উপকূল ডুবেছে ভারী বৃষ্টিতে, ভোগান্তিতে লাখো মানুষ

প্রতিনিধি
অনলাইন ডেস্কঅনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতে নিমজ্জিত উপকূলীয় এলাকা। শহর-গ্রাম সব সড়কই পানির নিচে। তলিয়ে আছে ফসলি জমি, আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আবারও ডুবল ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লাসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন সড়কে বন্ধ হয়ে পড়েছে যান চলাচল।

শুধু চট্টগ্রাম বিভাগ নয়; ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগেও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। দিনভর বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে গেছে রাজধানীর জীবনযাত্রা। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে নিচু এলাকায়। বিপাকে পড়েছেন পথচলা মানুষ। টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে ফেনীতে– ৪৪০ মিলিমিটার, যা এ মৌসুমে সর্বোচ্চ। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবারের পর থেকে বৃষ্টি কমবে। আপাতত বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদপ্তর। মোংলা, কক্সবাজার, পায়রা, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পানির নিচে বহু এলাকা

২০২৪ সালের আগস্টে পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ বন্যায় ডুবে যায় ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা। সেই দুর্বিষহ স্মৃতি এখনও তরতাজা। এর ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আবারও বৃষ্টি ও ঢলে তলিয়ে গেছে ফেনী। টানা বর্ষণে ফেনীর বেশির ভাগ সড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। অতিবৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়েছে জেলার বিভিন্ন নদীর পানি। এরই মধ্যে ভেঙেছে দুটি নদীর বেড়িবাঁধ। লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকতে থাকায় জেলার নিচু এলাকার বাসিন্দারা গত বছরের মতো আবার বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীতে পানি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ নদীতে পানি বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। পানি বাড়ায় মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থান ধসে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিকেলে সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলার পশ্চিম গদানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এতে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে পানি। এর আগে সকালে ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর রোড এলাকায় মুহুরী নদীর পাড়সংলগ্ন সড়ক ভেঙে দুটি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীতে পানি বাড়ায় বিষয়টি নিয়মিত জেলা প্রশাসন থেকে তদারক করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বন্যা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বন্যার সব প্রস্তুতি জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে।

গতকাল নোয়াখালীতে ১৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়। টানা বৃষ্টিতে নাকাল উপকূলীয় জেলা নোয়াখালীর বাসিন্দারা। ভারী বৃষ্টিতে ডুবে গেছে জেলা শহর মাইজদীর বেশির ভাগ সড়ক। ঘরবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকেছে পানি। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা নতুন নয়। প্রতিবছরই এমনটা হচ্ছে। এর মূল কারণ অপরিকল্পিত ও সরু ড্রেন। আবার এসব ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কারও করা হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকাসহ দোকানপাটেও পানি ঢুকছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে পানিতে আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছেন কৃষক। আবার অনেকে বীজধান ভিজিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বীজতলায় ফেলার সুযোগই পাননি। কৃষকেরা বিপাকে পড়েছেন।

টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করায় কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ৮০টির বেশি গ্রামের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইমরান হোসন সজীব বলেন, টানা বৃষ্টিতে পুরো জেলার আনুমানিক ৮০টি গ্রামের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মাতামুহুরী নদীর পানি উপচে পড়ায় চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজারের ছয়টি দুর্যোগপ্রবণ উপজেলার মধ্যে টেকনাফের পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, উপজেলার প্রায় সব গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপেও জোয়ার ও সাগর উত্তাল থাকায় কয়েকটি গ্রামে সাগরের পানি ঢুকে পড়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা চার দিনের ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়ে পড়েছে উপজেলার অসংখ্য নিচু এলাকা। এতে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়াসহ তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও মাছের ঘের।

টানা ভারী বৃষ্টিতে খুলনা শহরের বেশির ভাগ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের মূল মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ২২টি খাল এখনও দখলমুক্ত বা সংস্কার হয়নি। নালা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। অনেক জায়গায় রাস্তার চেয়ে নালা উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। জলাধার ভরাট হওয়ায় দ্রুত জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

অবিরাম বর্ষণে নাকাল হয়ে পড়েছেন বরিশালবাসী। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। পটুয়াখালীতে গতকাল ২৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। টানা বর্ষণে পটুয়াখালী পৌর শহরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো মানুষ।
পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সাত দিনের ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতায় নাকাল বরগুনার আমতলী পৌরবাসী। গত তিন দিনের টানা বর্ষণে পটুয়াখালীর বাউফলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক কৃষকরা ভারী বৃষ্টিতে আমন বীজতলা জমিতে ফেলতে পারছেন না।
ঝালকাঠির রাজাপুরে টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। বিষখালী নদীতীরের মঠবাড়ি ও বড়ইয়া ইউনিয়নের নিচু এলাকা জোয়ারের পানিতে প্লাবিতসহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পরিবেশ নিয়ে আরও পড়ুন

রাজধানীর বকশীবাজারে দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে মো. জহুরুল হক সেলিম (৫২) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন।

১ ঘণ্টা আগে

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নবাগত চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরা বলেছেন,জেলা পরিষদ হবে জনবান্ধব ও দুর্নীতি মুক্ত। আমরা অতীতের সকল অপবাদ-গ্লানি মুছে নতুনভাবে পথ চলতে চাই।

১ ঘণ্টা আগে

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, আমন চাষ শুরু হয় ১৬ জুলাই থেকে। নীলফামারীর অধিকাংশ কৃষক, আগাম আলু চাষ করেন।

২ ঘণ্টা আগে

পাহাড়ে পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং চলছে। ইতিমধ্যে প্রশাসন সহস্রাধিক মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে । টানা বর্ষণে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড় ধসের খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনকে সহযোগিতা করছে যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা।

২ ঘণ্টা আগে