দক্ষিণ খানপুর গ্রামের সোহেল রানা আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন, তবে বাস্তবে তার হাতে যা এসেছে তা এক অভিনব তিন চাকার যান—দেখতে হেলিকপ্টারের মতো, কিন্তু রাস্তা ধরে চলে।

নিজ হাতে তৈরি এই যানটির ব্লেড, লেজ, পুরো দেহ হেলিকপ্টারের মতো, এবং ভেতরে বসেছেন চালক। হেলিকপ্টারটি উড়তে না পারলেও, এখন সোহেল এ যানটিতে ঘুরে ঘুরে ফুচকা ও চটপটি বিক্রি করছেন। প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষ—নারী, শিশু, গ্রামবাসী ভিড় জমায় এই অভিনব দৃশ্য দেখতে।

ছোটবেলা থেকেই সোহেলের স্বপ্ন ছিল মাকে হেলিকপ্টারে বসিয়ে আকাশে উড়ানো। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান হওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। সংসারের দায়ভার ও অভাবের কারণে পড়াশোনাও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। তবুও সোহেল হার মানেননি। নিজের উদ্ভাবনী মনোভাব ও কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে, ধাতব মালামাল, পুরনো মোটরবাইক ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে তৈরি করেছেন এই হেলিকপ্টার-আকৃতির যান।

এখন শুধু স্বপ্ন পূরণই নয়, নিজের কর্মসংস্থানও তৈরি হয়েছে। আগে গান বাজনার দলের সঙ্গে কাজ করতেন, যা আয় ছিল অনিয়মিত। এখন এই হেলিকপ্টারে বসে ফুচকা–চটপটির ব্যবসা করছেন। শিশুদের উচ্ছ্বাস, ছবি তোলা, ভিডিও করা—সবই এই অভিনব উদ্যোগের আকর্ষণ।

গ্রামবাসী মনে করেন, সোহেলের উদ্ভাবনী উদ্যোগ শুধু বিনোদন নয়, অনুপ্রেরণাও। দারিদ্র্য, শিক্ষা বঞ্চনা বা অভাব—কিছুই তাকে স্বপ্ন দেখার থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সোহেল প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছা থাকলে পথ হয়।

সোহেলের ভাষায়,

“মাকে হেলিকপ্টারে বসাতে পারিনি, কিন্তু তার মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। সবাই আমার হেলিকপ্টার দেখে আনন্দ পাচ্ছে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় আনন্দ।”

বাগেরহাটের দক্ষিণ খানপুরের এই ‘রাস্তা হেলিকপ্টার’ এখন এলাকার এক ব্যতিক্রমী আকর্ষণ গ্রামের এক যুবকের বড় স্বপ্নের বাস্তব রূপ।