

এ সময় তাকে থামিয়ে বিচারক বলেন, প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনী ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়, যেখানে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার একজন দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা। সেটা আপনি পাঁচ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কি জনগণের টাকা অপচয় হয়নি? এ বিষয়ে জানা নেই উল্লেখ করে সাবেক সিইসি বলেন, হয়তো পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করে ভাতা বাড়ানো হয়েছিল।

এরপর বিচারক বলেন, এই যে ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছিল, নির্বাচনের সময় কোথাও কি তারা সরেজমিনে গিয়েছিলেন? তখন আউয়াল বলেন, একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪-৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন। একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য দুই ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠপর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।

নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করলেন না কেন? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক সিইসি বলেন, ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি, যদি আগে বলতা এমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না।

পরে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব তুলে ধরে আউয়াল আরও বলেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়া আগামী এক হাজার বছরেও এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

প্রায় আধঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত হাবিবুল আউয়ালের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন।

এর আগে গতকাল রাজধানীর মগবাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আসামি করে মামলাটি করে বিএনপি। মামলায় মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত ২২ জুন সকাল সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

আইন-বিচার নিয়ে আরও পড়ুন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গঠিত হচ্ছে সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস)। এই নতুন কাঠামোর অধীনে উপসচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সব পদ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিভিন্ন ক্যাডার থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে এসইএস-এ

১৬ ঘণ্টা আগে

দেশে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আইনত নিষিদ্ধ না হলেও সরকার এটিকে নিরুৎসাহিত করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাস ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসকে প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করেছে

১৬ ঘণ্টা আগে

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে কয়েক দফা সংশোধন আনে। চলতি বছর ১১ মে 'অধিকতর সংশোধন' এনে দ্বিতীয়বার যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়, তাতে রাজনৈতিক দল-সংগঠনের বিচারের বিধান যুক্ত করা হয়

১৮ ঘণ্টা আগে

যে ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পার্বত্য এলাকায় তুলকালাম হয়েছে, মেডিক্যাল টেস্টে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি

১৯ ঘণ্টা আগে